হার্ট বড়ই জটিল ঠাঁই। সে স্বাস্থ্যের দিক থেকেই হোক আর মনের দিক থেকেই হোক। কখন কার মন কী চায়, তা বোঝা যেমন সহজ কাজ নয়, তেমনই আপনার হার্ট কী চায় তাও বোঝা বড় শক্ত। একজনের মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যে সর্বক্ষণ হার্ট পাম্প করাটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এতদিন আমরা জানতাম হার্ট মস্তিষ্ক থেকে পাওয়া নির্দেশ অনুসারে কাজ করে। দূষিত রক্ত পরিশুদ্ধ করাই তাঁর প্রধান কাজ। কিন্তু আপনি কি জানেন, আপনার হার্টের একটা মস্তিষ্ক আছে। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি, সম্প্রতি এমনই তথ্য উঠে এসেছে গবেষণায়। নেচার কমিউনিকেশনে প্রকাশিত একটি গবেষণা জানাচ্ছে, আমাদের হার্টেও এক ধরনের জটিল নিউরন নেটওয়ার্ক আছে।
কী বলছে গবেষণা?
সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট এবং নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের করা একটি যৌথ গবেষণায় দাবি হার্টের স্নায়ুতন্ত্র আছে। হার্টের অভ্যন্তরীণ স্নায়ুতন্ত্রকে ইন্ট্রাকার্ডিয়াক স্নায়ুতন্ত্র বলে অভিহিত করেছেন তাঁরা। গবেষণার দাবি হার্টের ছন্দ নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও হার্টের কাজকর্ম শেষ করতে অনেক বেশি অবদান রয়েছে এই অভ্যন্তরীণ স্নায়ুতন্ত্রের।
বিশেষ এই গবেষণার দাবি হার্টের হৃদয়ের স্নায়ুতন্ত্র মস্তিষ্ক থেকে নির্দেশ না পেলেও হার্টের নিজস্ব ছন্দ তৈরি করতে পারে। এমনকি মস্তিষ্কের নির্দেশের ছাড়াও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। অর্থাৎ হার্ট নিজেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। গবেষকদের দাবি এটি হার্টের ‘নিজস্ব ছোট মস্তিষ্ক’-এর মতো।
বিজ্ঞানীরা এই গবেষণাটি করার সময় বিশেষ এক প্রজাতির মাছ ‘জেব্রাফিশ’-এর হার্ট পরীক্ষা করে দেখেন। অদ্ভুত ভাবে এই মাছের হার্টের গঠন এবং মানুষের হার্টের গঠনের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। গবেষকরা জানিয়েছেন হার্টের একটি বিশেষ অংশ হল সাইনোট্রিয়াল প্লেক্সাস (এসএপি)। এই বিশেষ অংশটি হার্টের পেসমেকার হিসাবে কাজ করে, হার্টের এই অংশে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ধরনের নিউরনের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন। এই নিউরনগুলি বিভিন্ন নিউরোট্রান্সমিটার ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে, যেমন – এসিটাইলকোলিন, গ্লুটামেট এবং সেরোটোনিন, যা হৃদস্পন্দনের উপর স্থানীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে।
গবেষণার দাবি হার্টের নিউরনগুলি পেসমেকারের মত অংশ রয়েছে। তা এক বিশেষ ছন্দে ইলেক্ট্রিক্যাল প্যার্টানে কাজ করে। ঠিক যেভাবে ব্রেন ও স্পাইনাল কর্ড হাঁটা বা শ্বাস নেওয়ার মতো শরীরের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ হার্টের স্নায়ুতন্ত্র কেবল মস্তিষ্কের নির্দেশ মেনে চলে না বরং হার্টের ক্রিয়াকলাপ বজায় রাখতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। গবেষকদের দাবি নতুন এই আবিষ্কার অ্যারিথমিয়া এবং অন্যান্য অনেক জটিল হার্টের রোগের চিকিৎসায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।