আচমকা বন্ধ ভারত-আফগান ১৫০ কোটি ডলারের বাণিজ্য, অনিশ্চয়তায় ভুগছেন ভারতের ব্যবসায়ীরা
লক্ষ লক্ষ মানুষ আফগানিস্তান ছাড়ছে। ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তানের বাণিজ্যের ভবিষ্যতও ক্রমশ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।
কাবুল: ভারতের সঙ্গে ব্যবসা আফগানিস্তানের জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। কোটি কোটি টাকার ব্যবসা চলত দুই দেশের মধ্যে। এখন আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নতুন করে খারাপ হয়েছে, তাই আচমকাই থমকে গিয়েছে দুই দেশের বাণিজ্য। বেশিরভাগ আফগানের আয়ের মূল উৎস হল কৃষিকাজ। ফলস রফতানি করেই রোজগার করেন অনেকে। কিন্তু আচমকা ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না আফগানিস্তানের বাসিন্দারা। যদি এ ভাবে চলতে থাকে, তাহলে হয়ত বেঁচে থাকাই দায় হয়ে উঠবে আফগানদের।
গত ২০ বছরে ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তানের বাণিজ্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯-২০-তে দুই দেশের মধ্যে ১৫০ কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। আফগানিস্তান থেকে ৮৫ শতাংশ শুকনো ফল ও বহু মশলা আমদানি করে ভারত। ভারতে আসে কিছু টাটকা ফলও। কিন্তু আপাতত বন্ধ বাণিজ্য। ভবিষ্যতে কী হবে, সে ব্যাপারেও এখনও কোনও সিদ্ধান্তের কথা জানায়নি তালিবান। গত এক সপ্তাহে ভারতে শুকনো ফলের দাম দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে।
২০২০-২১-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, আফগানিস্তানে ভারত রফতানি করেছে ৮২৫ মিলিয়ন ডলারের ও আমদানি করেছে ৫০৯ মিলিয়ন ডলারের। ভারত থেকে মূলত চিনি, ওষুধ, চা, কফি, পোশাক, মশলা ও বিদ্যুৎ সংযোগের ট্রান্সমিশন টাওয়ার যেত আফগানিস্তানে। অন্যদিকে, আফগানিস্তান থেকে আসত শুকনো ফল, আঠা ও কিছু পেঁয়াজ।
ভারত ও আফগানিস্তানের বাণিজ্যে একটা বড় ভূমিকা রয়েছে পাকিস্তানের। পাকিস্তানের ওপর দিয়েই চলত আমদানি-রফতানি। তালিবানের হাতে ক্ষমতা চলে যাওয়ার পর সে সবই বন্ধ হয়ে গিয়েছে আপাতত। পাকিস্তানের ওপর দিয়েই কার্গো বিমানে আমদানি রফতানি চলত। কিন্তু তালিবান সে সব বিমান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বলে আগেই জানিয়েছেন ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনের (FIEO) ডিরেক্টর জেনারেল (DG) ড. অজয় সাহানি। তবে ভবিষ্যতে আমদানি-রফতানি ফের শুরু হবে বলে আশাবাদী তিনি। তিনি মনে করেন, অর্থনীতিই মূল ভিত্তি, তা কিছুদিনের মধ্যেই বুঝে যাবে তালিবান।
জয়পুরের ব্যবসায়ী ইন্দ্র পাক সিং জানিয়েছেন তাঁর ব্যবসার লভ্যাংশের ২০ শতাংশই আসে আফগানিস্তানে রফতানি করে। মাসে ৫ হাজার মেট্রিক টন ময়দা আফগানিস্তানে রফতানি করতেন তিনি, যার মূল্য অন্তত ১৫ কোটি টাকা। তালিবান দখল নেওয়ার পর থেকেই ব্যবসা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আগামী ৬ মাস বা এক বছরে আফগানিস্তানের সঙ্গে ব্যবসা করা সম্ভব বলে মনে করি না। দিল্লিতে শুকনো ফলের ব্যবসা করেন অশ্বিনী জাগ্গি। তিনি জানিয়েছেন, উৎসবের মরশুম শুরু হচ্ছে আর তার আগেও দাম বাড়ছে চড়চড় করে।
তবে এত অস্থিরতার মধ্যেও আবার বাণিজ্য শুরু হবে বলে আশা রাখছেন ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনের কর্তা অজয় সাহাই। তাঁর দাবি আফগানিস্তানও অর্থনৈতিক গুরুত্ব বুঝতে পারবে। তারা বুঝবে যে অর্থনীতি ছাড়া কোনও গতি নেই। ভারতের ভূমিকার গুরুত্বও বুঝবে তারা। আরও পড়ুন: তালিবানি হুঁশিয়ারির মুখে ৩১ অগস্টের ডেডলাইন নিয়ে কী ভাবছেন বাইডেন? ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সিদ্ধান্ত