আজকের দিনে হাড়ের সমস্যা খুব সাধারণ একটা ব্যাপার হয়ে উঠেছে। এর প্রধান কারণই হল আমাদের শরীরের চলাচল কম হওয়া। এক জায়গায় অনেকক্ষণ বসে কাজ করে করে আমাদের হাড়ের ক্ষয় হয়। এছাড়াও আমাদের প্রাত্যহিক খাওয়া দাওয়ায় অনিয়মের কারণেও অনেক সময় হাড়ে যথাযথ পুষ্টি যায় না। আর সেই কারণে হাড়ে কোনওরকম আঘাত লাগলে তা সেরে উঠতে অনেকটা সময় লেগে যায়। হাড়ের ব্যাপারে আমাদের সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি তার কারণ হল হাড়ের যাবতীয় ক্ষতি বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আর সেরে ওঠে না।
ক্যালসিয়াম একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ। এটি শক্তিশালী হাড় এবং দাঁতের গঠনের ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া এটি হার্ট এবং শরীরের অন্যান্য পেশীগুলির কার্যকারিতা ঠিক রাখতেও প্রচুর সাহায্য করে। তাই সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
এবার বুঝবেন কী করে আপনার শরীরে ক্যালসিয়ামের সমস্যা আছে কি না! কয়েকটা উপায় আছে যেগুলো থেকে সহজেই আন্দাজ করা যায় সেটা। তবে, সন্দেহ হলে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত।
১) পেশীর সমস্যা:
ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত লক্ষণগুলির মধ্যে অন্যতম হল পেশীতে টান ধরা, ব্যথা হওয়া। ক্যালসিয়াম পেশী সংকুচিত এবং শিথিল করতে সহায়তা করে। ক্যালসিয়ামের অভাবে পেশীগুলি তাদের স্বাভাবিক টোন বজায় রাখতে পারে না। এর ফলে পেশীর দুর্বলতা, খিঁচুনি, যন্ত্রণার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২) ক্লান্তি বোধ:
ক্যালসিয়ামের অভাবে শরীরে অত্যন্ত ক্লান্তি এবং অলসতা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া এর ফলে অনিদ্রার সমস্যাও হতে পারে। ক্যালসিয়ামের অভাবে ক্লান্তি হওয়ার ফলে হালকা মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা এবং ব্রেন ফগ তৈরি হতে পারে। যার ফলে মনোযোগের অভাব, ভুলে যাওয়া এবং বিভ্রান্তি দেখা দিতে পারে।
৩) নখ এবং ত্বকের সমস্যা:
দীর্ঘদিন ধরে যদি ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দেয় তাহলে ত্বক শুকিয়ে যেতে পারে, নখ ভঙ্গুর হয়ে যায়, চুল রুক্ষ হয়, একজিমা, ত্বকের প্রদাহ, ত্বকে চুলকানির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই খাদ্যতালিকায় ভিটামিন এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
৪) অস্টিওপেনিয়া এবং অস্টিওপরোসিস:
হাড় ক্যালসিয়াম ভাল ভাবে সঞ্চয় করে রাখতে পারে। তাই শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দিলে শরীর হাড় থেকে প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম শোষণ করতে শুরু করে। যার ফলে হাড়ের গঠন দুর্বল, ভঙ্গুর এবং আঘাতের প্রবণ হয়ে ওঠে। তাছাড়া দীর্ঘদিন যদি এই ক্যালসিয়ামের অভাব থেকে যায়, তাহলে হাড়ের খনিজের ঘনত্ব হ্রাস পায় এবং এটি শরীরকে অস্টিওপেনিয়ার দিকে নিয়ে যাতে পারে। আর এই অস্টিওপেনিয়ার থেকে পরবর্তী সময়ে অস্টিওপোরোসিসও সৃষ্টি হতে পারে। এক্ষেত্রে হাড়গুলি অত্যন্ত পাতলা হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ফ্র্যাকচার প্রবণও হয়ে ওঠে।
৫) দাঁতের সমস্যা:
শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দিলে দাঁতের মারাত্মক ক্ষয় হয়। দাঁত ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। অকালে দাঁত পড়ে যাওয়া, মাড়ির সমস্যা এবং দাঁতের গোড়া দুর্বল হয়ে যাওয়ার মতো বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।