কোহিমা: নাগাল্যান্ডে পরিস্থিতি ক্রমেই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছে। সশস্ত্র সেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে রাগ ও বিক্ষোভ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। নাগাল্যান্ডের মন জেলায় সশস্ত্র বাহিনীর গুলিতে ১৪ জন নিরীহ গ্রামবাসীর মৃত্যুর পর থেকেই বিক্ষোভের আঁচে তপ্ত উত্তর পূর্বের এই রাজ্য। রাজ্যে বিভিন্ন জায়গায় ১৪ জনের মৃত্যুর বিচার চেয়ে রাস্তায় নেমেছেন হাজারে হাজারে মানুষ।
সেনা অভিযানে গ্রামবাসীদের মৃত্যু হওয়ায় মন জেলায় ভোর থেকে সন্ধ্যে অবধি বনধের ডাক দেওয়া হয়েছে। এই বনধের ফলে সেখানকার সরকারি অফিস, দোকানপাট, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। পরিবহন ব্যবস্থাতেও এই বনধের প্রভাব দেখা গিয়েছে। জানা গিয়েছে, কোন্যাক নাগা উপজাতির যাঁরা সেনা বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন, সেই জনজাতির তরফে মন জেলার বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। এছাড়ারও পূর্ব নাগাল্যান্ডের পাঁচটি জেলায় ইস্টার্ন নাগাল্যান্ড পিপলস্ অর্গানাইজেশনের নেতৃত্বে পথে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। কোন্যাক নাগা উপজাতি ও ইএনপিও দুই সংগঠনই, মৃতদের বিচার ও তাদের দাবি পূরণ না হওয়া অবধি সেনা বাহিনীর সঙ্গে পূর্ণ অসহযোগিতার ডাক দিয়েছেন।
৪ ও ৫ ডিসেম্বর নাগাল্যান্ডের মন জেলায় ঘটেছিল এক অনভিপ্রেত ঘটনা। সশস্ত্র সেনা বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৪ জন নিরীহ গ্রামবাসী। সেনা বাহিনী জানিয়েছিল, অনুপ্রবেশ রুখতে অভিযান চালাতে গিয়েই ‘ভুলবশত’ এই ঘটনা ঘটে। তাই এই ঘটনার পর সেনা বাহির পক্ষে থেকে দুঃখপ্রকাশ করে বিবৃতিও দেওয়া হয়েছিল। সেনার তরফে জানানো হয়েছিল এই ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করা হবে।
এই মন এলাকাটি হল নাগা গোষ্ঠী এনএসসিএন(কে) এবং অসমের আলফার (ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব অসম) ঘাঁটি। মন জেলাটির সঙ্গে মায়ানমারের আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে এবং সেইসঙ্গে অসমের সঙ্গে অন্তর্দেশীয় সীমা করে। দীর্ঘদিন ধরে এই ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এলাকাটি অত্যন্ত অস্থির এবং স্পর্শকাতর বলে পরিচিত।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সামনে আসার পর রাজ্যে থেক বিতর্কিত ‘আফস্পা’ প্রত্যাহারের দাবিতেও সরব হয়েছেন অনেকে। নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নিফিউ রিও বলেন, “প্রতি বছর কেন্দ্র নাগাল্যান্ডে আফস্পার মেয়াদ বাড়িয়ে চলেছে। তাদের যুক্তি এটি একটি ‘অশান্ত এলাকা’… কিন্তু সমস্ত সশস্ত্র গোষ্ঠীই যুদ্ধবিরতিতে রয়েছে এবং তাদের সঙ্গে সেনার শান্তি আলোচনা চলছে। তাহলে কেন বারবার আফস্পাপ মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে?” ঘটনা সামনে আসার পরই দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি জানিয়েছিলেন, এই ঘটনায় যথাযথ তদন্ত হবে এবং মৃতদের পরিবার বিচার পাবেই। আগামি দিনে নাগাল্যান্ড পরিস্থিতি কোন দিকে যায় সেদিকেই নজর থাকবে সকলের।