নীরব ঘাতকের মতো শরীরে বেড়ে চলে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা। কিন্তু একবার খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে শরীরে একাধিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, করোনারি আর্টারি ডিজিজ এবং স্ট্রোকের মতো মারণ রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে এই কোলেস্টেরল। সমস্যা হল, কোলেস্টেরলের (Cholesterol) মাত্রা বেড়ে গেলে তা বোঝা যায় না। অর্থাৎ খুব সহজে কোনও লক্ষণ দেখা দেয় না। তাই প্রাথমিক ভাবে, এই রোগ সনাক্ত করার জন্য রক্ত পরীক্ষা করানো প্রয়োজন। তবে এমনও কিছু উপসর্গ রয়েছে, যা চিনিয়ে দেয় খারাপ কোলেস্টেরলকে। সাধারণত, উচ্চ কোলেস্টেরলে ওজন বেড়ে যায়। এছাড়াও এমন কিছু লক্ষণ রয়েছে যা দেখা যায় পায়ে।
কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে তা পায়ের ধমনীতে বাধা পায়, পেরিফেরাল আর্টারিকাল ডিজিজ বা পিএডি বলে। এর ফলে পায়ের ধমনী প্রভাবিত হয় এবং পায়ে রক্ত সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটায়। কিন্তু কী করে বুঝবেন যে আপনি কোলেস্টেরলের জন্য পিএডি-তে আক্রান্ত? শীতকালে অনেকেরই পা ঠান্ডা হয়ে যায়। কিন্তু কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে এই সমস্যা গ্রীষ্মকালেও দেখা দিতে পারে। এটিও পেরিফেরাল আর্টারিকাল ডিজিজ-এর একটি লক্ষণ। তাই এমন কোনও উপসর্গ লক্ষ্য করলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
উচ্চ কোলেস্টেরলের কারণে রক্ত প্রবাহও কমে যায়। এর ফলে পায়ের ত্বকের রঙও পরিবর্তন হতে থাকে। এর কারণ পুষ্টি এবং অক্সিজেন বহনকারী রক্ত প্রবাহ হ্রাস। এতে কোষগুলি যথাযথ পুষ্টি পায় না। এতে পা ফ্যাকাশে দেখায়। অনেক সময় পা অনেকক্ষণ ঝুলিয়ে রাখলে ত্বক বেগুনি বা নীল দেখায়। এই ধরনের উপসর্গকে হালকা ভাবে নেবেন না।
পায়ের ব্যথা হল পেরিফেরাল আর্টারিকাল ডিজিজের সবচেয়ে লক্ষণগুলির মধ্যে একটি। যখন আপনার পায়ের ধমনীগুলিতে ব্লকেজ তৈরি হয়, তখন পর্যাপ্ত পরিমাণে, প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত আপনার পায়ের নীচের অংশ পর্যন্ত পৌঁছায় না। তখন পা ভারী হয়ে যায় বলে মনে হয়। বেশির ভাগ উচ্চ কোলেস্টেরল যুক্ত ব্যক্তিরাই পায়ের নীচের অংশে জ্বালাভাব অনুভূত করে। অনেকের আবার অত্যধিক পরিমাণে পায়ে ব্যথা অনুভব করে। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা দেয় তাঁরা উরু বা নিতম্বের পর থেকে পায়ের কোনও অংশে সার পাচ্ছে না কিংবা অত্যধিক পরিমাণে যন্ত্রণা হচ্ছে। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে আবার এই দুটি লক্ষণ একই সঙ্গে দেখা দেয়। হাঁটা, জগিং এবং সিঁড়ি ভাঙার মতো সাধারণ ক্রিয়াকলাপেও তখন ব্যাঘাত ঘটে। এমতাবস্থায় দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
ঘুমানোর সময় তীব্র পায়ের খিঁচুনি উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রার আরেকটি সাধারণ লক্ষণ যা নীচের অঙ্গগুলির ধমনীগুলিকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। এই ক্ষেত্রে রাতে ঘুমানোর সময় পায়ের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। পিএডি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ঘুমানোর সময় ক্র্যাম্প বা খিঁচুনি হতে পারে। সাধারণত গোড়ালি, পায়ের পাতা বা পায়ের আঙ্গুলগুলিতে এটা দেখা যায়। বিছানা থেকে পা ঝুলিয়ে রাখা বা বসে থাকা এটি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় হতে পারে, যা মাধ্যাকর্ষণকে পায়ে রক্ত প্রবাহকে সহায়তা করতে দেয়।
কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে অনেক সময় পায়ে আলসারের লক্ষণও দেখা যায়। সমস্যা হল এই ধরনের আলসার সহজে নিরাময় হয় না, বরং বার বার হতে থাকে। উপরন্ত ক্ষত সারতেও বেশ সময় নেয়। পিএডিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাঁটতে, চলতেও বেশ সমস্যা হয়। তাই এই ধরনের যে কোনও লক্ষণ দেখা দিলে, তা অবহেলা করা উচিত নয়। দ্রুত কোলেস্টেরলের মাত্রা পরক্ষা করান।