‘সুখটান’: মানসিক দুর্বলতা কাটিয়ে ছাড়তে চান এই বদভ্যাস? পড়ুন কী বলছেন বিশেষজ্ঞ
আপনার এই সমস্যা কার কাছে বলবেন? কীভাবে মিলবে রেহাই? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা? অনেকের বক্তব্য, ধূমপান না ছাড়তে পারার কারণ অনেকটাই মানসিক দুর্বলতা। সেই ধারণা কতখানি খাঁটি?
সুখটান’। শব্দটিকে রোম্যান্টিসাইজ় করে নেশায় ডুবে যাওয়া আপাতদৃষ্টিতে খুব সহজ। সুখটান আসলে কী? টোব্যাকো কিংবা তামাকের প্রতি আসক্তি। পাঁজরকে ঝাঁঝরা করে দেওয়া অভ্যাস। সিনেমা শুরুর আগে ধূমপানের ক্ষতিকারক প্রভাবকে তুলে ধরা হয় বড় স্ক্রিনে। গোটা-গোটা অক্ষরে লেখা থাকে ধূমপান স্বাস্থ্য়ের পক্ষে ক্ষতিকারক, ক্যান্সারের কারণ। বিজ্ঞাপনের কিছু বীভত্স দৃশ্য দেখে সেই মুহূর্তে আমার-আপনার গা শিউরে ওঠে ঠিকই, কিন্তু শিহরণ যেন ওই পর্যন্তই। হলের বাইরে বেরিয়ে ছবি নিয়ে আলোচনা করতে-করতে ফের ঠোঁট তুলে নেওয়া সরু, লম্বা পছন্দের ‘ক্ষতিকারক’ জিনিসটি। গিল্ট ফিলিংও হয়। ফি বছরশেষে অজস্র রেজ়োলিউশন, প্রেমিক-প্রেমিকাকে কথা দিয়েও না রাখতে পারার অপরাধবোধ। মনের ভিতরে কারও একটা চিত্কার–এই নেশাকে ত্যাগ করা অসম্ভব?
আপনার এই সমস্যা কার কাছে বলবেন? কীভাবে মিলবে রেহাই? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা? অনেকের বক্তব্য, ধূমপান না ছাড়তে পারার কারণ অনেকটাই মানসিক দুর্বলতা। সেই ধারণা কতখানি খাঁটি? TV9 বাংলা কথা বলল মনস্তত্ববিদ ওমপ্রকাশ সিংয়ের সঙ্গে।
প্রশ্ন: অনেকেই মনে করেন সিগারেট ছাড়ার বিষয়টি পুরোটাই মানসিক। এ বিষয়ে আপনার কী মত?
সিগারেট বা তামাক ছাড়ার বিষয়কে শুধু সাইকোলজিক্যাল নয়, বায়োলজিক্যালও বলি আমরা। যে কোনও নেশার ক্ষেত্রে দু’টো বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এক-নেশা করলে ডোপামিনের (ডোপামিন আসলে ‘হ্যাপি হরমোন’। এটি মস্তিস্কের নিউরোট্রান্সমিটার। আমাদের ভাল থাকতে সাহায্য করে) মাত্রা কম থাকে। এবং সেই ব্যক্তি ডোপামিনের মাত্রা বাড়ানোর চেষ্টা করেন। দুই-তামাকের জন্য স্নায়ুতে অনেক পরিবর্তন আসে। ফলে ধূমপান না করলেই শরীরে ছটফটানি ভাব আসে।
প্রশ্ন: কী-কী পদ্ধতিতে সিগারেট ছাড়া যেতে পারে?
পকেট থেকে সিগারেট-লাইটার বের করা থেকে শুরু করে, আগুন ধরানো, ধোঁয়া ছাড়া ও শেষ টান, এই গোটা প্রক্রিয়াটাই এক ধরনের নেশা। অনেক ধরনের পদ্ধতি মানা যেতে পারে। প্রথমেই ছটফটানি ভাবকে অতিক্রম করতে হবে। এই নেশা ছাড়ানোর জন্য নিকোটিনের বিকল্প ব্যবহার করতে বলা হয়। চুইংগাম ব্যবহার করতে বলা হয়। তাতে নিকোটিন থাকে, কিন্তু বাকি আনন্দগুলো থাকে না। ধীরে-ধীরে নিকোটিনও সরিয়ে ফেলা হয়। যাঁরা প্রচুর পরিমাণে সিগারেট খান, তাঁদের জন্য এই পদ্ধতি মানা হয়। কিন্তু যাঁদের খুব বেশি পরিমাণে নিকোটিনের প্রতি আসক্তি নেই, তাঁদের জন্য রিল্যাক্সেশন এক্সারসাইজ়, গ্রুপ থেরাপির পরামর্শ দিয়ে থাকি আমরা। অনেক সময় মন অন্য দিকে ঘোরানোর পন্থা অবলম্বন করতে বলি।
প্রশ্ন: কৈশোরে ‘পিয়র প্রেশার’ থেকে তৈরি হয় এই নেশা করার প্রবণতা। সেক্ষেত্রে আপনার পরামর্শ?
দেখুন, এই নেশা করার বিষয়টা অধিকাংশ সময়ই শুরু হয় পিয়র প্রেশার থেকে। মেডিটেশন করলে উপকার পাওয়া যায়। বিষয়টা অনেকটাই মনের। বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে কিংবা সঙ্গদোষে যেমন নেশা করার প্রবণতা বাড়ে, তেমনই গ্রুপ থেরাপি নেশা ছাড়াতে সাহায্য করে। একটা গ্রুপে যদি সকলেই তামাক ছাড়ার পদ্ধতি মানতে শুরু করেন, ইতিবাচক প্রভাব মিলতে পারে। কেউ যদি মন থেকে রাজি থাকেন এই নেশা ত্যাগ করবেন, তাতে কেউ আটকাতে পারবে না। বন্ধুরাও নয়। আসলে মন ঠিক রাখার বিষয়টাই আসল।
আরও পড়ুন- পিরিয়ডের সময় পেটে তীব্র যন্ত্রণা? বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে জেনে নিন কী-কী যোগায় পাবেন মুক্তি
প্রশ্ন: মনের জোর বাড়বে কীভাবে?
মনের জোর বাড়ানো খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেই জন্যই যোগা, কিংবা মেডিটেশন করা দরকার। ক্রেভিং হতে শুরু করলে মন অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিলেও নেশাকে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। চকোলেট জাতীয় কিছু খাওয়া যেতে পারে। তাতেও যদি সমস্যা না মেটে, নিজের মনকে একজায়গায় এনে বোঝাতে হবে। যতবেশি মনকে বোঝানো যাবে, তত তাড়াতাড়ি রেহাই মিলবে ‘ক্ষতিকারক’ সঙ্গ থেকে।
অলংকরণ- অভীক দেবনাথ