পৃথিবী থেকে এখনও মারণভাইরাস কোভিডের (COVID 19) বিরুদ্ধে লড়াই থেমে নেই। করোনার পরই প্রকাশ পেয়েছে মাঙ্কিপক্স ভাইরাস (Monkeypox Virus)। এবার আরও এক ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হয়েছে, যা এই ২ ভাইরাসের থেকে দ্বিগুণ ভয়ংকর ও দ্রুত সংক্রমণ। পশ্চিম আফ্রিকার ঘানায় ইতোমধ্য়েই মারবার্গ (Marburg virus) নামে এক নয়া ভাইরাস সনাক্ত করা গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত ২ আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের সংস্পর্শে আসা ৯৮জনকে কোয়ারান্টিনে রাখা হয়েছে। গত বছর , ২০২১ সালে এই ভাইরাসটি সনাক্ত করা গিয়েছিল। তবে পরবর্তীকালে তেমন মাথাচাড়া না দেওয়ায় জরুরি ঘোষণা করা হয়েনি। প্রসহ্গত, ঘানায় আক্রান্ত ২ জনের মৃত্যু হওয়ায় বিষয়টি আরও গুরুতর হয়ে গিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই নয়া ভাইরাস করোনার থেকেও দ্বিগুণ সংক্রামক ও ভয়ংকর। তাই ব্যাপক প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা আরও উদ্বেগ তৈরি করেছে।
উপসর্গ কী?
মারবার্গ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে জ্বর, পেশিতে ব্যথা, ডায়েরিয়া, বমি বমি ভাব, মাথাঘোরা, মাথা ব্যথা, চরম রক্তক্ষরণের মাধ্য়মে মৃত্যু ঘটাতে সক্ষম। এই ভাইরাসের লক্ষণ অনেক রোগের ভাইরাসজনিত রোগের সঙ্গে মিল রয়েছে। ম্যালেরিয়া, টাইফ্রয়েডের মত লক্ষণও দেখা যায়। এছাড়া গায়ে র্যাশ, ফুসকুড়ির মতও উপসর্গ দেখা যায়। অতীতে এই ভাইরাসে শত শত মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সাধারণত আফ্রিকায় এই ভাইরাসের প্রকোপ বেশি দেখা গিয়েছে।
মারবার্গ ভাইরাস কী?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, মারবার্গ ভাইরাস আসলে ইবোলা গোষ্ঠীর ভাইরাসের অন্তর্গত। ১৯৬৭ সালে এই মারণ ভাইরাসের জেরে প্রায় ৩১ জনের মারা যান। পরে আরও সাতজন মারা যাওয়ার পর মারবার্গ নামক এই ভয়ংকর ভাইরাসটি প্রথম সনাক্ত করা হয়।
ফ্রাঙ্কফুর্ট, জার্মানি, বেলগ্রেড, সার্বিয়াতেও এই ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। তবে এই ভাইরাসটি উগান্ডা থেকে আমদানি করা আফ্রিকান সবুজ রঙের বানরের দেহে প্রথম সনাক্ত করা গিয়েছিল। তবে ভাইরাসটি আরও বেশ কয়েকটি প্রাণীর সংস্পর্শে এসেছে বলে জানা যায়
কীভাবে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে?
মিশরীয় রুসেট ফলের বাদুরের শরীরে এই ভাইরাসের অবস্থান। এছাড়া আফ্রিকান গ্রিন মাঙ্কি ও শুকুরের দেহের মাধ্যমে এই ভাইরাস বহন হয়। জানা গিয়েছে, আক্রান্তের সরাসরি সংস্পর্শে এলে বা আক্রান্তের শরীর থেকে বেরিয়ে আসা তরলের সংস্পর্শে এলে এই ভাইরাস মানবদেহের মধ্য়ে প্রবেশ করে। শুধু তাই নয়, অপরিচ্ছন্ন বিছানা, পোশাকের সংস্পর্শে এলেও এই মারণরোগ ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি মানুষ সুস্থ হয়ে ওঠার পরও তাদের রক্ত বা বীর্যের মাধ্যমে অনেক মাস পরেও অন্যদের সংক্রমিত করতে পারে।
কীভাবে চিকিত্সা করা হবে?
এই ভাইরাসে কোনও নির্দিষ্টি চিকিত্সা বা ভ্যাকসিন নেই। তবে হুয়ের মতে, রক্তপরীক্ষা করে রোগের অবস্থান বুঝে চিকিত্সা করা সম্ভব। হাসপাতালে ভরতি করা হলে রোগীকে স্য়ালাইন ও রক্ত দিয়ে লক্ষণগুলি উপশম করার সক্ষম হওয়া সম্বব। তবে গুরুতর অবস্থায় কী কী করণীয় তা নিয়ে বিশ বাঁও জলে চিকিত্সামহল।
সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত কোন কোন বিষয়ে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, আফ্রিকার বুশমিট নামে একপ্রকার গরুর মাংস খাওয়া বা পরিচর্চা থেকে এড়িয়ে চলা ভাল।
– পুরুষদের মধ্যে এই ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে এক বছর পার তাদের বীর্য ২ বার ভাইরাসের জন্য নেগেটিভ রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কন্ডোম ব্যবহার করা উচিত।
– ভাইরাসে মৃতদের মাটিতে পুঁততে সাহায্য করেন যাঁরা, তাদের শারীরিক সংস্পর্শ থেকে এড়িয়ে চলা উচিত।