নয়া দিল্লি: মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল), আজমের-দিল্লি ক্যান্টনমেন্ট বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের যাত্রার সূচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে দুর্নীতির প্রশ্নে পূর্ববর্তী সরকারগুলিকে বিদ্ধ করলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, অতীতে ভারতীয় রেলের আধুনিকিকরণে বারবার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে স্বার্থান্বেষী এবং ক্ষুদ্র রাজনীতি। প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, স্বাধীনতার পর রেলের আধুনিকিকরণ পরিচালিত হয়েছে শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থে। তিনি জানান, ২০১৪ সালের পর থেকে ভারতীয় রেলে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছে। পূর্ববর্তী কংগ্রেস ও অন্যান্য সরকারের সমালোচনা করলেও, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের প্রশংসা শোনা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী মোদীর মুখে। কংগ্রেস নেতাকে তিনি ‘বন্ধু’ বলে উল্লেখ করেন। তবে, একই সঙ্গে রাজস্থানে কংগ্রেসের অন্দরে যে ফাটলের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, তাই নিয়ে খোঁচা মারতেও ছাড়েননি তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি গেহলটজির প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। বর্তমানে তিনি বহু রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু, তা সত্ত্বেও উন্নয়নের কাজের জন্য তিনি সময় বের করেছেন। রেলের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। আমি তাঁকে স্বাগত জানাচ্ছি।” প্রসঙ্গত, রাজস্থান সরকারের দুর্নীতির সমালোচনা করে মঙ্গলবারই অনশন করেছেন কংগ্রেস নেতা সচিন পাইলট। স্বাভাবিকভাবেই এই নিয়ে ফের অস্বস্তিতে রাজস্থানের কংগ্রেস সরকার। বস্তুত, সরকার গঠনের শুরু থেকেই গত ৪ বছরের বারংবার রাজস্থান কংগ্রেসে পাইলট-গেহলট দ্বন্দ্ব দেখা গিয়েছে।
রাজস্থানের জয়পুর জংশন রেল স্টেশনে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের যাত্রা শুরুর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও, এদিনের অনুষ্ঠানে অংশ নেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এবং রাজস্তানের রাজ্যপাল কালরাজ মিশ্রও। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দুর্ভাগ্যবশত, স্বার্থপর এবং ক্ষুদ্র রাজনীতি সবসময়ই রেলের আধুনিকিকরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বড় মাপের দুর্নীতির জন্য না হয়েছে রেলের উন্নয়ন, না স্পষ্টতা ছিল রেলের চাকরির ক্ষেত্রে। রাজনৈতিক স্বার্থ দেখে রেলমন্ত্রী কে হবেন ঠিক করা হত। রাজনৈতিক স্বার্থেই এমন কিছু ট্রেন ঘোষণা করা হত, যেগুলি কোনওদিনই চলত না। গরীবদের কাছ থেকে জমি কেড়ে নিয়ে, তাদের রেলের চাকরি দেওয়া হত। রেল সুরক্ষা, পরিচ্ছন্নতা – সবই অগ্রাহ্য করা হত।”
উল্লেখ্য, বর্তমানে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি ‘ল্যান্ড ফর জবস’ অর্থাৎ, ‘জমির বদলে চাকরি’ দুর্নীতি মামলায়, আরজেডি নেতা তথা প্রাক্তন রেলমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। তদন্ত চলছে তাঁর পরিবারের আরও কয়েক সদস্যের বিরুদ্ধেও। এই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
উদ্বোধনী বন্দে ভারত ট্রেনটি ট্রেনটি জয়পুর থেকে রওনা দিয়ে সোজা দিল্লি ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত চলবে। ১৩ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে নিয়মিত যাত্রা। জয়পুর এবং দিল্লি ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে আলওয়ার, গুরগাঁও এবং আজমেরে স্টপেজ দেওয়া হবে। রাজস্থআনের এই বন্দে ভারত ট্রেনটি অবশ্য আগের বন্দে ভারত ট্রেনগুলির থেকে কিছুটা আলাদা। এটিই বিশ্বের প্রথম সেমি-হাই-স্পিড প্যাসেঞ্জার ট্রেন, যা হাই-রাইজ ওভারহেড ইলেকট্রিক তারের মাধ্যমে চলবে। এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বন্দে ভারতের আজকের যাত্রা আগামীকাল আমাদের উন্নত ভারত গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমি ভাগ্যবান যে গত দুই মাসে ষষ্ঠ বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের যাত্রা শুরু করতে পারলাম।”