এলাহাবাদ: ‘এসব কী লিখেছেন এফআইআর-এ? এতো সফট পর্ন সাহিত্য!’ স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে অত্যাচারের অভিযোগ জানিয়ে, আদালতের ভর্ৎসনার মুখে পড়লেন এক মহিলা। ২০১৮ সালের অক্টোবরে, উত্তরপ্রদেশের হাপুর জেলার পিলখুয়া থানায় তার স্বামী এবং পরিবারের অন্য দুই সদস্যের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের করেছিলেন শিবাঙ্গী বনসল। শ্বশুরবাড়ির আত্মীয় এবং স্বামী সাহেব বনসলের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ ছিল, যৌন নির্যাতন এবং পণের দাবিতে শারীরিক নির্যাতন করার। কিন্তু, এফআইআর-এ যে ভাষায় তিনি সেই অত্যাচারের বর্ণনা দিয়েছেন, সেই ভাষা নিয়েই প্রশ্ন তুলল এলাহাবাদ আদালত।
সোমবার (১৩ জুন) এলাহাবাদ হাইকোর্টে এই মামলার শুনানিতে বিচারপতি রাহুল চতুর্বেদী বলেন, ‘এফআইআর-এর ভাষা শালীন হওয়া উচিত। অভিযোগকারী যে ধরনেক নৃশংসতারই সম্মুখীন হোন না কেন, এই ধরনের ক্ষতিকর অভিব্যক্তি ব্যবহার করাকে ন্যায্যতা দেবে না আদালত। এফআইআর বা অভিযোগপত্র হল যেকোনও ফৌজদারি মামলার গেটওয়ে। শালীন অভিব্যক্তির মাধ্যমেই নৃশংসতার বর্ণনা করা উচিত। এটা কোনও সফট পর্ণ সাহিত্য নয় যেখানে গ্রাফিক বর্ণনা করতে হবে। প্রতিটি বৈবাহিক মামলায় স্বামী এবং পরিবারের সকল সদস্যকে জড়িয়ে যৌতুক সংক্রান্ত নৃশংসতার অভিযোগকে বহুগুণে অতিরঞ্জিত করা হচ্ছে। ইদানিং এই প্রবণতা, বিশেষত উত্তর ভারতে আমাদের সামাজিক বন্ধনের ক্ষতি করছে।’
কী অভিযোগ করেছিলেন শিবাঙ্গী বনসল? তাঁর অভিযোগ, শ্বশুর মুকেশ বনসল তাঁর সঙ্গে সঙ্গম করতে চেয়েছিলেন। তাঁর শ্যালকও তাঁকে শারীরিকভাবে হেনস্থা করার চেষ্টা করেছিলেন। স্বামীর বিরুদ্ধে জোর করে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগও করেছিলেন। তাঁর আরও অভিযোগ, শাশুড়ি এবং ভগ্নিপতি তাঁকে গর্ভপাতের জন্য চাপও দিয়েছিল। তিনি তা করতে অস্বীকার করায়, শ্বশুরবাড়ির সকলে তাঁকে শারীরিক নির্যাতন করেছ। অতিরিক্ত যৌতুকের দাবিতে ক্রমাগত তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করা হত বলে অভিযোগ করেন তিনি।
কিন্তু, কেন তাঁর এফআইআর-এর ভাষা নিয়ে প্রশ্ন তুলল আদালত? কী এমন লিখেছিলেন শিবাঙ্গী বনসল? জানা গিয়েছে তিনি লিখেছিলেন, ‘যৌতুকের জন্য আমার স্বামী আমাকে শারীরিক ও যৌন নির্যাতন করে। সে পায়ুপথে যৌন মিলনের দাবি করে, এবং টয়লেট কমোডে আমার মাথা ঢুকিয়ে দেয়। আমার শ্বশুর এবং শ্যালকও আমার কাছে ‘যৌন সুবিধা’ দাবি করেছিল।’ এই অভিযোগ থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করে হাইকোর্টে পাল্টা মামলা করেছিল বনসল পরিবার। সোমবার আদালত শ্বশুরবাড়ির অন্যান্য সদস্যদের অব্যাহতির অনুমতি দিলেও স্বামী সাহেব বনসলের আবেদন নাকচ করে দিয়েছে। কাজেই তাঁকে নিম্ন আদালতে হাজিরা দিতে হবে।
তবে, শুনানির সময় আদালতের ওই ‘সফট পর্ন’ মন্তব্য নিয়ে ঝড় উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বহু মহিলাই বিচারপতি রাহুল চতুর্বেদীর ওই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। জোর করে পায়ু সঙ্গম করা, কমোডে মাথা ঢুকিয়ে দেওয়া কী করে সফট পর্ন বলে মনে করলেন একজন বিচারপতি, তা নিয়ে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনরা বলছেন, বিচারপতি চতুর্বেদীর রায় বিবাহ, পরিবার এবং লিভ-ইন সম্পর্কের বিষয়ে একজন বিচারকের ব্যক্তিগত এবং রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গিকেই প্রকাশ করেছে। এর পরিবর্তে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাঁর প্রধান আইনি সমস্যাগুলি নিয়ে আলোচনা করা উচিত ছিল।