মুম্বই: সোমবার, একই পরিবারের নয়জনের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় সাড়া পড়ে গিয়েছিল মহারাষ্ট্রের সাংলিতে। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার মোট ১৩ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ওই পরিবারের সদস্যদের আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে, সব মিলিয়ে ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাংলির পুলিশ সুপার দীক্ষিত গেদাম। সংস্থা এএনআইকে তিনি বলেছেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া একটি সুইসাইড নোট থেকে জানা গিয়েছে, কয়েকজন ব্যক্তিগত ঋণদাতা তাদের (ওই পরিবারের সদস্যদের) জীবনে ঝামেলা সৃষ্টি করেছিল। ওই ঋণদাতাদের কাছ থেকে ওই পরিবার কিছু টাকা ধার করেছিল।’
সোমবার, সাঙলি জেলার মহিসাল শহরের ওই বাড়ি থেকে পরিবারের নয় সদস্যের নিথর দেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। সূত্রের খবর, দুই ভাইয়ের পরিবার একসঙ্গে থাকত ওই বাড়িটিতে। তাঁরা দুই ভাইই পেশায় চিকিৎসক ছিলেন। সব মিলিয়ে পাঁচ মহিলা এবং চার পুরুষের দেহ মিলেছিল। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতেরা হলেন, পোপাট ইয়াল্লাপ্পা ভ্যানমোর (৫২), সঙ্গীতা পোপাট ভ্যানমোর (৪৮), অর্চনা পোপাট ভ্যানমোর (৩০), শুভম পোপাট ভ্যানমোর (২৮), মানিক ইয়াল্লাপ্পা ভ্যানমোর (৪৯), রেখা মানিক ভ্যানমোর (৪৫) এবং আদিত্য মানিক ভ্যান (১৫), অনিতা মানিক ভ্যানমোর (২৮) এবং আক্কাতাই ভ্যানমোর (৭২)।
স্থানীয় থানার অপরাধ দমন শাখার পুলিশ ইন্সপেক্টর অজয় সিন্দকার এদিন বলেন, ‘ভ্যানমোর ভাই এবং পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য অভিযুক্ত মহাজনদের কাছ থেকে উচ্চ সুদের হারে টাকা ধার করেছিলেন। সময়মতো সুদ পরিশোধ করা সত্ত্বেও ঋণদাতা ও অন্যান্য আরও কয়েকজন প্রতিদিন ওই পরিবারের সদস্যদের মৌখিক ও শারীরিকভাবে হেনস্থা করত। এই মানসিক চাপ অসহনীয় হয়ে ওঠায়, তারা নিজেদের জীবন শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।’ ঋণের চাপেই তাঁরা আত্মহত্যা করেছেন বলে মনে করছে পুলিশ। আর এই কারণেই মোট ২৫ জনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে।
সোমবার সকাল থেকেই ওই বাড়ির কোনও দরজা খোলা হয়নি বলে জানিয়েছেন তাদের প্রতিবেশীরা। দরজায় ধাক্কা দিয়েও কারোর সাড়া পাওয়া যায়নি। এরপর, দরজা ভেঙে তারা ভিতরে ঢুকেছিল, সামনেই পড়েছিল ছয়জনের মৃতদেহ। এরপরই খবর দেওয়া হয় পুলিশে। পুলিশ আসার পর, বাড়ির অন্য ঘর থেকে আরও তিনজনের মরদেহ পাওয়া যায়।
প্রাথমিকভাবে, এই ঘটনা সকলেরই স্মৃতিতে উসকে দিয়েছিল দিল্লির বুরারি এলাকার গণ-আত্মহত্যার ঘটনার কথা। ২০১৮ সালে, উত্তর দিল্লির বুরারি এলাকাতেও সাত মহিলা-সহ একই পরিবারের মোট এগারো জন সদস্যের রহস্যজনক পরিস্থিতিতে মৃত্যু হয়েছিল। পরিবারের ১০ জন সদস্যকে চোখ বাঁধা অবস্থায় সিলিং থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছিল দিল্লি পুলিশ। এক ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধার দেহ পড়ে ছিল মেঝেতে। তদন্তে জানা গিয়েছিল, ওই পরিবার তন্ত্র সাধনায় জড়িয়ে পড়েছিল। তবে, সাঙলির ঘটনায় মন্ত্রতন্ত্রের কোনো ভূমিকা নেই বলেই মনে করছে পুলিশ। এখনও পর্যন্ত ঋণশোধের চাপেই ওই সদস্যরা আত্মঘাতী হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে, এসপি গেদাম জানিয়েছেন, পুলিশ সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখছে।