গ্যাস-অম্বল, পেটের সমস্যা ভারতীয়দের বাড়িতে বাড়িতে। বাঙালিদের ক্ষেত্রে তা আরও অনেক বেশি। সামান্য গ্যাস-অম্বলেও মুঠো মুঠো অ্যান্টাসিড খাওয়া অভ্যাস। বিশেষ করে জিনট্যাক, র্যানট্যাক, অ্যাসিলকের মতো ওষুধ মাস-কাবারির বাজারের সঙ্গেই বাড়িতে আসে। এবার ইতি পড়তে চলেছে এই অভ্যাসে। এই সপ্তাহেই কোন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের চরফে একটি তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। সেই তালিকা থেকে বাদ পড়েছে সল্ট র্যানিটিডিন-সহ মোট ২৬টি ওষুধ। এই সল্ট ব়্যান্টিডাইন বিক্রি করা হয়ে থাকে অ্যাসিলক, জিনট্যাক এসব নামে। বছরের পর বছর ধরে বাজারে বহুল প্রচলিত হল এই সব ওষুধ। কিনতে পাওয়া যায় ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই। সামান্য বদহজম বা অ্যাসিডিটি হলেই মানুষ চোখ বন্ধ করে ভরসা করতেন এই সব ওষুধের উপর। বলা ভাল এই সব ওষুধই ছিল সমস্যার সমাধান। অনেকেই রোজ বা একটানা খেতেন এই সব ওষুধ। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে যে নির্দেশিকা প্রকাশিত হয়েছে তাতে, সুক্রালফেট, হোয়াইট পেট্রোলটাম, অ্যাটেনোলল এবং মিথাইলডোপার মতো ২৬টি ওষুধ।
কেন সরিয়ে নেওয়া হল ব়্যান্টিডাইন
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন এই ব়্যান্টিডাইন ওষুধের মধ্যে এন-নাইট্রোসোডিমেথাইলামাই নামের একটি উপাদান রয়েছে। যা থেকে ক্যানসারের আশঙ্কা থেকে যায়। ২০১৯ সালে এই সব ওষুধের মধ্যে ক্যানস্যার সৃষ্টিকারী উপাদানের খোঁজ পাওয়ার পর থেকে এবং জিনট্যাক হার্টবার্নের কারণ এর প্রমাণ পাওয়ার পর থেকেই তদন্ত শুরু করে আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।
ব়্যান্টিডাইন কি?
ব়্যান্টিডাইন হল একরকম সাধারণ নুন, যা দেশ জুড়ে ব্যাপক ভাবে বিক্রি করা হয় Aciloc, Zinetac এবং Rantac নামে। সাধারণত বদহজম, অ্যাসিডিটি এবং পেট ব্যথার সমস্যার জন্য এই ওষুধ দেওয়া হয়। গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD), গ্যাস্ট্রিক আলসার এবং ডুওডেনাল আলসার রোধ করার জন্যই ব্যবহার করার কথা বলা হয় এই ওষুধের। ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনের মতে এই ওষুধ গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিড নিঃসরণ এবং বেসাল গ্যাস্ট্রিক নিঃসরণে বাধা দেয়। যেখান থেকে হিস্টামিন এবং পেন্টাগ্যাস্ট্রিন অধিক নিঃসরণ হয়।
ব়্যান্টিডাইন নিয়ে বিতর্কের কারণই বা কী
এই ব়্যান্টিডাইন এর মধ্যে একরকম নুন ব্যবহার করা হয়, যেখান থেকে ক্যানসারের সম্ভাবনা থেকে যায়। এই ওষুধটি প্রথম তৈরি করেছিল গ্ল্যাক্সো হোল্ডিংস লিমিটেড। ১৯৮৩ সালে ৩১ টি দেশের পাশাপাপাশি আমেরিকাতেও এই ওষুধটি প্রথম ছাড়পত্র পায়। এরপর নানা গবেষণায় এই ড্রাগটিতে এন নাইট্রোসোডিমিথাইলামাইনের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। যা NIH অনুসারে সরাসরি পাকস্থলি, খাদ্যনালী এবং নাসোফ্যারিক্স ক্যানসারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এমনকী এখান থেকে হতে পারে মূত্রাশয়ের ক্যানসারও। এই NDMA- ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় বলে ২০২০ সাল থেকেই আমেরিকাতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এই ওষুধ। ২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের একমাত্র একটি প্রস্তুতকারী সংস্থাকেই অনুমোদন দিয়েছিল, যারা এই ব়্যান্টিডাইন প্রস্তুত করে।
তবে কম মাত্রায় এই নাইট্রোসামিন খেলে খুব একটা ক্ষতি হয় না। একটানা দীর্ঘদিন ধরে এই ওষুধ খেলে তখনই বাড়ে ক্যানসারের ঝুঁকি। তবে কেউ যদি ৭০ বছর ধরে প্রতিদিন নাইট্রোসামাইনযুক্ত ওষুধ খান তাহলে তাঁর ক্ষেত্রে ক্যানসারের ঝুঁকি অবধারিত।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।