মা-জেঠিমাদের মুখে প্রায়শই শুনেছেন, যে বয়স বেড়ে গেলে গর্ভধারণা সমস্যা হয়। এটা কি তাঁদের ভ্রান্ত ধারণা নাকি রয়েছে কোনও যুক্তি? বর্তমান জীবনধারায় পিসিওএস, পিসিওডি-এর মতো রোগ মহিলাদের জীবনে থাবা বসিয়েছে। এখন অধিকাংশ তরুণীরাই ঋতুস্রাব সংক্রান্ত নানা সমস্যায় ভুগছেন। সেই স্ত্রীরোগের মধ্যে রয়েছে ফাইব্রয়েডস। ফাইব্রয়েডস হল এক ধরনের টিউমার যা জরায়ুর মধ্যে বৃদ্ধি হতে থাকে। এই টিউমার থেকে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। কিন্তু বয়স বাড়লে গর্ভধারণে নিশ্চয়ই সমস্যা হবে। ২৫ থেকে ৫০ বছর বয়সী যে কোনও মহিলার শরীরে ফাইব্রয়েডস দেখা দিতে পারে।
ফাইব্রয়েডস কী:
জরায়ু ও ইউটেরাসের মধ্যে সংযোগকারী পেশির বৃদ্ধি ঘটলে সেটা ইউটেরাইন ফাইব্রয়েডস হিসেবে চিহ্নিত হয়। জরায়ুর বাইরেও ফাইব্রয়েডস হতে পারে, যাকে ডাক্তারি পরিভাষায় সাবসেরাস বলে। যদি জরায়ুর মধ্যে ফাইব্রয়েডস হয়, তাকে ইন্ট্রামিউরাল বলে। জরায়ুর যে অংশ থেকে ঋতুস্রাব হয় সেখানেও বাড়তে পারে ফাইব্রয়েডস। একে সাব-মিউকাস বলে। তরুণীদের মধ্যে এই সাব-মিউকাস ফাইব্রয়েডসের সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
ফাইব্রয়েডসের কারণ:
মেনোপজের সময় থেকেই এই ফাইব্রয়েডসের সমস্যা বাড়তে থাকে। ৪০-এর পর থেকে মহিলাদের মধ্যে ফাইব্রয়েডসের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। যদিও ২৫ বছর বয়স থেকেই ফাইব্রয়েডসের ঝুঁকি তৈরি হয়। পাশাপাশি এই বয়স থেকে ফাইব্রয়েডসের লক্ষণও প্রকট হয় শরীরে। ফাইব্রয়েডসের পিছনে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা থেকে শুরু করে জিনগত কারণ দায়ী থাকে। এছাড়া ওবেসিটি ফাইব্রয়েডসের অন্যতম কারণ। তাই অতিরিক্ত ওজন একদমই শরীরের জন্য ভাল নয়।
ফাইব্রয়েডসের লক্ষণ:
যে সব মহিলার ফাইব্রয়েডস রয়েছে, তাঁদের মধ্যে ঋতুস্রাবের সমস্যা অতিরিক্ত রক্তপাত, তলপেটে মারাত্মক যন্ত্রণা এবং অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া বাড়ে প্রজনন সম্পর্কিত নানা সমস্যা। অত্যধিক রক্তক্ষরণের ফলে রক্তাল্পতার সমস্যাও দেখা দিতে পারে। যে সমস্যায় সবচেয়ে বেশি মহিলারা কাতর হয়ে পড়ে, তা হল তীব্র পেটের যন্ত্রণা। ফাইব্রয়েডস সম্পূর্ণরূপে নিরাময়যোগ্য নয়। তবে, তীব্র পেটের যন্ত্রণাকে নিয়ন্ত্রণে করা যায়। এতে ফাইব্রয়েডসের উপসর্গও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
১) ফাইব্রয়েডসের কারণে প্রদাহ তৈরি হয়। যার জেরে ঋতুস্রাবের সময় তলপেটে মারাত্মক যন্ত্রণা হয়। এই যন্ত্রণা কমাতে আপনি গরম সেঁক দিতে পারেন। এতে ব্যথা কমবে। এটি পেশিগুলোকে স্থিতিশীল হতে সাহায্য করবে।
২) সুষম আহার খান। ডায়েটে তাজা শাকসবজি, ফল, গোটা শস্য, সব কিছু রাখুন। ভিটামিন ডি থেকে আয়রন, ফাইবার সব পুষ্টি মিলবে এমন খাবার খান। তার সঙ্গে অ্যালকোহল, প্রক্রিয়াজাত খাবার, রেড মিট, ফ্যাটযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য এবং চিনি এড়িয়ে চলুন।
৩) যোগাসন, মেডিটেশন, ম্যাসাজের মতো আরামদায়ক উপায়ের সাহায্য নিতে পারেন। এতে পেশিতে রক্ত সঞ্চালন সচল থাকে। পাশাপাশি ঋতুস্রাবের সময় হওয়া নানা উপসর্গ সহজেই এড়ানো যায়।