নয়া দিল্লি: বাংলার সাধারণ মানুষের বকেয়া টাকা আদায় করতেই দিল্লিতে প্রতিবাদ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে যন্তর-মন্তরে সেই প্রতিবাদ সভায় যোগ দেবেন শয়ে-শয়ে সাধারণ মানুষ, জব কার্ড হোল্ডাররা। দিল্লি পুলিশ তাঁদের গায়ে হাত দিলে ছেড়ে দেওয়া হবে না। সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে দাঁড়িয়ে এমনই হুঁশিয়ারি দিলেন তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)।
এদিন রাজঘাটে গান্ধীজিকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করার পর সেখানেই শান্তিপূর্ণ ধরনা কর্মসূচিতে বসেছিলেন তৃণমূল সাংসদরা। কিন্তু, দিল্লি পুলিশ রীতিমতো লাঠি উঁচিয়ে তাঁদের তাড়া করে বলে অভিযোগ। এমনকি অভিষেকের প্রাণে মারার চেষ্টা করা হয় বলেও অভিযোগ তুলেছেন বর্ষীয়ান সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রসঙ্গ তুলেই এদিন সন্ধ্যায় কেন্দ্রকে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যন্তর-মন্তরে কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রথমে আমাদের সঙ্গে দুপুর ১২টায় দেখা করার কথা জানিয়েছিলেন। পরে ই-মেল করে জানানো হয়, দুপুরে তাঁর সময় হবে না, সন্ধ্যায় দেখা করবেন। তাই দুপুর ১টা থেকে আমরা যন্তর-মন্তরে সভা করব। বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাধারণ মানুষেরা এসেছেন, এই সভায় যোগ দেবেন। তাদের গায়ে দিল্লি পুলিশ হাত দিলে পরিণতি ভয়ঙ্কর হবে।” রাজঘাটের প্রসঙ্গ তুলে অভিষেক আরও বলেন, “রাজঘাট থেকে বেরিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করছি। হঠাৎ করে রাস্তায় জলকামান ছুড়ল পুলিশ। ন্যূনতম সৌজন্যতা দেখায়নি। আমরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছিলাম। তারপরও মহিলা কর্মীদের উপর লাঠিচার্জ, অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ছবি তুলে ধরেছে। মহিলা পুলিশ থাকার পরেও পুরুষ পুলিশ কনস্টেবল মহিলাদের উপর আক্রমণ করেছে। আমাদের গায়ে হাত পড়লে আমরা মেনে নিয়েছি। কিন্তু, সাধারণ মানুষের যদি গায়ে আঁচড় পড়ত, বিজেপি যে ভাষা বোঝে সেই ভাষায় উত্তর দিতে জানি।”
এরপরই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে তৃণমূল সেনাপতি বলেন, “মাটি তোমার, জায়গা তোমার, রেফারি তোমার। তোমার মাটিতে দাঁড়িয়ে চ্যালেঞ্জ করছি, তৃণমূলকে মারুন। আমাদের গায়ে হাত পড়লে মেনে নেব। কিন্তু, কাল যদি একটা সাধারণ মানুষ , জব কার্ড হোল্ডারদের গায়ে আঁচড় পড়ে তার ফল খারাপ হবে। বিজেপি যে ভাষা বোঝে সেই ভাষায় উত্তর দিতে জানি।” বিজেপি সরকার যত আটকানোর চেষ্টা করবে, তত লড়াই তীব্রতর হবে, আন্দোলনের গতি বাড়বে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অভিষেক।
১০০ দিনের কাজ থেকে আবাস যোজনা প্রকল্পে সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছে বিজেপি। এদিন তারও জবাব দেন অভিষেক। তিনি বলেন, “২০২১ সাল থেকে ২০০টি কেন্দ্রীয় দল বাংলায় পরীক্ষা করেছে। কেবল ১০০ দিনের কাজের তদন্তে ৬৯টি কেন্দ্রীয় দল বাংলায় এসেছিল। কী পেয়েছে?” একইসঙ্গে সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অভিষেক বলেন, “জ্ঞানেশ্বরী থেকে সারদা, নারদ, রোজভ্যালি, এসএসসি, প্রাইমারি – যা তদন্ত করেছে ফল কি? গত দু বছরে ২৬টি মামলা করেছে। সিবিআই তদন্ত করলে যদি সাধারণ মানুষ টাকা পায় করুক। সিবিআই তদন্ত করে কজন টাকা পেয়েছে?”
এদিন বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির জব কার্ড দেওয়া নিয়েও পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন অভিষেক। একইসঙ্গে জনগণের টাকা দিয়ে নতুন সংসদ ভবন তৈরি হচ্ছে, অথচ সাধারণ মানুষ বকেয়া টাকা পাচ্ছে না বলেও সুর চড়ান তিনি। আবার বাংলার বিজেপি সাংসদরাই বাংলার মানুষদের টাকা আটকে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ অভিষেকের। তবে আগামিকালের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকটি গুরুত্বপূর্ণ এবং তিনি বকেয়া দেওয়ার ব্যাপারে কী জানান, তার উপর নির্ভর করে পরবর্তী আন্দোলনের দিশা ঠিক হবে বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।