গুয়াহাটি: গত কয়েকদিন ধরে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের সঙ্গে টুইটারে প্রবল তর্ক-বিতর্ক চলছে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার। এরইমধ্যে সোমবার (২৯ অগস্ট), তিনি শুধুমাত্র দিল্লির বদলে ভারতের পাঁচটি পৃথক অঞ্চলে, পাঁচটি পৃথক রাজধানী স্থাপনের আহ্বান জানালেন। এর ফলে বিভিন্ন রাজ্যের অর্থনৈতিক অসাম্য দূর হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী। টুইট করে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, “দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শ্রী অরবিন্দ কেজরীবাল এখন অন্য রাজ্যকে উপহাস করা অভ্যাসে পরিণত করেছেন। তাঁর সঙ্গে বাদানুবাদের পরে, আমার মনে হয়েছে, দরিদ্র রাজ্যগুলিকে উপহাস না করে, আমাদের অসাম্যের রোগ নিরাময়ের লক্ষ্যে কাজ করা উচিত। আমরা কি ভারতের ৫টি রাজধানী পেতে পারি না, প্রতি জ়োনে একটি করে?”
প্রসঙ্গত, এর আগে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে ভারতের চারটি পৃথক জ়োনে চারটি পৃথক রাজধানী স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দক্ষিণ, উত্তর, পূর্ব ও উত্তর পূর্ব – দেশের এই চার প্রান্তে চারটি রাজধানী স্থাপনের বিষয়ে সংসদীয় অধিবেশনে দলের সাংসদদের দাবি তোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, সংসদের চারটি অধিবেশন ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ভারতবর্ষের চার প্রান্তের চার রাজধানীতে করতে হবে। এবার অনুরূপ দাবি তুললেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মও।
Having been engaged in a dialogue with Delhi CM Shri @ArvindKejriwal, who’s by now in habit of mocking at other states, I’m of the view that we should work on curing the disease of disparity, and not mock poor states. Can we have 5 Capitals of India, one in every zone? 1/3
— Himanta Biswa Sarma (@himantabiswa) August 29, 2022
অসমের মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেছেন, “এতে দিল্লির মতো সরকারগুলির হাতে উত্তর-পূর্ব এবং পূর্বের রাজ্যগুলির তুলনায় বিশাল সম্পদ না থাকাটা নিশ্চিত হবে আবার উল্টোটাও হবে। আর অবশ্যই আমাদের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীজির আশীর্বাদে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমরা যা করছি, তা গত ৭৫ বছরে অজানা ছিল। অবশেষে, সাত দশকের অস্বীকৃতি ও অবহেলার পর, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে ২০১৪ সালে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিকে মূলধারায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল এবং সেই অগ্রগতির গতি নিরবচ্ছিন্ন। উত্তর-পূর্বের সহানুভূতি এবং উপহাসের প্রয়োজন নেই, আমাদের প্রয়োজন আমরা যা পাইনি – সম্মান, সম্পদ এবং পুনর্জন্ম।”
গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে দুই মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে বাকযুদ্ধ চলছে। একে অপরের বিরুদ্ধে একের পর এক কথার গোলাগুলি ছুড়ে চলেছেন কেজরীবাল এবং হিমন্ত বিশ্ব। বিবাদের সূচনা হয়েছিল গত বুধবার। অসমের কিছু স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, এই বিষয়ে এক সংবাদ প্রতিবেদনের লিঙ্ক টুইটারে শেয়ার করে কেজরীবাল লিখেছিলেন, স্কুল বন্ধ করাটা কোনও সমাধান নয়, বরং সারা দেশে আরও স্কুল খোলার প্রয়োজন রয়েছে। এই থেকেই দুই রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়েছে। শনিবার, আপ প্রধান কটাক্ষের সুরে অসমের মুখ্যমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তিনি উত্তর-পূর্ব রাজ্যের স্কুলগুলির অবস্থা দেখতে চান, কবে আসবেন।
এরপর সেই বিবাদ গড়ায় রবিবারেও। হিমন্ত বিশ্ব শর্মা টুইটারে কেজরীবালকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনি কিছুই করতে পারেননি (দিল্লির উন্নয়নের জন্য), তাই আপনি উত্তর-পূর্বের ছোট রাজ্যগুলির সঙ্গে দিল্লির তুলনা করা শুরু করেছেন। বিশ্বাস করুন, বিজেপি যদি দিল্লিতে ক্ষমতায় আসে তবে এই শহরকে বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ শহর করে তুলবে।” আরেকটি টুইটে তিনি জানান, কেজরীবাল অসম দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু, তাঁর দুঃখ এবং অনুশোচনা হচ্ছে, কারণ অসম যখন বন্যার মতো বিরাট দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করছিল, তখন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর এমন ইচ্ছা হয়নি। তিনি আরও জানান, এমনকি, সেই সময় দিল্লির উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়াকে আমন্ত্রণ পর্যন্ত জানানো হয়েছিল।
এর জবাবে ফের হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে টুইটে খোঁচা দেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। অরবিন্দ কেজরীবাল লেখেন, “আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিলেন না। আমি কবে আপনাদের স্কুলগুলি দেখতে আসব? যদি আপনাদের স্কুলির মান ভাল না হয়, তাহলে অসুবিধা নেই। আমরা একসঙ্গে সেগুলিকে ঠিক করতে পারি।” আরও এক টুইটে, কেজরীবাল বলেন, “বিশ্বাস করুন, আপ যখন (অসমে) সরকার গঠন করবে, তখন আমরা সেখানেও দিল্লির উন্নয়নের মতো উন্নয়ন করব। দুর্নীতি দমন করব এবং সম্পদের কোনও ঘাটতি হবে না।”