নয়া দিল্লি: দেশে দ্বৈত মহামারীর আকার নিয়েছে মিউকরমাইকোসিস (Mucormycosis) সংক্রমণ। একাধিক রাজ্যে ছড়িয়েছে ছত্রাকঘটিত এই রোগ। তাই আক্রান্তের সংখ্যার ভিত্তিতে রাজ্যগুলিতে অতিরিক্ত মিউকরমাইকোসিসের ওষুধ পাঠাল কেন্দ্র। ২৩ হাজার ৬৮০ ভায়াল অ্যাম্ফোটারিসিন-বি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির জন্য বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র। আক্রান্তের সংখ্যার ভিত্তিতে ওষুধের এই বরাদ্দ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ওষুধ মন্ত্রী সদানন্দ গোওডা।
করোনা আবহে মিউকরমাইকোসিস রুখতে আগে থেকেই অধিক সক্রিয় কেন্দ্র। একাধিক রাজ্যে মিউকরমাইকোসিস ছড়িয়ে পড়ার পরে কেন্দ্র এই রোগকেও মাহামারী আখ্যা দিয়েছে। মহারাষ্ট্রে মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্তের সংখ্যা ২০০০ ছুঁয়েছে। অন্ধ্র প্রদেশেও মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত হয়েছেন ৯১০ জন, গুজরাটে আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়ে এখন ২,২৮১। মধ্য প্রদেশে আক্রান্ত হয়েছেন ৭২০ জন। কেন্দ্রীয় ওষুধ মন্ত্রীর টুইট অনুযায়ী, বঙ্গে মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত হয়েছেন একজন। তাই অ্যাম্ফোটারিসিন-বি ওষুধের ৫০টি ভায়াল পাচ্ছে বাংলা।
After a detailed review of rising no. of cases of #Mucormycosis in various states, a total of 23680 additional vials of #Amphotericin– B have been allocated to all States/UTs today.
The Allocation has been made based on total no. of patients which is approx. 8848 across country. pic.twitter.com/JPsdEHuz0W
— Sadananda Gowda (@DVSadanandGowda) May 22, 2021
কারা মিউকরমাইকোসিসে দ্রুত আক্রান্ত হতে পারেন?
১. যে সমস্ত রোগীদের দেহে ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত, কিংবা যাঁরা স্টেরয়েড নেন, তাঁদের মিউকরমাইকোসিসের সম্ভাবনা বেশি।
২. যে সকল রোগীর ক্যানসার বা জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী কোনও রোগের চিকিৎসা চলছে, তাঁদের দেহেও মিউকরমাইকোসিস বাসা বাঁধতে পারে।
৩. যে সকল করোনা রোগীর সংক্রমণ অত্যন্ত জটিল স্তরে পৌঁছে গিয়েছে, যাঁরা মাস্ক বা ন্যাজাল ক্যানেলের মাধ্যমে অক্সিজেন সাপোর্ট বা ভেন্টিলেটরে রয়েছেন, তাঁদের দেহেও মিউকরমাইকোসিস সংক্রমণ হতে পারে।
৪. যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে স্টেরয়েড ব্যবহার করছেন, তাঁদেরও মিউকরমাইকোসিস হতে পারে।
এইমসের চিকিৎসকরা এই সংক্রমণ দ্রুত নির্ধারণের জন্য বিভিন্ন চিকিৎসকদের, বিশেষ করে চোখের চিকিৎসকদের নিয়মিত রোগীকে যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছে। করোনা সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরও যাতে নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে চেক আপ করানো হয়, তার পরামর্শ দিয়েছে এইমস।
মিউকরমাইকোসিসের উপসর্গ:
১. নাক থেকে অস্বাভাবিক রকমের কালো তরল বা রক্ত বের হওয়া, কিংবা নাকের উপর কালো শক্ত ভাব।
২. নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, মাথা বা চোখ ব্যাথা, চোখের চারপাশে ফোলা ভাব, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, অস্পষ্ট দেখা বা কিছুই দেখতে না পাওয়া, চোখ খুলতে না পারা।
৩. মুখে অসাড়বোধ বা অদ্ভুত শিরশিরানি অনুভব।
৪. মুখ খুলতে বা খাবার চেবাতে অসুবিধা।
৫. দাঁত পরে যাওয়া, মুখের ভিতর, দাঁতের আশেপাশে ফুলে যাওয়া বা কালো ছোপ সৃষ্টি।
এ ক্ষেত্রে রোগীর নিজেরই প্রতিদিন পরীক্ষা করা উচিত বলে মনে করছেন এইমস-এর চিকিৎসকেরা। দিনের আলোয় মুখের কোথাও ফুলেছে কিনা, বিশেষত নাক, গাল বা চোখের পাশে, কালো দাগের সৃষ্টি, মুখের কোথাও হাত দিলে শক্ত অনুভব বা ব্যথা হলেই চিকিৎসককে জানানো উচিত।
কীভাবে চিকিৎসা হবে মিউকরমাইকোসিসের?
১. যদি উপরোক্ত কোনও উপসর্গ দেখা যায়, তবে সঙ্গে সঙ্গে ইএনটি চিকিৎসক, চোখের চিকিৎসক বা যে চিকিৎসকের অধীনে এতদিন করোনার চিকিৎসা চলেছে, তাঁকে জানানো প্রয়োজন।
২. নিয়মিত চিকিৎসা ও ফলো-আপ রাখা। মধুমেহ অত্যন্ত কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ।
৩. কো-মর্ডিবিটি থাকলে, সেই রোগগুলির জন্য নিয়মিত চিকিৎসা ও ওষুধ সেবন।
৪. চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এমআরআই বা সিটি স্ক্যান।
৮. নিজে থেকে কোনও স্টেরয়েড বা অ্যান্টি বায়োটিক কিংবা অ্যান্টি ফাঙ্গাল ওষুধ সেবন করবেন না।
আরও পড়ুন: ত্রিপুরাতেও হানা মিউকরমাইকোসিসের, আগরতলার হাসপাতালে খোঁজ মিলল প্রথম আক্রান্তের