পটলের (Parwal) নাম শুনলেই কিছু মানুষের চোখ আনন্দে চকচক করে ওঠে। আবার কিছু লোক নাক সিঁটকান। তবে যাঁরা ভালোবাসেন তাঁরা নানাভাবে পটলের (Pointed Gourd) কদর করেন। পটল ভাজা, পটল পোস্ত, দই পটল, পটল আলুর ঝোল— নানাভাবে পটলকে সাজিয়ে তুলে আনেন পাতে! জানলে অবাক হবেন নিরীহ সব্জি পটলের রয়েছে একাধিক স্বাস্থ্যগুণ (Health Benefits)। বিশেষ করে বর্ষাকালে (Monsoon Season)পটল খেলে তা শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী প্রমাণিত হতে পারে। প্রশ্ন হল কীভাবে? খেয়াল করে দেখুন আবহাওয়ার দিকে। এই রোদ ঝলমল করছে আকাশে, সঙ্গে রয়েছে তীব্র গরম। আবার একটু বৃষ্টি হতেই পরিবেশের তাপমাত্রা নেমে যাচ্ছে হুহু করে। আবহাওয়ার এমন খামখেয়ালিপনার সঙ্গে শরীর মানিয়ে নিতে পারছে কই?
ছোট থেকে বড় সকলেরই শরীরের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা হয়ে পড়ছে কমজোরি। ফলে ফ্লু, ভাইরাসের সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা বেড়েই চলেছে। তাই প্রাকৃতিকভাবে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ইমিউনিটি বাড়াতে বলিষ্ঠ ভূমিকা নিতে পারে পটল। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর সঙ্গে ডায়াবেটিস, উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল কমাতেও ইতিবাচক ভূমিকা নেয় পটল। হ্রাস করে হার্ট ডিজিজের আশঙ্কাও!
বর্ষকালের আবহাওয়া রোগজীবাণুর বংশবৃদ্ধিতে সাহায্য করে একথা এখন আমরা সকলেই জানি। এই সময় ইমিউনিটির ফাঁক গলে নানা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া দেহে প্রবেশের সুযোগ পেয়ে যায়। তাই বর্ষা ঋতুতে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মজবুত করে তোলা দরকার। দেখা গিয়েছে, ডায়েটে উপযুক্ত মাত্রায় পটল যোগ করতে পারলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। সঙ্গে অন্যান্য ক্রনিক ডিজিজ প্রতিরোধেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। প্রশ্ন হল কীভাবে?
পটলে রয়েছে একাধিক ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ফলে পটল একাধিক উপায়ে শরীর সুস্থ রাখে।
রক্ত শুদ্ধ করে: জানলে অবাক হবেন, পটল কিন্তু প্রাকৃতিকভাবেই রক্ত শুদ্ধ রাখে। প্রতিদিন পটল খেলে রক্তের নানা অপদ্রব্য নষ্ট হয়। ইমিউনিটি মজবুত হয়।
বয়স ধরে রাখতে: আমরা সকলেই জানি বয়স বাড়লে চোখের পাশে কাকের পায়ের মতো দাগ হয় যাকে ক্রো’জ ফিট বলে। এই ধরনের বলিরেখার সঙ্গে গাল ও চিবুকের ত্বকও ঝুলে যায়। নানাবিধ প্রসাধনী ব্যবহার করে ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধের চেষ্টা করেন বহু মানুষ। ত্বকের এভাবে বুড়িয়ে যাওয়ার পিছনে দায়ী থাকে বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ ও কোষের ক্ষয়। আসলে আমাদের দেহের কোটি কোটি কোষ প্রতিদিন যে বর্জ্য উৎপাদন করে তাকে বলে ফ্রি র্যা ডিকেলস। এই উপাদানটি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও ত্বকের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। সাধারণত শরীর রেচনক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের টক্সিন দেহ থেকে বের করে দেয়। তবে খাদ্যভ্যাস, অনিয়ন্ত্রিত জীবনশৈলীর কারণে দেহে ফ্রি র্যােডিকেলস-এর মাত্রা বাড়তে পারে। এর ফলে ত্বক দ্রুত বুড়িয়ে যেতে পারে। দেখা গিয়েছে পটলে থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, এ। এই ধরনের উপাদানগুলি ফ্রি র্যা ডিকেলস ধ্বংস করে বলিরেখা, ত্বক ঝুলে যাওয়া প্রতিরোধ করতে পারে। একইসঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে তোলে।
কোষ্ঠকাঠিন্য: আধুনিক যুগে খাদ্যাভ্যাস, স্ট্রেস-এর কারণে অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্যের শিকার হন। সঙ্গে জুড়ে যায় পাইলস, ফিসারের সমস্যা। পরিপাকতন্ত্রে সমস্যা, দেহ স্থূল কিংবা কৃশ হয়ে যাওয়ার পিছনেও দায়ী থাকতে পারে কনস্টিপেশন। পটল এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন অন্ত্রের সংকোচন প্রসারণ স্বাভাবিক করতে পারে পটল। কারণ পটলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। ফলে প্রতিদিন পটল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা গায়েব হয়ে যায়। পরিপাকতন্ত্র হয়ে ওঠে শক্তিশালী। পাচকতন্ত্র স্বাভাবিক থাকলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে।