বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) হিসেব অনুসারে ইউরোপের ৩০টিরও বেশি দেশে ম্যাঙ্কিপক্সে আক্রান্তর (Monkeypox Cases) খোঁজ মিলেছে। এমনকী সমগ্র বিশ্বে প্রায় ৫০টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ম্যাঙ্কিপক্স (Monkeypox Virus)। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে আক্রান্তদের বেশিরভাগই পুরুষ (Male)। কেন এমন ঘটনা ঘটছে? কারণ হিসেবে উঠে আসছে অদ্ভুত তথ্য। জানা যাচ্ছে যে সকল পুরুষ অন্য পুরুষের সঙ্গে যৌনতা করেন তাঁরা এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি! তবে বাচ্চাদেরও এই অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ভয় যথেষ্ট বেশি। কারণ শিশুদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যথেষ্ট কম থাকে। ম্যাহ্কিপক্সের লক্ষণ হিসেবে থাকছে র্যা শ, জ্বর, ক্লান্তি, পেশিতে ব্যথা, বমি এবং শীত শীত বোধ হওয়া।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ম্যাঙ্কিপক্স যথেষ্ট ছোঁয়াচে অসুখ। বিশেষ করে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের খুব কাছকাছি এলে, সংক্রামিতর পোশাক কিংবা বিছানার চাদর ব্যবহার করলেও সুস্থ মানুষ ম্যাঙ্কিপক্স ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন। গবেষকরা জানাচ্ছেন, বয়স্ক, বাচ্চা এবং প্রেগনেন্ট মহিলাদের এই রোগ থেকে দূরে থাকার জন্য সবরকম ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ অন্তঃসত্ত্বা মহিলা, বাচ্চা, কো মর্বিডিটিযুক্ত বয়স্কদের এই অসুখ হলে শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।
এমনকী কিছু ক্ষেত্রে হাসপাতালেও ভর্তি থাকার দরকার পড়তে পারে। ইউরোপ ও আমেরিকায় ম্যাঙ্কিপক্সের সংক্রমণের হার যথেষ্ট বেশি। স্বাস্থ্য আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, পুরুষ সমকামী, উভকামী এবং যে সমস্ত পুরুষ অন্য পুরুষের সঙ্গে যৌনতা করেন তাদের মধ্যে অসুখ বেশি ছড়াচ্ছে।
ইতিমধ্যে আমেরিকার টেক্সাস রাজ্যের ডালাস শহরের একটি স্নানঘরে এমন ঘটনা ঘটেছে যার কারণে সকলের ঘাম ছুটে গিয়েছে। সমকামীদের মধ্যে অত্যন্ত প্রসিদ্ধ ডালাস গে বাথহাউস। একাধিক ‘গে’ পুরুষ সেখানে স্নান করতে আসেন। সম্প্রতি দেশের বাইরের এক পুরুষ সেখানে স্নান করতে ঢোকেন। সম্ভবত তার মাধ্যমেই ক্লাবের একাধিক পুরুষ সদস্য ম্যাঙ্কিপক্স দ্বারা সংক্রামিত হয়েছেন বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকরা। কীভাবে এই ঘটনা প্রকাশ্যে এল?
জানা গিয়েছে সম্প্রতি অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ক্লাব ডালাসে প্রবেশ করেন। ক্লাব ডালাস আসলে পুরুষদের জন্য বিশেষ নির্মিত বিশেষ স্নানঘর। প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট অনুসারে, ২২ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে ক্লাবের পৃষ্ঠপোষকরা ক্লাবে ঢুকে বিশ্রামকক্ষে সামাজিক মেলামেশা করতে পারেন ও প্রাইভেট ড্রেসিংরুমে নিশ্চিন্তে ভিডিও উপভোগ করতে পারেন বলে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল।
ডালাসের স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, ক্লাবে প্রবেশ করা ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি নিশ্চিতরূপে ম্যাঙ্কিপক্স দ্বারা সংক্রামিত ছিলেন। স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, স্নানঘরে থাকাকালীন সময়ে সে একাধিক পুরুষের সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রামিতর দেহনিঃসৃত তরল, ম্যাঙ্কিপক্সের দরুণ তৈরি হওয়া দৈহিক ঘা থেকেও ভাইরাস সুস্থ মানুষের দেহে ঢুকতে পারে। এছাড়া ম্যাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তির পোশাক, তার বিছনার চাদরের সংস্পর্শে এলেও সুস্থ মানুষ এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হতে পারেন। এমনকী সংক্রামিতর শ্বাসবায়ুর সঙ্গে বেরনো ড্রপলেটেও থাকে ভাইরাস। তাই ম্যাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের খুব কাছাকাছি চলে গেলেও ওই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ভয় থেকেই যায়। ডালাস শহরের স্বাস্থ্য আধিকারিকরা সতর্ক করেছেন, ক্লাব ডালাসে যাঁরা প্রবেশ করেছেন তাঁদেরও ম্যাঙ্কিপক্স দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই উপসর্গের দিকে খেয়াল রাখার আবেদন করা হয়েছে। ম্যাঙ্কিপক্স সংক্রমণের পর র্যা শ বেরনর আগে জ্বর, লিম্ফনোড ফুলে যাওয়া, গায়ে ব্যথার লক্ষণ দেখা যায় বলে জানানো হয়েছে বিশেজ্ঞদের তরফে।
ডালাসে আরও যে চারটি ম্যাঙ্কিপক্সে আক্রান্তর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, তারা সকলেই পুরুষ ছিলেন এবং অন্য পুরুষের সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হয়েছিলেন। তারা সম্প্রতি বিদেশযাত্রাও করেছিলেন বলে জানা গিয়েছে।