BNS 2023: ফের ‘পরকীয়া’ হবে অপরাধ? কেন্দ্রকে সুপারিশ সংসদীয় কমিটির
Adultery crime India: বলা হয়েছে, ব্যভিচার সংক্রান্ত আইনের সংশোধন করে এটিকে 'লিঙ্গ-নিরপেক্ষ' করতে হবে। অর্থাৎ, এই 'অপরাধ'-এ পুরুষ এবং মহিলা - দুই পক্ষকেই সমান দায়ী করতে হবে। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে এক যুগান্তকারী রায়ে ব্যভিচারকে অপরাধের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছিল। সরকার, সংসদীয় কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করলে, সেই রায় উল্টে যাবে।
নয়া দিল্লি: ব্যাভিচার বা পরকীয়াকে ফের অপরাধ হিসেবে গণ্য করার সুপারিশ করল স্বরাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটির যুক্তি, ‘বিবাহ একটি পবিত্র বিষয়’ এবং একে যে করেই হোক ‘রক্ষা’ করতে হবে। আর সেই কারণেই পরকীয়াকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা উচিত। গত সেপ্টেম্বরে সংসদে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা বিল পেশ করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিলটি যাচাইয়ের জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল। মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) এই বিষয়ে সরকারকে রিপোর্ট দিয়েছে সংসদীয় কমিটি। সেখানেই এই সুপারিশ করা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, পরকীয়া সংক্রান্ত আইনের সংশোধন করে এটিকে ‘লিঙ্গ-নিরপেক্ষ’ করতে হবে। অর্থাৎ, এই ‘অপরাধ’-এ পুরুষ এবং মহিলা – দুই পক্ষকেই সমান দায়ী করতে হবে। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে এক যুগান্তকারী রায়ে ব্যভিচারকে অপরাধের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছিল। সরকার, সংসদীয় কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করলে, সেই রায় উল্টে যাবে।
ভারতীয় দণ্ডবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি এবং ভারতীয় সাক্ষ্য আইনকে প্রতিস্থাপন করার জন্য, সরকার যথাক্রমে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা এবং ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম নামে তিনটি নতুন বিল এনেছে মোদী সরকার। ভারতীয় বিচার ব্যবস্থাকে ঔপনিবেশিক যুগের আইনের হাত কবল মুক্ত করাই এই তিন বিল আনার লক্ষ্য। অগস্ট মাসে তিনটি বিলই আরও বিবেচনার জন্য বিজেপি সাংসদ ব্রিজ লালের নেতৃত্বাধীন স্বরাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল। কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, ব্যভিচার সংক্রান্ত আইন ফিরিয়ে আনতে হবে। এই ক্ষেত্রে পুরুষ এবং মহিলা দুজনেই যাতে শাস্তি পায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
২০১৮ সালে ৩৭৭ ধারার একটা অংশও বাতিল করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। ব্রিটিশ আমলের এই আইনে সমকামিতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হত। সংসদীয় কমিটি তার সুপারিশে বলেছে, ৩৭৭ ধারার আওতায় ‘অসম্মতিমূলক’ যৌনতাকে ফের শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা উচিত। ৩৭৭ ধারার কিছু অংশ বাতিল করার সময় সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, এই আইন অযৌক্তিক, অগ্রহণযোগ্য এবং স্পষ্টতই স্বেচ্ছাচারী। ধারাটির বাতিল করা অংশগুলি সংবিধানের বেশ কয়েকটি অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে বলেও জানিয়েছিল আদালত। সংসদীয় কমিটি বলেছে, ‘প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে অ-সম্মতিমূলক শারীরিক মিলন, অপ্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে শারীরিক মিলনে এবং পশুদের সঙ্গে শারীরিক মিলনের ক্ষেত্রে’ ৩৭৭ ধারা প্রযোজ্য থাকা উচিত। কমিটি জানিয়েছে, “ভারতীয় ন্যায় সংহিতায়, পুরুষ, মহিলা, ট্রান্সজেন্ডার এবং পশুদের বিরুদ্ধে অ-সম্মতিমূলক যৌন অপরাধের কোনও বিধান নেই।”
২০১৮ সালে, তৎকালীন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের এক বেঞ্চ বলেছিল, “বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে ব্যভিচার একটি নাগরিক অপরাধের ভিত্তি হতে পারে, তবে একে ফৌজদারি অপরাধ বলা যায় না। স্বামী স্ত্রীর মালিক – ১৬৩ বছরের পুরনো, ঔপনিবেশিক যুগের আইনটি এই অবৈধ ধারণা অনুসরণ করে। আইনটি প্রাচীন, স্বেচ্ছাচারী এবং পিতৃতান্ত্রিক। মহিলাদের স্বায়ত্তশাসন এবং মর্যাদা লঙ্ঘন করে এই আইন।” ২০১৮ সালের এই রায়ের আগে, ব্যাভিচার সংক্রান্ত আইনে বলা হয়েছিল, কোনও পুরুষ যদি কোনও বিবাহিত মহিলার স্বামীর সম্মতি ছাড়া তাঁর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হন, তাহলে দোষী সাব্যস্ত হলে তার পাঁচ বছরের সাজা হতে পারে। তবে সংশ্লিষ্ট মহিলার কোনও শাস্তি হবে না।
ব্যাভিচার এবং অসম্মতিমূলক সমকামি যৌনতা বিষয়ে এই সুপারিশগুলির পাশাপাশি, ভারতের ফৌজদারি আইনের আওতায় থাকা বেশ কয়েকটি আইনের সংশোধের সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। গণধর্ষণের সাজা ২০ বছরের কারাদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড করতে বলা হয়েছে। নাবালিক-নাবালিকাদের হত্যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করতে বলা হয়েছে। নির্বাচনের সময় ভোটারদের ঘুষ দিলে, দোষী ব্যক্তিদের ১২ মাসের কারাদণ্ডের সাজা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া, বিচ্ছিন্নতাবাদ, সশস্ত্র বিদ্রোহ, নাশকতা অথবা সন্ত্রাসবাদ, দেশের সার্বভৌমত্ব এবং ঐক্যকে বিপন্ন করার মতো নতুন অপরাধগুলিকে বিদ্যমান আইনের অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছে।
সূত্রের খবর, কমিটির রিপোর্টের সঙ্গে ভিন্নমতের একটি নোট জমা দিয়েছেন বিরোধী সাংসদরা। তাঁদের অন্যতম কংগ্রেস সাংসদ তথা প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। ব্যাভিচারকে ফের অপরাধ করার সুপারিশের বিষয়ে তিনি বলেছেন, “কোনও দম্পতির ব্যক্তিগত জীবনের পরিসরে রাষ্ট্র প্রবেশ করতে পারে না।” তিনি আরও জানিয়েছেন, এই রিপোর্ট নিয়ে তিনি তিনটি মৌলিক আপত্তি তুলেছেন। তাঁর দাবি, ঔপনিবেশিক আইনকে প্রতিস্থাপন করার জন্য সরকার যে তিনটি বিল এনেছে, সেই তিনটি বিলই আসলে বিদ্যমান আইনের ‘কপি-পেস্ট’।