বিশ্ব জুড়েই থাবা বসিয়েছে ক্যানসার। ছোট থেকে বড়-এই মারণ রোগের হাত থেকে রেহাই পান না কেউই। দীর্ঘ চেষ্টার পর রোগের বাড়বাড়ন্ত কিছুটা কমানো যায় কিন্তু এই কর্কট রোগের হাত থেকে রেহাই কার্যত অসম্ভব। বিশ্ব জুড়ে প্রতি বছর অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয় ক্যানসারে। চিকিৎসার বিপুল খরচের জন্য মধ্যবিত্তর কাছে কর্কট রোগ একটি আতঙ্কের নাম। অনেকেই ধরে নেন ক্যানসার মানেই মৃত্যু।
রোগের থেকে রোগআতঙ্ক অনেক বেশি মানুষের মনে। কিন্তু সঠিক সময়ে চিকিৎসা হলে এই রোগের হাত থেকেও রেহাই সম্ভব। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্তকরণ ভীষণ ভাবে জরুরি। অনেকে বুঝতেই পারেন না যে তিনি ক্যানসার আক্রান্ত। আর তাই নিজের মতো চিকিৎসা না করে যত দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন ততই ভালো। সেই সঙ্গে নিয়মিত থাকতে হবে চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে। তেমনই প্যাংক্রিয়াস কিংবা অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার নির্ধারণ করাও কিন্তু বেশ কঠিন।
প্রতি বছর নভেম্বরের তৃতীয় বৃহস্পতিবার বিশ্বজুড়ে পালন করা হয় প্যাংক্রিয়াটিক ক্যানসার দিবস (World Pancreatic Cancer Day)। এছাড়াও এই মাসকে প্যাংক্রিসাস ক্যানসার সচেতনতা মাস হিসেবেও গণ্য করা হয়। বিরল ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে এবং মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতেই এই বিশেষ দিন পালন করা হয়। ২০১১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম এই দিনটি পালন করা হয়। এরপর বিশ্বের আরও কিছু দেশও এই বিশেষ দিনটিতে গুরুত্ব দেয়। পরবর্তীতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ একসঙ্গে মিলে PCAM- নামের একটি সংগঠন তৈরি করে। যারা এই অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার বিষয়ক সচেতনতামূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এই ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ হল জন্ডিস। প্রায়শই জন্ডিস হওয়া, বিলিরুবিনের মাত্রা বেশি থাকা, হাত-পায়ের পাতা হলুদ হয়ে যাওয়া , চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া হল এই রোগের লক্ষণ। সেই সঙ্গে লিভারও ক্রমশ ড্যামেজ হতে শুরু করে। লিভারে হলদেটে ছোপ পড়ে। এছাড়াও মূত্রের রং গাঢ় হয়ে যায়। অনেকের ক্ষেত্রে মলও অতিরিক্ত পিচ্ছিল হয়ে যায়। সেই সঙ্গে বার বার প্রস্রাব পায়। অনেকেই কিন্তু এই রোগ-লক্ষণ এড়িয়ে যান। জন্ডিস হলে প্রথম থেকেই সতর্ক হন। অযথা এড়িয়ে যাবেন না।
জন্ডিস সেরে যাওয়ার পরও যদি দেখেন পেট কিংবা কোমরে নিয়মিত ব্যথা হচ্ছে, গ্যাস-অম্বল লেগেই রয়েছে তাহলেও হালকা ভাবে নেবেন না। গ্যাস-অম্বল কিন্তু যে কোনও বড় রোগের পূর্বাভাস। এছাড়াও লিভার বড় হয়ে যাওয়া, গলব্লাডার স্টোন থেকেও পরবর্তীতে হতে পারে অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার।
এছাড়াও আরও যে যে লক্ষণে সতর্ক থাকবেন
দ্রুত ওজন কমে যাওয়া কিন্তু ভালো লক্ষণ নয়। খিদে কমতে থাকা, ওজন দ্রুত হারে কমলে সতর্ক হোন এবং অবশ্যি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
প্রায়শই গ্যাস-অম্বল-বমির সমস্যা হলে মুঠো মুঠো অ্যান্টাসিড খাবেন না। ভেতরে হয়তো কোনও সমস্যার জন্যই আপনি এত কিছুর সম্মুখীন হচ্ছেন। তাই চিকিৎসের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না। অতিরিক্ত বমিও সুবিধের নয়।
অনেক সময় পায়ে রক্ত জমাট বেঁধে যায়। কিন্তু কেন জমাট বাঁধে তার কারণ অনেকেই বুঝতে পারেন না। আর এই রক্ত জমাট বাঁধার অন্যতম কারণও কিন্তু এই প্যাংক্রিয়াসের ক্যানসার।
যাঁদের ব্লাডসুগার হাই তাঁদের ক্ষেত্রে অগ্ন্যাশয় ক্যানসারের সম্ভাবনা বেড়ে যায় অনেকখানি। সুগারে ভেতর ভেতর অনেক অঙ্গের ক্ষতি করে। যা বাইরের থেকে বোঝা যায় না। তাই সুগার রোগীদের যদি নিয়মিত পেট, কোমর ব্যাথা হয় তাহলে আগাম সতর্কতা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: World COPD Day: এই মরশুমে অবশ্যই জেনে রাখুন ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ় আসলে কী?