‘আগের দিনও দেখেছি ঘানিকে, তারপরই…’, ভারতে এসে সে দিনের অভিজ্ঞতার কথা বললেন আফগান সাংসদ আনারকলি

এক বিমানে আফগানিস্তান থেকে ১৬৮ জনকে এয়ারলিফট করে নিয়ে আসা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন এই আনারকলি কাউর।

'আগের দিনও দেখেছি ঘানিকে, তারপরই...', ভারতে এসে সে দিনের অভিজ্ঞতার কথা বললেন আফগান সাংসদ আনারকলি
ফাইল ছবি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 24, 2021 | 9:08 AM

নয়া দিল্লি: কোনোদিনই দেশ ছাড়েননি তাঁর পরিবার। ভেবেছিলেন এ বারও পালাবেন না। কিন্তু পরিস্থিতি আচমকাই বদলে গেল। আর কোনও রাস্তা খোলা ছিল না। ভারতে এসে এমনটাই জানালেন আফগানিস্তানের সাংসদ আনারকলি কাউর হোনারয়ার। রবিবার সকালে হিন্দন এয়ারবেসে পৌঁছন তিনি। আফগানিস্তানের অ-মুসলিম হয়েও যাঁরা সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম আনারকলি। প্রায় ১০ বছর ধরে সাংসদ ছিলেন তিনি। ২০ বছর আগেও তালিবান রাজের শিকার হয়েছিল তাঁর পরিবার। তবে এ বার পরিস্থিতি আরও কঠিন বলে জানিয়েছেন আনারকলি।

সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, ২০ বছর আগেও তাঁর পরিবার তালিবানি সন্ত্রাসের শিকার হয়েছিল। তবে তাঁরা দেশ ছাড়েননি কোনদিনই। কিন্তু তাঁর দাবি, এ বারের পরিস্থিতি অন্যরকম। এবার তালিবরা আরও বেশি শক্তিশালী, অনেক আধুনিক অস্ত্র তাদের হাতে। তারা কোনোভাবেই আফগানিস্তানে বাস করতে দিত না বলে জানিয়েছেন আনারকলি। তিনি জানিয়েছেন তাঁর বাবা ও ঠাকুরদা পুরো জীবনটাই আফগানিস্তানে কাটিয়েছেন। তাঁর বাবা ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন প্রথমে, পরে নির্বাচন কমিশনের কাজে নিযুক্ত হন। তিনি নিজে ও তাঁর ভাই-বোন সরকারের কোনও না কোনও পদে কাজ করতেন।

তালিবান নতুন করে দখল নিতে শুরু করার পরও তিনি দেশ ছেড়ে যাবেন না বলেই ভেবেছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি এতই ভয়ানক হয়ে ওঠে, যাতে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমার মা এখনও ভয়ে কাঁপছেন। মায়ের সবসময় মনে হচ্ছে যেন দরজার বাইরেই তালিবান দাঁড়িয়ে আছে, তাই আমাকেও বেরতে দিচ্ছেন না ঘর থেকে।’ তাঁর কথায়, দেশ ছাড়ার কথা ভাবেননি তিনি। তবে ১৫ অগস্ট যখন আসরাফ ঘানি দেশ ছেড়ে চলে যান, তখনই সব আশা শেষ হয়ে যায়।

ওই ঘটনার আগের দিনও ঘানির সঙ্গে দেখা হয়েছিল তাঁর, কাবুলে নিজের অফিসে গিয়েছিলেন তিনি। তখনও তিনি ভাবছিলেন যে, শান্তির জন্য একসঙ্গে প্রতিবাদ জানাবেন তাঁরা। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সবার কাছে ফন আসতে থাকে। বার্তা আসে, কাবুলদখল করে নিয়েছে তালিবান। তৎক্ষণাৎ অফিস ছাড়তে হয় তাঁকে। গাড়িতে ফেরার সময় তিনি দেখেন চারপাশে লোকজন ছুটে যাচ্ছে। গাড়ি করে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তিনি। চারপাশ থেকে তখন গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। প্রত্যেকেই মাঝপথে গাড়ি থামিয়ে কার্যত দৌড়ে বাড়ি পৌঁছন।

সাংসদের আত্মীয়-বন্ধুরাও পরামর্শ দিচ্ছিলেন দেশ ছাড়ার, কিন্তু তিনি তখনও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। তিনি জানতে পারেন তাঁর এক বন্ধুর বাড়িতে ঢুকে পড়েছে ৫০ জন তালিবান। রীতিমতো হেনস্থা করে রান্না করে খাওয়াতে বলে ওই পরিবারকে। এ সব শুনেও শান্তনা দিয়েছিলেন আনারকলি। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই জানতে পারেন দেশ ছেড়েছেন ঘানি, কোথায় গিয়েছেন কেউ জানেন না। বিপদের মুখে পড়ে যায় তাঁর পরিবার, বন্ধু, আত্মীয়রা। তখনই দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। আরও পড়ুন: হিন্দু নামে পরিচয় লুকনোর চেষ্টা! মুসলিম ব্যবসায়ী প্রকাশ্যে বেধড়ক মার