আমরা মোটামুটি সবাই জানি, দেহে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস প্রবেশ বা সংক্রমণ হলে দেখা দেয় রোগ। অর্থাৎ ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ আমাদের কাছে অতিপরিচিত সমস্যা। তবে ছত্রাকের সংক্রমণ নিয়ে আমরা সেভাবে ভাবি না বা পর্যাপ্ত তথ্যও আমাদের হাতে নেই। তবে ২০২১ সালে কোভিডের প্রবল ঢেউয়ের সময় ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের আক্রমণের বিষয়ে সাধারণ মানুষ খানিকটা অবগত হয়েছিলেন।
বিশেষ করে গুরুতর রূপে কোভিড আক্রান্ত রোগীর প্রাণ সংশয়ের কারণ হয়েছিল এই ব্ল্যাক ফ্যাঙ্গাস সংক্রমণ। হু-এর মতে ছত্রাক সংক্রমণ কিন্তু মোটেই বিরল সমস্যা নয়। বরং নানা সময়েই ছত্রাক সংক্রমণ সংক্রামিতর জীবন সংশয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মুশকিল হল, ছত্রাক সম্পর্কে তথ্যের অভাব রয়েছে এবং কিছু ধরনের ছত্রাক সংক্রমণের চিকিৎসাও যথেষ্ট জটিল। কিছু ছত্রাক ইতিমধ্যেই ওষুধের প্রতিরোধীও হয়ে উঠেছে।
সমগ্র পৃথিবীর মানবস্বাস্থ্য বিষয়ে মাথা ঘামায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থার পক্ষ থেকে জানা যাচ্ছে, কিছু ছত্রাক ইতিমধ্যেই চিকিৎসা প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে এবং সেইসব ছত্রাকের দাপটও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই মুহূর্তে বিশ্বে চারটি শ্রেণীর ফ্যাঙ্গাস প্রতিরোধী ওষুধ রয়েছে। এছাড়া ছত্রাক সংক্রমণ নির্ণয়কারী যে রোগ পরীক্ষাগুলিও রয়েছে তাতে সময়ও লাগে যথেষ্ট বেশি। ছত্রাক সংক্রমণ নির্ণয়ে র্যাপিড টেস্ট এখনও নেই। যে টেস্টগুলি রয়েছে তা মহার্ঘ হওয়ায় ব্যাপকহারে প্রয়োগও অসম্ভব।
কাদের ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি?
মহামারীর সময়ে দেখা গিয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীরাই ছত্রাকের সহজ শিকার হচ্ছেন। হু-এর মতে, কিছু ফ্যাঙ্গি প্যাথোজেন হাসপাতালের পরিবেশে ঘাপটি মেরে বসে থাকে সবচাইতে অসুস্থ রোগীর দেহে প্রবেশ করার উদ্দেশ্যে। এছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম রয়েছে এমন রোগীও থাকে এদের নিশানায়। তাই ক্যান্সার, এইচআইভি, এইডস, অঙ্গ প্রতিস্থাপন হয়েছে এমন ব্যক্তি, ক্রনিক রেসপিরেটরি ডিজিজ-এ আক্রান্ত এবং যক্ষ্মা রোগীর এই ধরনের ছত্রাক দ্বারা সংক্রামিত হওয়ার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি।
সাবধান!
কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, কিছু ব্যাকটেরিয়ারা যেমন নিজেদের বিভিন্ন ওষুধের প্রতি প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলছে তেমনই বেশ কিছু ছত্রাকও ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা খাড়া করতে সক্ষম হয়ে উঠেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে বেশ কিছু ক্ষতিকারক ছত্রাকের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে যা মানবজাতির স্বাস্থ্যের পরিপন্থী—
১) ক্রিপ্টোকোক্কাস নিওফর্ম্যানস: এই ছত্রাক ব্রেনেও আক্রমণ করতে পারে। তার ফলে রোগীর শারীরিক বৈকল্য তো বটেই এমনকী প্রাণহানিও ঘটার আশঙ্কা থাকে।
২) আসপারগিলাস ফমিগ্যাটাস: ফুসফুসকে আক্রমণ করে এবং রোগ নিরাময়কারী ওষুধের কার্যকারিতা হ্রাস করে।
৩) ক্যানডিডা অরিস: হাসপাতাল থেকে এই ছত্রাককে দূর করা কিছু ক্ষেত্রে অসম্ভব হয়ে যায়।
৪) ক্যানডিডা অ্যালবিক্যানস: রক্তে প্রবেশ করে এই ভাইরাস প্রাণঘাতী সংক্রমণ তৈরি করে।
উপায় কী?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বেশ কিছু ব্যবস্থা এখনই নেওয়া উচিত যাতে একাধিক প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়। প্রশ্ন হল কী করা যেতে পারে?
• বাড়াতে হবে রোগীর প্রতি নজরদারি।
• ছত্রাক ও সংক্রমণ নিয়ে চালাতে হবে গবেষণা। চিকিৎসার নতুন নতুন পথ আবিষ্কার করা প্রয়োজন।
• জনগণের মধ্যে সচেতনতা আনতে ছত্রাক সম্পর্কে আরও প্রচার চালানোও দরকার।