বর্ষাকালে বাড়ে জলবাহিত রোগের প্রকোপ। এই সময় সক্রিয় হয় অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়া। এরমধ্যে অন্যতম হল সালমোনেলা টাইফি, যা টাইফয়েডের জন্য দায়ী। যে কারণে বর্ষায় বাইরের খাবার, বাইরের জল এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। কাঁচা সবজি বা ভাল করে রান্না না হওয়া খাবার থেকেই ছড়ায় এই ব্যাকটেরিয়া। মূলত খারাপ বা দূষিত জলই এই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের মূল উৎস। এই ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে পেট খারাপ, ডায়েরিয়া, জ্বর, বমি মলের সঙ্গে রক্তপাত- একাধিক সমস্যা হতে পারে। এমনকী সংক্রমিতর ব্যবহার করা শৌচালয় থেকেও ছড়াতে পারে সংক্রমণ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ চকোলেট প্লান্ট সুইস জায়েন্ট ব্যারি ক্যালিবাউট- এর মেল্টেড চকোলেটের মধ্যে হদিশ পাওয়া গেল এই ব্যাকটেরিয়ার। এমন বড় প্ল্যান্টে কী ভাবে হল এই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ তা নিয়ে বেশ ধন্দ তৈরি হয়েছে।
২৫ জুন এই কারখানায় চকোলেটের মধ্যে হদিশ মিলেছে সালমোনেলার জীবাণুর। এরপর থেকে বেলজিয়ামের ওয়েইজে শহরের এই প্ল্যান্টে বন্ধ রাখা হয়েছে উৎপাদন। এই কারখানা থেকে কাঁচামাল যায় ৭৩ জন ক্লায়েন্টের কাছে। তাদেরও ফোন করে সতর্ক করেছে ব্যারি ক্যালিবাউট। বেলজিয়ান চকোলেটের চাহিদা যে কতখানি এ নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। বেলজিয়ান চকোলেটের এই সংস্থার থেকেই তরল চকোলেট যায় নেসলে, হার্শে, মন্ডেলেজ, ইউনিলিভারের মত সংস্থার হাতে।
বিশ্বজুড়ে চকোলেট প্রেমীর তালিকাটা যে কতখানি লম্বা তা লিখে বলা বেশ কঠিন। এই তরল চকোলেট ব্যবহার করা হয় আইসক্রিম, চকোলেটের বার তৈরিতে। এবার প্রশ্ন হল তরল চকোলেটের মাধ্যমে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া বাজারে ছড়িয়ে পড়েনি তো? তাহলে বিশ্বজুড়েই মানুষ সমস্যায় পড়বেন। সংস্থার মুখপাত্র ক৪নল ওয়ারলোপ অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন। ওয়েইজের প্ল্যান্টের থেকে উৎপাদন আপাতত বন্ধ। ২৫ জুন পর্যন্ত যতটা পরিমাণে তরল চকোলেট তৈরি হয়েছিল তা দেশের বাইরে রপ্তানি করতে মানা করা হয়েছে। এমনকী ওই সময়ের মধ্যে তৈরি প্রোডাক্টও আসেনি কোনও স্টোরে। ২৫ জুন পর্যন্ত উৎপন্ন এই মেল্টেড চকোলেটের এনেকটা পরিমাণ এখনও র য়ে গিয়েছে প্লান্টেই। ফলে সংক্রমণ ছড়ানো নিয়ে এখনই উদ্বেগের কিছু নেই।
বেলজিয়ামের ফুড সেফটি এজেন্সির তরফেও এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। দক্ষিণ বেলজিয়ামের বিখ্যাত ফেরেরোর ফ্যাক্টরিতেই প্রথম হদিশ মেলে এই ব্যাকটেরিয়ার। এই সংস্থাটি তরল চকোলেট নিত ব্যারি ক্যালিবাউটের এই ফ্যাক্টরি থেকে। সেই সূত্র ধরেই খোঁজ মেলে ব্যাকটেরিয়ার। এরপরই শুরু হয় জোরদার তদন্ত। ফলে ওই কারখানায় আপাতত বন্ধ তরল চকোলেটের উৎপাদন। যে সমস্ত ক্লায়েন্ট খারাপ চকোলেট পেয়েছেন বা চকোলেট সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ জানিয়েছেন, তাদের থেকে পুরো কাঁচামালই ফেরত নিয়েছে এই কারখানা। সেই সঙ্গে তাঁদের বিশ্বাস কোনও দূষিত খাবার তাঁদের ক্লায়েন্টের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েনি। কারণ জানতে পারার পর থেকেই বন্ধ রয়েছে উৎপাদন। আপাতত তিন মাস পর্যন্ত বন্ধ থাকবে উৎপাদন।