Health Tips: আত্মবিশ্বাস তলানিতে, সবেতেই পরনির্ভরশীলতা, Dependent Personality Disorder আসলে কী?

megha |

Jul 07, 2022 | 9:11 PM

Mental Health: কী এই রোগ, এর পিছনে ঠিক কোন-কোন কারণ দায়ী আর এই সমস্যার সমাধানই কোথায় লুকিয়ে? এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে TV9 বাংলা কথা বলল মনোরোগ বিশেষজ্ঞ শতভিষা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে।

Health Tips: আত্মবিশ্বাস তলানিতে, সবেতেই পরনির্ভরশীলতা, Dependent Personality Disorder আসলে কী?

Follow Us

সারাদিনের ব্যস্ততার মাঝে একাকিত্ব মনে না হলেও, দিনের শেষে গিয়ে পাশে কেউ একজন থাকলে হয়তো ভাল হয়—এমনটা মনে হয় মাঝেমধ্যেই। বুকে পাথর, মুখে হাসি নিয়ে সারাটা দিন কেটে যায়। কিন্তু দিনের শেষে নিঃসঙ্গতা কুরে-কুরে খায় অনেককেই। কিন্তু এই সমাজে এমন বহু মানুষ রয়েছেন, যাঁদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা দেখা দেয় একটু অন্যভাবে। এঁরা জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে কাউকে পাশে পেতে চান। দৈনন্দিন জীবনের ছোটখাটো সিদ্ধান্ত নিতেও এঁদের সমস্যা হয়। কেন হয় এমন? এর পিছনে কি কোনও গুরুতর সমস্যা লুকিয়ে রয়েছে? একটু গুগল ঘাঁটতেই জানা গেল এই সমস্যার নাম ‘ডিপেনডেন্ট পার্সো‌নালিটি ডিজ়অর্ডার’ বা ‘Dependent Personality Disorder’… কী এই রোগ, এর পিছনে ঠিক কোন-কোন কারণ দায়ী আর এই সমস্যার সমাধানই কোথায় লুকিয়ে? এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে TV9 বাংলা কথা বলল মনোরোগ বিশেষজ্ঞ শতভিষা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে।

Dependent Personality Disorder (DPD)-এর মূল কারণগুলি কী-কী?

এটি একপ্রকার Personality Disorder, যার অর্থ এটি বড় বয়সে হওয়া কোনও সমস্যা নয়। এটি হল এক ব্যক্তিত্বের গঠন যা ছোট থেকে বড় হওয়ার যাত্রাপথে পরিলক্ষিত হয়। একজনের ব্য়ক্তিত্ব যেহেতু ছোটবেলা থেকে ধীরে-ধীরে তৈরি হতে শুরু করে, তা-ই ব্য়ক্তিত্ব সংক্রান্ত কোনও সমস্যা অধিকাংশক্ষেত্রেই প্রথমবার লক্ষ্য করা যায় সেই ব্যক্তি প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যাওয়ার পর। এই ডিজ়অর্ডারের ঝুঁকি সেইসব শিশুর মধ্যে সবচেয়ে বেশি, যাদের পরিবারে অ্যানজ়াইটি এবং ডিপ্রেশনের ইতিহাস বা প্রবণতা রয়েছে। এছাড়াও তিন-চারটি কারণ রয়েছে। তার মধ্যে একটি হল যে সব বাচ্চার কোনও childhood trauma রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা দেখা যায়। অর্থাৎ সেই ব্যক্তি কোনওভাবে ছোটবেলায় অত্যাচারিত হয়েছে। তাকে সবসময় দমিয়ে রাখা হয়েছে। তার কথাকে কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তার মুখ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। তার হয়তো কোনও সাহায্যের দরকার ছিল, অথচ সেই প্রয়োজনীয় সংবেদনশীল হাতটা সে পায়নি। বিভিন্ন ক্ষেত্রেই হয়তো মা-বাবার শাসন এতটাই কড়া যে, শিশুটি তার মনের কথা ব্যক্ত করতেই পারেনি। নিজের চিন্তাভাবনা, ধ্যান-ধারণা প্রকাশের কোনও জায়গাই তার ছিল না। এই ধরনের বাচ্চাদের আচার-আচরণের মাধ্যমেই একসময় প্রকাশ পায় এই ডিজ়অর্ডার। ওই ব্যক্তি বিশ্বাস করতে শুরু করেন: অন্যের কথা মেনে চললে কম অত্যাচারিত হতে হবে—এটা ভেবেই সেই ব্য়ক্তি অন্যের কথা মেনে চলতে শুরু করে। ধীরে-ধীরে যেটা হয়, তা হল: এই ধরনের মানুষেরা দায়িত্ব নিতে শেখে না। কারণ বড় হয়ে সঙ্গে সঙ্গে ধীরে-ধীরে তার আত্মবিশ্বাস তলানিতে যেতে শুরু করে।

কোন বয়সে গিয়ে Dependent Personality Disorder নির্ণয় হয়?

এই রোগ ধরা পড়তে-পড়তে adulthood চলে আসে। বয়স ১৮ পেরিয়ে যায়। মূলত ১৮ থেকে ২৫-এর মধ্যে এই রোগ ধরা পড়ে। স্কুল-কলেজে পড়াকালীন লক্ষ্য করা গেলেও সেইভাবে তা নির্ণয় করা যায় না। এই সমস্যা তখন বোঝা যায় যখন ওই ব্যক্তি বাবা-মায়ের ছত্রছায়া থেকে বেরিয়ে নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজে থেকে গ্রহণ করা শুরু করে। তখন বারবার তার ব্যক্তিত্বে‌ আত্মবিশ্বাসের অভাব চোখে পড়ে, যার জেরে বেড়ে যায় পরনির্ভরশীলতা। দৈনন্দিন জীবনের ছোট-ছোট সিদ্ধান্তগুলো নিতে গেলেও সাহায্যের প্রয়োজন পড়ে।

কোন-কোন লক্ষণ দেখা দেখা যায় এই ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে?

Dependent Personality Disorder-এ ভোগা মানুষেরা দায়িত্ব নিতে চায় না। সব সময় অন্যের উপর নির্ভর করে থাকতে চায়। বিভিন্ন বিষয়ে নিজের মতামত ব্যক্ত না করে শুধুমাত্র অন্যের উপরই ভরসা রাখতে চায়। সাধারণত বড় হলে মানুষ নিজের দায়িত্ব নিজে বুঝতে শেখে এবং নতুন-নতুন দায়িত্ব নিতেও চায়। কিন্তু Dependent Personality Disorder-এর শিকার হন যে ,সব ব্যক্তি, তারা দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চায় বা অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

এক্ষেত্রে নিঃসঙ্গতা, একাকিত্ব কতটা প্রভাব ফেলে?

একজন সাধারণ প্রাপ্তবয়স্কের ক্ষেত্রে একাকিত্ব, নিঃসঙ্গতার যা মানে, এই সমস্যার সম্মুখীন হওয়া ব্যক্তিদের কাছে তার অর্থ সম্পূর্ণ আলাদা। কিন্তু Dependent Personality Disorder-এর ক্ষেত্রে এই বিষয়টা আরও গভীর। এখানে এই একাকিত্বর সমস্যা তৈরি হয় ছোটবেলা থেকেই। Dependent Personality Disorder নিঃসঙ্গতার থেকেও বেশি অবহেলার বহিঃপ্রকাশ।

DPD কি আসলে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কথাগুলোকেই আরও একবার সত্যি বলে প্রমাণ করে: “মানুষ বড় কাঁদছে, তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও”?

একদমই নয়। এখানে  “মানুষ বড় কাঁদছে, তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও” কথাগুলো শেয়ারিং, কেয়ারিংয়ের জায়গা থেকে বলা হচ্ছে। কিন্তু Dependent Personality Disorder-এর ক্ষেত্রে এটা একটা সমস্যার জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। কারণ আমরা অন্যের খেয়াল রাখার সময়ও নিজের মতামত রাখি, কিন্তু DPD-তে আক্রান্ত ব্যক্তি এই কাজটাও করতে পারে না। আর এটা না করতে পারাটাই এক্ষেত্রে সমস্যার জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে।

সমাধানের জন্য কী করণীয়?

প্রথমত, Dependent Personality Disorder মোটেই ‘অসুখ’-এর গোত্রে পড়ে না। এটা একটা ব্যক্তিত্ব সম্পর্কিত সমস্যা, যেটা ছোটবেলা থেকেই সকলের অলক্ষ্যে ধীরে-ধীরে তৈরি হতে শুরু করে এবং প্রাপ্তবয়সে গিয়ে প্রভাব ফেলে। যেহেতু সমস্যাটা ব্যক্তিত্ব সম্পর্কিত, তা-ই এমন নয় যে একে পুরোপুরি সারিয়ে তোলা সম্ভব। এটা ব্যক্তিত্ব গঠন ও প্রকাশের একটা ধরনের। যে এই সমস্যাকে পাশে রেখে জীবনে এগিয়ে যেতে পারবে, তার কোনও সমস্যা হবে না। রোজকার জীবনযাত্রা চালানোর জন্য তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এতে সমস্যা হবে ঠিকই, কিন্তু তাকে সেই পরিবেশটা দিতে হবে যেখানে সে নিজেই নিজের জীবন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবে। সেই সিদ্ধান্ত ঠিক হোক বা ভুল, সিদ্ধান্ত নেওয়াটাই এক্ষেত্রে বিশেষ জরুরি। এতে তার আত্মবিশ্বাসও ধীরে-ধীরে ফিরে আসবে।

Next Article