স্বাস্থ্য বজায় রাখতে ডায়েটের দিকে নজর দিতেই হয়। কী খাচ্ছেন, কখন খাচ্ছেন, কতটা পরিমাণে খাবার খাচ্ছেন—এই বিষয়গুলো সমপরিমাণে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কোথাও গিয়ে খামতি থেকেই যাচ্ছে। আর সেই খামতির ফল হচ্ছে কোলেস্টেরল, হাই প্রেশার, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, গ্যাস-অম্বলের সমস্যা ইত্যাদি। অথচ এই বিশ্বের এমন পাঁচটি জায়গা রয়েছে যেখানে মানুষ ১০০ বছরেরও বেশি সময় বাঁচে। এবং সুস্থভাবে জীবনযাপন করে। সেই পাঁচটি জায়গাকে বিশ্বের ব্লু জ়োন বলা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্লু জ়োনের মানুষদের এই ১০০ বছর বেঁচে থাকার রহস্য তাঁদের ডায়েটের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে।
জাপানের ওকিনাওয়া, ইতালির সার্ডিনিয়া, কোস্টারিকার নিকোইয়া, গ্রিসের ইকারিয়া এবং ক্যালিফোর্নিয়ার লোমা লিন্ডা—এই পাঁচ জায়গা হল বিশ্বের ব্লু জ়োন। একাধিক গবেষণার পর জানা গিয়েছে, এই পাঁচ জায়গার মানুষের গড় বয়স ১০০ বছর। এর রহস্য হল তাজা সবজি খাওয়া, শরীরচর্চা, মানুষের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক, স্পিরিচ্যুয়াল লার্নিং। এই ব্লু জ়োনের মানুষেরা জীবনধারণ সম্পর্কে ভীষণ সচেতন। ব্লু জ়োনের মানুষদের মধ্যে ক্যানসার, ডায়াবেটিস, স্থূলতা এবং হৃদরোগের ঘটনা নেই বললেই চলে।
কোভিডের পর পুষ্টিবিদেরাও জোর দিচ্ছেন ব্লু জ়োন ডায়েটের উপর। ব্লু জ়োনের মানুষেরা প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনি একদম ছুঁয়ে দেখেন না। মদ্যপানও সীমিত। বরং, তাঁরা জোর দেন পলিফেনল (এক ধরনের বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ) সমৃদ্ধ শাক-সবজি, বাদাম, বীজের উপর। এছাড়া ইতালির সার্ডিনিয়ার মানুষেরা এক ধরনের রেড ওয়াইন পান করেন, যার নাম ক্যানোনাউ। তার সঙ্গে বার্লির তৈরি ডাম্পলিং, বিনস ও টমেটো দিয়ে তৈরি মাছ খেয়ে থাকেন। একইভাবে, ইকারিয়ার মানুষেরা শীতের মরশুমে বিটরুটের তৈরি স্যালাদ খান। আবার লোম লিন্ডার মানুষেরা মৌরি ও কমলালেবুর স্যালাদের সঙ্গে ব্ল্যাক সি ব্যস খান। এটা এক ধরনের সামুদ্রিক মাছ। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, এই ধরনের খাবারগুলো আমাদের দেশে সহজলভ্য নয়। তাহলে উপায় কী?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতে এমন অনেক খাবার পাওয়া যায়, যার আপনার আয়ু বাড়াতে পারে। তিলের বীজ, ফ্ল্যাক্স সিড, বিনস, কফি, ভাত, চিনেবাদাম, গম, হলুদ, মিলেট, বেগুন, বিটরুট, বেগুনি রঙের বাঁধাকপি, বেরি, আপেল, ডার্ক চকোলেট, সোয়াবিন ইত্যাদি খুব সহজেই পাওয়া যায়। এই সব খাবারগুলো খুব কম তেলে রান্না করে খান। এই ধরনের খাবারে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকে, যার জেরে শরীরে কোনও ক্রনিক রোগ বাসা বাঁধে না। ভাজাভুজি ও মশলা ছাড়া এই খাবারগুলো খেলে সুস্থ জীবনযাপন থেকে আপনাকে কেউ আটকাতে পারবে না। রাসাম রাইস, সাম্বারের মতো খাবার দক্ষিণ ভারতে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। এই খাবারগুলো আদতে শরীরের জন্য উপকারী। পুষ্টিবিদদের মতে, এই ধরনের খাবারে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস রয়েছে, যা সুস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি।
সুতরাং, ব্লু জ়োন ডায়েট করতে গেলে বিশ্বের ওই পাঁচ অঞ্চলের মানুষের মতো খাওয়া-দাওয়া করতে হবে এমন কোনও বিষয় নেই। অবশ্যই তাঁদের মতো জীবনযাপন করতে পারলে ভাল, কিন্তু সেটা সব দেশের মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু তাজা ফল, শাকসবজি খেয়ে এবং শরীরচর্চা করে আপনি নিজের আয়ু বাড়াতে পারেন। আর সবচেয়ে জরুরি বিষয় হল নির্দিষ্ট পরিমাণে খাবার খাওয়া। যেমন সন্ধ্যের পর বেশি খাবার একদম খাওয়া উচিত নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিনার সাত তাড়াতাড়ি সেরে ফেলাই ভাল। এতে আমাদের হজম স্বাস্থ্য ভাল থাকে। এছাড়া দিনে যতবারই খাবার খাবেন, কম পরিমাণে খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে ১০০ বছর না বাঁচলেও, যতদিন বাঁচবেন রোগ মুক্ত জীবন কাটাতে পারবেন।