ভারতে ওমিক্রনের (Omicron) দাপট অব্যাহত। পশ্চিমবঙ্গেও দিন পাঁচেকের মধ্যে কোভিডের চতুর্থ ঢেউ (COVID Forth Waves) সংক্রমণের শীর্ষে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে স্বাস্থ্যদপ্তরের জনস্বাস্থ্য বিভাগের তরফে। ইতিমধ্যে আমেরিকার সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন-এর তরফে জানানো হয়েছে, আমেরিকায় ওমিক্রনের বিএ.৫ সাবভেরিয়েন্টের ( BA.5 variant ) দাপাদাপি চলছে। এই সাবভেরিয়েন্ট খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা রাখে। তবে মারণ ক্ষমতা অন্যান্য ভেরিয়েন্টের তুলনায় কম। অবশ্য উপসর্গ অন্যান্য ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের মতোই। ওমিক্রন সংক্রমণে সাধারণত গলা ব্যথা, হাঁচি, সর্দি, জ্বর, কাশির উপসর্গ থাকে। ওমিক্রনের অন্যান্য ভেরিয়েন্টের মতো বিএ-৫ ভেরিয়েন্টও প্রাথমিকভাবে ‘আপার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট’ বা শ্বাসনালীতেই আটকে থাকছে। কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের মতে, গলা ব্যথা, এবং সর্দির মতো উপসর্গ আসলে বুঝতে হবে ভাইরাস নসাপথ ও শ্বাসনালীতে গেড়ে বসেছে। তবে ফুসফুসে বাসা বাধার মতো ঘটনা বিশেষ দেখা যাচ্ছে না।
এরমধ্যেই বিশেষজ্ঞরা আরও একটি আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, আগে ভাবা হচ্ছিল ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলে বা ওমিক্রন দ্বারা আক্রান্ত হলে দেহে প্রাকৃতিকভাবে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যাবে যা নতুন করে করোনার সংক্রমণকে প্রতিহত করবে। তবে কিছু সাম্প্রতিক ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, টিকা নেওয়া থাকলেও কিংবা ওমিক্রন দ্বারা আগে আক্রান্ত হয়ে থাকলেও কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ফের এই সাবভেরিয়েন্ট দ্বারা সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা এড়ানো যাচ্ছে না।
বিএ২ ভেরিয়েন্ট দ্বারা আক্রান্তরা সেরে ওঠার ৬ বা ৮ সপ্তাহ পরে ফের কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন বলে দেখা গিয়েছে। বিশেষ করে পরবর্তী সংক্রমণের পিছনে দায়ী থাকছে বিএ৪ বা বিএ৫ সাবভেরিয়েন্ট। লা জোল্লার স্ক্রিপস রিসার্চ ট্রান্সলেশন ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর ডাঃ এরিক ত্রোপল জানিয়েছেন, বিএ৫ সাবভেরিয়েন্ট আসলে ভাইরাসের সবচাইতে জঘন্যতম রূপ। কারণ এই সাবভেরিয়েন্টটি রোগপ্রতিরোধক ক্ষমতাকে বোকা বানিয়ে সংক্রমণের হার বৃদ্ধি করে।
প্রশ্ন হল কোনও ব্যক্তি করোনার বিএ৫ সাবভেরিয়েন্ট দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন তা বুঝবেন কীভাবে? কারণ ওমিক্রনের উপসর্গের সঙ্গে কমন কোল্ড বা ফ্লু-এর লক্ষণের বিশেষ তফাত নেই! বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সম্প্রতি বিএ৫ সাবভেরিয়েন্টে আক্রান্তদের মধ্যে আলাদা কিছু শারীরিক উপসর্গের খোঁজ মিলেছে। আয়ারল্যান্ডের ট্রিনিটি কলেজের বায়োকেমিস্ট্রির অধ্যাপক লিউক ও’নীল জানিয়েছেন, সারা বিশ্বেই ওমিক্রনের সাবভেরিয়েন্ট বিএ৫-এর প্রকোপ চলছে। বেশিরভাগ মানুষ করোনার এই নতুন সাবভেরিয়েন্ট দ্বারাই আক্রান্ত হচ্ছেন। এই সাবভেরিয়েন্ট দ্বারা সংক্রামিত হলে সাধারণভাবে গলা ব্যথা, সর্দি, জ্বরের উপসর্গ থাকলেও কিছু রোগীর ক্ষেত্রে ঘুমেও বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।
কেন এমন হচ্ছে? বিশেষজ্ঞদের মতে, এমনিতে ওমিক্রনের বিরুদ্ধে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে গেলেও দেহের রোগপ্রতিরোধক ব্যবস্থা বিএ৫ সাবভেরিয়েন্টকে আলাদা অসুখ বলেই মনে করছে। ফলে সাধারণ উপসর্গের সঙ্গে অনিদ্রার সমস্যাও তৈরি হচ্ছে। তার সঙ্গে দেখা দিচ্ছে ঘাম। ঘামের উপসর্গ অবশ্য ওমিক্রনের আগের সাবভেরিয়েন্টের সংক্রমণের ক্ষেত্রেও চিহ্নিত করা হয়েছিল।