সাইকেল চালানো আর পাহাড়ে চড়ার মধ্যে মিল একটাই! দুটোই একরকম নেশা। কথায় বলে, জীবনে একবার সাইকেল শিখলে কষ্ট করেও কোনওদিন তা ভোলা যায় না। যাঁর সাইকেল চালান একমাত্র তাঁরাই বোঝেন দু’চাকার মজা। লকডাউন পরবর্তী সময়ে আবারও ট্রেন্ডে ফিরে এসেছে সাইকেল। পরিবেশ নিয়ে মানুষ সচেতন হয়েছে। শুধুমাত্র পরিবেশ দূষণ রুখতেই প্রচুর মানুষ এখন নিয়মিত ভাবে সাইকেল চালান। সাইকেল যেমন পরিবেশ-বান্ধব তেমনই কিন্তু নিয়মিত ভাবে সাইকেল চালালে শরীরও ভাল থাকে। জিমে গিয়ে আলাদা করে কার্ডিয়ো এক্সসারসাইজ করার প্রয়োজন পড়ে না। সেই সঙ্গে পেশীর শক্তি বাড়ে, হাড় শক্তিশালী হয়, শরীরে চর্বি গলাতে সাইকেলের মত ভাল এক্সসারসাইজ খুব কমই আছে। মোটকথা সাইকেল চালাতে সাইকেল চালানোর মত ভাল এক্সসারসাইজ খুব কমই আছে।
তবে একটানা বসে সাইকেল চালানোর ফলে প্রভাব পড়ছে ছেলেদের শরীরে। বাড়ছে ইরেক্টাইল ডিসফাংশন ( Erectile dysfunction) এর ঝুঁকি। সোজা কথায়, কমছে পুরুষের যৌনক্ষমতা। বাড়ছে লিঙ্গ শিথিলতা। যেখান থেকে ছেলেরা হারাতে পারে পৌরুষত্ব। যদিও ইরেকশনের সমস্যা সব সময়ই যে অতি উদ্বেগের তাও নয়। তবে ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের সমস্যা থেকে গেলে ছেলেদের আত্মবিশ্বাস কমে যায়। সেই সঙ্গে মানসিক চাপ বাড়ে। কমে যায় যৌন ইচ্ছেও। নিয়মিত ভাবে যাঁরা সাইকেল চালান তাঁদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা আসার একটি কারণ খুঁজে পেয়েছে সাম্প্রতিক গবেষণা। যেহেতু একটানা স্যাডেলে চাপা থাকে গোপনাঙ্গ সেখান থেকে স্নায়ুর উপর চাপ বাড়ে। এই অতিরিক্ত স্নায়ুর চাপ থেকেই বাড়ছে ইরেকশনে সমস্যা। সাইকেল চালানোর সময় মলদ্বার আরযৌনাঙ্গের মধ্যবর্তী অঞ্চলে বেশি চাপ পড়ে। অবিরাম এই চাপ পড়ায় রক্তপ্রবাহ কমে যায়, যৌনাঙ্গের স্নায়ুর উপর চাপ বাড়ে। আসে লিঙ্গ অসাড়তার মত সমস্যা।
পোল্যান্ডের রক্লো মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির গবেষণা থেকে যেহেতু এই তথ্য উঠে এসেছে তাই গবেষকরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন ছেলেদের জন্য। যাঁরা রোজ বাইক বা সাইকেল চালান তাঁদের উভয়ের ক্ষেত্রেই হতে পারে এই সমস্যা। সাইকেল চালানোর মাঝে অন্তত ১০ মিনিট বিশ্রাম নিতে হবে। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। এছাড়াও সাইকেলের সিটে যদি ঠিকমতো বসতে না পারা যায় বা বসার ভঙ্গিমায় ভুল থাকে সেখান থেকেও কিন্তু হতে পারে এই একই সমস্যা। এই তথ্য ছেলেদের নিরুৎসাহিত করার জন্য নয়। তাঁরা যাতে সঠিক নিয়ম মেনে চলেন এবং তাঁদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই এই সমীক্ষা চালানো হয়েছে তাও কিন্তু জানানো হয়েছে। একটানা সাইকেল চালানোর ফাঁকে যৌনাঙ্গে হাওয়া লাগানোও খুব জরুরি। এতে স্নায়ুর চাপ কিছুটা হলেও কম হয়।
তাই যাঁরা নিয়মিত সাইকেল চালান তাঁদের বসার সিট যাতে আরামদায়ক হয় সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এর পাশাপাশি সরু আকৃতির সিট না রেখে ভি শেপের সিট লাগান। এতে অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক থাকে। হ্যান্ডেলর উচ্চতা ঠিক রাখুন। সব রকম ভাবে সাইকেল চালানো যাতে আপনার পক্ষে আরামের হয় সেদিকে নজর রাখা জরুরি। এর পাশাপাশি ধূমপান, মদ্যপান কম করতে হবে। স্ট্রেস কম রাখতে হবে। ওবেসিটি, সুগার এবং কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকলে তা অবিলম্বে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নইলে সামগ্রিক ভাবে চাপ পড়বে শরীরে।