Abhishek in Lok Sabha: ‘সিট বেল্ট বেঁধে নিন, মৌসম খারাপ হতে চলেছে’, মোদী সরকারকে অভিষেকের হুঁশিয়ারি

মঙ্গলবার (২৪ জুলাই), লোকসভায় ২০২৪-২৫ সালের বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বুধবার এই বাজেটের উপর আলোচনায় মোদী সরকারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

Abhishek in Lok Sabha: 'সিট বেল্ট বেঁধে নিন, মৌসম খারাপ হতে চলেছে', মোদী সরকারকে অভিষেকের হুঁশিয়ারি
লোকসভায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়Image Credit source: Sansad TV
Follow Us:
| Updated on: Jul 24, 2024 | 7:42 PM

নয়া দিল্লি: মঙ্গলবার (২৪ জুলাই), লোকসভায় ২০২৪-২৫ সালের বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বুধবার এই বাজেটের উপর আলোচনায় মোদী সরকারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কী বললেন তিনি, দেখে নিন এক নজরে –

  1. মোদী সরকার এক নড়বড়ে জোট নিয়ে চলেছে। আপনাদের বলব, সিট বেল্ট বেঁধে নিন, আবহাওয়া খারাপ হতে চলেছে।
  2. ভারতের মাথায় ১৬৯ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। বাংলার ৬ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে বলে আপনারা কটাক্ষ করেন। এই বাজেট বাংলা বিরোধী, জন বিরোধী। ১২৩ জন বিধায়ক দেওয়ার পরও আপনারা বাংলাকে বঞ্চনা করেছেন। এর উপযুক্ত জবাব পাবেন। এই বাজেটে অর্থের থেকে গল্পকাহিনি বেশি আছে।
  3. আরেকটি ট্র্যাজেডি হল কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে কাজ লাগিয়ে বিরোধী দলের নেতাদের হেনস্থা করা। আমাকেও হেনস্থা করা হয়েছে। তারপরও আমার রাজ্য আমার লোকসভা কেন্দ্রর মানুষ আমায় রেকর্ড ভোটে জিতিয়েছে। আমি জনগণের শক্তির সামনে মাথা নোয়াবো, ক্ষমতায় যারা আছে তাদের সামনে মাথা নোয়াবো না।
  4. রেলমন্ত্রীর হাতে রক্ত লেগে আছে। ২০১৭ থেকে ২০২২-এর মধ্যে ২৪৪টি ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। ২০২৩-তেই ১৫টি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। মণিপুরে ২০০-র বেশি হত্যা, ৭০,০০০ গৃহহীন হয়েছে গত দেড় বছরে। বাজেটে মণিপুরের কোনও উল্লেখ নেই।
  5. শেষ অক্ষর ‘টি’, ‘ট্র্যাজেডি’ অর্থাৎ বিপর্যয়ের প্রতীক। কলকাতায় কয়েক বছর আগে যখন ফ্লাইওভার ভেঙে পড়ে গিয়েছিল, তখন মোদী বলেছিলেন, এটা অ্যাক্ট অব গড নয়, অ্যাক্ট অব ফ্রড। মোরবি ব্রিজ ভেঙে পড়া, দিল্লির এয়ারপোর্টের ছাদ ভেঙে পড়া, রাম মন্দিরের ছাদ থেকে জল পড়া, অটল সেতুতে ফাটল ধরা, উত্তরাখণ্ডের সূড়ঙ্গে শ্রমিকদের আটকে পড়া, বালাসোরে ট্রেন দুর্ঘটনা – এগুলো কি ছিল? অ্যাক্ট অব গড না, অ্যাক্ট অব ফ্রড?
  6. ‘ই’ মানে এক্সেন্ট্রিক, অর্থাৎ, খামখেয়ালিপনা। প্রধানমন্ত্রী মোদীর খামখেয়ালিপনা এই সরকারকে সার্কাসে পরিণত করেছে। পরিকল্পনাহীন লকডাউন ঘোষণা, কৃষি বিল জারি, নোট বাতিল – একের পর এক খামখেয়ালি সিদ্ধান্তের খেসারত দিতে হয়েছে ভারতীয়দের।
  7. এবার ‘জি’-এর কথা। জি মানে গ্যারান্টি। নোট বাতিলের সময় প্রধানমন্ত্কী বলেছিলেন কালো টাকা আর থাকবে না। কিন্তু তিনি সেই কথা রাখতে পারেননি। সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সকল ভারতীয়কে ২০২২-এর মধ্যে বাড়ি করে দেওয়া, বুলেট ট্রেন, কৃষকদের রোজগার দ্বিগুণ করা, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ জল পৌঁছে দেওয়া – গ্যারান্টি দিয়ে কোনওটিই তারা পূরণ করতে পারেনি।
  8. শ্রমিকদেরও বঞ্চনা করেছে এই সরকার। ২০০৬ থেকে ২০১৩ সালে মজুরি বেড়েছিল ৬ শতাংশ। এই সরকারের আমলে তা নেমে এসেছে ১.৪ শতাংশে।
  9. ছাত্রদেরও বঞ্চনা করেছে। নিট পরিচালনায় ব্যর্থতা, এই সরকারের অন্যতম বড় ব্যর্থতা। এই নিয়ে আমরা সংসদে আলোচনা চেয়েছিলাম।কিন্তু, প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে বিশেষ কিছু শোনা যায়নি। কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে ১২,০০০-এর বেশি পদ ফাঁকা। আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে ৮ শতাংশ ছাত্র।
  10. মহিলাদেরও বঞ্চনা করেছে বিজেপি। মহিলা সংরক্ষণ বিবল অনুযায়ী বিজেপর ২৪০ সাংসদের মধ্যে ৮০ জন মহিলা থাকা উচিত ছিল। কিন্তু তাদের ৩১ জন মহিলা সাংসদ আছেন। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদদের মধ্যে ৩৮ শতাংশ মহিলা।
  11. কেন্দ্র বাংলাবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। ফাঁপা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বাংলার সংস্কৃতিকে অশ্রদ্ধা করেছে। রাজ্যের ভাবমূর্তিকে ক্ষূণ্ণ করতে ষড়যন্ত্র করেছে। আজই রাজ্যসভায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বাংলা নাকি কেন্দ্রের সহায়তার প্রকল্পগুলিকে বাস্তবায়িত করতে পারেনি। আমি তাঁকে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে বলছি। ২০২১ সালে বাংলায় হারার পর, কেন্দ্র কোন প্রকল্পে কত টাকা দিয়েছে, তা বলুন। গতকাল বেশ কয়েকটি রাজ্যে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য অর্থমন্ত্রী বরাদ্দ করেছেন। বঞ্চনা করা হয়েছে বাংলাকে।
  12. ‘ডি’ অক্ষরটি ‘ডিপ্রাইভ’, অর্থাৎ, বঞ্চনার প্রতীক। ২০,০০০ কোটি খরচ করা হয়েছে সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্পে। বড়লোকদের, প্রভাবশালীদের ঘর-বাড়ির জন্য এই প্রকল্প। কিন্তু, শহরে, গ্রামে যারা গৃহহীন, তাদের জন্য আপনারা কী করেছেন?
  13. ১০টি সংস্থার মধ্যে ৩টিই মহিলারা চালান, এমন তিনটি রাজ্য আছে দেশে – পশ্চিমবঙ্গ, তেলঙ্গানা এবং কর্নাটক। একটিও বিজেপি শাসিত নয়। এটা কোনও কাকতালীয় ঘনটা নয়। আসলে বিজেপি আর মহিলাদের ক্ষমতায়ন সম্পূর্ণ দুটি বিপরীতমুখি বিষয়।
  14. অন্যদিকে, বাংলায় কন্যাশ্রী প্রকল্প ৮৫ লক্ষ মেয়ের জীবনে উন্নতি ঘটায়েছে। যাকে স্বীকৃতি দিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জও। লক্ষ্মীর ভান্জার প্রকল্প ২ কোটি ২০ লক্ষ মহিলাকে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী করে তুলেছে। দেশের আরও অনেক রাজ্য এই ধরনের প্রকল্প চালু করছে। অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি, একে জাতীয় মডেলে পরিণত করুন।
  15. শহুরে মহিলাদের মধ্যে বেকারত্বের হার ২২.৭ শতাংশে পৌঁছেছে। বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও স্লোগান দিয়েছে তারা। কিন্তু, বেটি কো নৌকরি দিলাও বলতে ভুলে গেছে ওরা।
  16. কর্মসংস্থানের ৫টি প্রকল্প এবং ৪ কোটি ১০ লক্ষ যুবকের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য অর্থমন্ত্রী ২ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। এর আগে বিজেপি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল প্রতি বছর ২ কোটি চাকরি দেওয়ার। সেই লক্ষ্য পূরণের ধারেকাছে তারা নেই। এখন তারা অবাস্তব লক্ষ্য স্থির করছে। দেশের যুব সম্প্রদায় তাদের ফাঁপা প্রতিশ্রুতি শুনতে চায় না। তারা চাকরি চায়।
  17. বাজেটের দ্বিতীয় অক্ষর ‘ইউ’। এটা আনএম্প্লয়মেন্ট, অর্থাৎ, বেকারত্বকে চিহ্নিত করে। গত জুন মাসে আমাদের দেশে বেকারত্বের হার পৌঁছেছিল ৯.২ শতাংশে। মোদীজিকি তিসরিবার, যুবা আভিভি বেরোজগার।
  18. বিজেপি সবকা সাথ সবকা বিকাশ-এর মন্ত্র ভুলে ‘যো হামারে সাথ, হাম উনকে সাথ’ মন্ত্রে চলছে। লোকসভা, রাজ্যসভায় বিজেপির একজনও মুসলিম সদস্য নেই। সংসদে বৈচিত্রের অভাবে, সংসদে সংখ্যালঘুদের আকাঙ্খা পূরণ হচ্ছে না। সরকারি নীতি অসাম্যকে বাহবা দিচ্ছে।  তাই লোকসভা নির্বাচনে মোদী সরকারকে তারা প্রত্যাখ্যান করেছে।
  19. মোদী সরকার নাগরিক, গৃহবধু, দিনমজুর ও কৃষকদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এক বছরে ভেজ থালির দাম ৮ শতাংশ বেড়েছে। পেঁয়াজের দাম ৪৩ শতাংশ, টমাটো ৪১ শতাংশ, আলু ৩৯ শতাংশ। এলপিজি গ্যাসের দাম বেড়ে ২০২৩-এ হয়েছিল  ১১০০ টাকা। এদিকে মানুষের সঞ্চয় ৫০ বছরে সবথেকে কম অবস্থায় পৌঁছেছে।
  20. BUDGET – বাজেটের এই ছয়টি শব্দের অর্থ আলাদা আলাদা করে ব্যাখ্যা করবেন বলে জানালেন অভিষেক। প্রথমেই বললেন ইংরাজি ‘বি’ শব্দটির অর্থ ‘বিট্রেয়াল’ অর্থাৎ বিশ্বাসঘাতকতা।