Dengue: ডেঙ্গি বাড়ছে, ডেঙ্গিতে মারা যাচ্ছে… কেউ পরোয়াই করে না, চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী

Dengue Outbreak: বিগত ছয় বছরের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২-এ ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। যে হারে ডেঙ্গি প্রকোপ বেড়ে চলেছে তাতে তৈরি হচ্ছে উদ্বেগ।

Dengue: ডেঙ্গি বাড়ছে, ডেঙ্গিতে মারা যাচ্ছে... কেউ পরোয়াই করে না, চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী
Follow Us:
| Updated on: Sep 23, 2022 | 4:33 PM

মেঘা মণ্ডল

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট বলছে, গত এক সপ্তাহে ৪,২২৪ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন। বিগত ছয় বছরের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২-এ ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এত দিন অবধি এই তালিকায় ২০১৯ ছিল শীর্ষে। কিন্তু যে হারে ডেঙ্গি প্রকোপ বেড়ে চলেছে তাতে তৈরি হচ্ছে উদ্বেগ। যদিও খেয়াল করলে দেখা যাবে, ২০১৭ থেকে ২০২১—এই পাঁচ বছর প্রতিবারই বর্ষার সময় ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা গিয়েছে। কখনও বর্ষা শুরুর আগে আবার কখনও পুজোর মুখে। শুধু আক্রান্তের সংখ্যাটাই উপর-নীচ করে প্রতিবার। অবস্থা শোচনীয় হলে প্রশাসন কোমর বেঁধে রাস্তায় নামে জঞ্জাল পরিষ্কার করতে। জনগণের উদ্দেশে বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখার, মশারি টাঙানোর বার্তা দেওয়া হয়। কিন্তু কতজন সেগুলো মেনে চলেন? আর কেন-ই বা এত অনীহা এই ‘সামান্য’ সচেতনতা মেনে চলায়? TV9 বাংলার সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনায় সংক্রামক রোগের চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী। আজ, শুক্রবার দ্বিতীয় পর্ব।

ডেঙ্গি যে হারে বাড়ছে তাতে, এই মুহূর্তে কী করণীয়?

আমরা ‘মুহূর্ত’-এর জন্য অপেক্ষা করি। অবস্থার বাড়াবাড়ি হলে তবেই সচেতন হই এবং ‘কী করব, কী করব’ করে উঠি। কেউ অবৈজ্ঞানিকভাবে রাস্তার ধারা ব্লিচিং পাউডার ছড়ায়। মাইকে প্রচার করে। জনগণকে দোষারোপ করে—জনগণকে সচেতন করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু ডেঙ্গি প্রতিরোধে সরকার থেকে জনগণ—প্রত্যেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরিবেশ পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব আমার-আপনার প্রত্যেকের। কিন্তু এখানে পরিবেশ পরিষ্কার রাখার বিশেষ দায়িত্বে প্রশাসন থাকে। সেই দায়িত্বটা সারা বছর ধরে পালন করতে হবে। প্রতি বছর ডেঙ্গি হচ্ছে—এটা যখন জানা কথা এবং বর্ষা যখন আসছে, তখন উচিত বর্ষা শুরুর আগেই শহরকে পরিষ্কার করা।

প্রতি বছর ডেঙ্গি হলেও কেন এই বিষয়টা মানুষের গা-সওয়া হয়ে গেছে? মানুষ কি আদৌ সচেতন?

এগুলো সুস্থ সমাজ ভাববে। কিন্তু আমাদের সমাজ এখন মানসিকভাবে এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকে অসুস্থ। শিক্ষা বলে আর কিছু নেই। শিক্ষা থাকলে প্রশ্ন করবে। শিক্ষা থাকলে নিজের ভাল এবং অন্যের ভাল বুঝবে। অন্তত শুধু নিজের পরিবারের কথা ভাবলেও হত। নিজের পরিবারকে কীভাবে ভাল রাখা যায়? প্রতিটা পরিবারের অন্তত একজন মানুষ যদি দায়িত্বটা পালন করে তাহলে এভাবে পাড়া থেকে শহর, শহর থেকে জেলা, জেলা থেকে রাজ্যের মধ্যে সচেতনতা গড়ে উঠবে। তাহলে এই ধরনের কোনও সমস্যাই আর থাকবে না। দুর্ভাগ্যবশত, সেটা হচ্ছে না। সুস্থ, সবল সমাজ তৈরি না হলে কখনওই এই ধরনের সমস্যা দমন করা যাবে না। এখন মানুষ নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। যার ফলে সচেতনতা গড়ে উঠছে না। যারা বলছে মানুষ সচেতন নয়, তারা কি নিজেরা সচেতন? কারণ তাদের যা করণীয় সেটা কি তারা করে? তারা তো বৈজ্ঞানিকভাবে কাজ করে না।

মশারি ব্যবহারের কথা বার বার উল্লেখ করা হচ্ছে, তবু মশারি ব্যবহারে মানুষের এত অনীহা কেন?

আধুনিকতার ছোঁয়া লেগে মশারির ব্যবহার উঠে গিয়েছে। পশ্চিমী সংস্কৃতিকে এখন আমরা বেশি আপন করে নিয়েছি। কিন্তু এটাও দেখতে হবে যে ওসব দেশে মশার প্রকোপ এত বেশি নেই। এখন আমরা সহজে সুখ গ্রহণ করার চেষ্টা করে চলেছি। ডেঙ্গি বাড়ছে, ডেঙ্গিতে মারা যাচ্ছে—এগুলো আর কেউ পরোয়াই করে না। ডেঙ্গিতে এক-আধ জন মারা যায়—এই ধারণাটা মানুষের মধ্যে তৈরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু শিক্ষিত সমাজ ভাববে কীভাবে আমার আয়ু বৃদ্ধি করা যায়। নিজেকে এবং পরিবারের মানুষকে কীভাবে সুস্থ রাখা যায়—এটা ভাবা দরকার। নাহলে মানুষ এটা বলবে যে, ডেঙ্গি হয়েছিল কিন্তু বাঁচানো যায়নি। পরেরদিন থেকে আবার সব কিছু স্বাভাবিক। সবটাই এখন ক্যাজ়ুয়াল।

অলঙ্করণ: অভীক দেবনাথ