গত কয়েকবছর ধরে যে হারে উষ্ণতা বেড়ে চলেছে, তার আঁচ আমরা সকলেই পাচ্ছি। জলবায়ু পরিবর্তনের (Climate Change) কারণে তাপমাত্রা হু হু করে বেড়ে চলেছে। তীব্র তাপপ্রবাহের (HeatWave) মধ্যে ঠান্ডায় শান্তিতে থাকার উপায় খুঁজতে শুরু করেছেন অধিকাংশ।
গরমে তৃষ্ণা মেটাতে ঠান্ডা জল পান করতে বেশি পছন্দ করেন অধিকাংশ। তবে অনেকেই হয়ত জানেন না যে, এই ঠান্ডা জল শরীরের উপর কতটা বাজে প্রভাব ফেলে। এ প্রসঙ্গে আয়ুর্বেদিক পদ্ধতিতে ঠান্ডা জলের প্রভাব কেমন হয় ও তার প্রতিকার কী, তা জেনে রাখুন…
আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের মতে, বরফ ঠান্ডা জল পান করলে শরীরের হজমের গণ্ডগোল শুরু হয়। আর তাতেই হজম সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। হজমের সমস্যা তৈরি হওয়ায় খাবারের প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুলি কোষের মধ্যে শোষণ হয় না। এই ধরণের পুষ্টির হ্রাসের ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা দেখা যায়। পাশাপাশি, আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, কোষ্ঠকাঠিন্য অন্যান্য অনেক স্বাস্থ্য সমস্যার মূল কারণ। অতিরিক্ত ঠান্ডা জল খাওয়া রক্ত সঞ্চালনের প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়। এর জেরে ঠান্ডা জল রক্তনালীগুলিকে সংকুচিত করে। একই সঙ্গে শরীরের শক্তি হ্রাসও করে। তাই আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে ঠান্ডা নয়, গরম জল পান করাকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়।
শুধু আয়ুর্বেদিক হিসেবেই নয়, অ্যালোপ্যাথি বা হোমিও প্যাথিতেও ঠান্ডা জল পান করার বিপরীতে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঠান্ডা জল পান না করারই পরামর্শ দেন। গ্রীষ্মের ঋতুতে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা সাধারণত ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকে। তবে বায়ুমণ্ডলীয় তাপমাত্রা অনুসারে পরিবর্তন হতে থাকে। বাইরে অসহ্য় গরম থেকে যখন ঘরের মধ্যে প্রবেশ করা হয়, এবং সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা জল পান করা হয়, তাহলে শরীরের সমস্ত সিস্টেম শরীরের তাপমাত্রায় হঠাত করে পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করে। মাঝে মাঝে হজমের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইমগুলির উত্পাদন এবং স্নায়ু, রক্তনালী বা ধমনী এবং সম্পর্কিত অঙ্গগুলির কার্যকারিতা, বিশেষ করে হৃৎপিণ্ডকে প্রভাবিত করতে পারে। অনেক সময় গলা ব্যথা, কফ জমা হওয়া এবং ঠান্ডা লাগার মতো সমস্যাও মানুষের মধ্যে হতে পারে।
ঠান্ডা জল পান করলে কী কী হতে পারে, তা এখানে জেনে নিন একঝলকে…
– বেশি ঠান্ডা জল পান করলে হৃদস্পন্দন কমে যায়। এছাড়া ভ্যাগাস নার্ভকে উদ্দীপিত করে, যার ফলে স্নায়ুতন্ত্রের একটি অংশ এবং অনিচ্ছাকৃত ক্রিয়াগুলির পাশাপাশি শরীরের সমস্যাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে। যেহেতু ভ্যাগাস নার্ভ সরাসরি জলের নিম্ন তাপমাত্রার দ্বারা প্রভাবিত হয়, তাই জল শরীরের অনেক অংশকে প্রভাবিত করে। বিশেষ করে হার্টের ক্ষেত্রে এটা আরও গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে। যার ফলে হৃদস্পন্দন কমে যেতে পারে এবং অন্যান্য অসুখের সমস্যা হতে পারে।
– ঠান্ডা জলের ফলে বুকের মধ্যে শ্লেষ্মা জমা হতে পারে। শরীরের বিভিন্ন সংক্রমণের জন্য আরও সংবেদনশীল করে তুলতে পারে। খুব বেশি ঠান্ডা জল বা বরফের জল পান করা কখনও কখনও মস্তিষ্ক ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। কারণ ঠান্ডা জলের কারণে মেরুদণ্ডের অনেক সংবেদনশীল স্নায়ুকে প্রভাবিত করে। মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলিও এর দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাই মাথাব্যাথার মত সমস্যা তৈরি হয়। এছাড়া সাইনোসাইটিস যাঁদের আছে, তাঁদের জন্য আরও সমস্যা তৈরি করতে পারে।
আরও পড়ুন: Risk Of Allergy: অ্যালার্জি আছে? সাবধান! সঙ্গে বাড়ছে উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের অসুখের ঝুঁকিও
Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।