অসমের মতোই দেশজুড়ে চালু হতে পারে দুই সন্তান নীতি? হলফনামায় সুপ্রিম কোর্টে কী জানাল কেন্দ্র?

জ্যোতির্ময় রায় | Edited By: ঋদ্ধীশ দত্ত

Jun 20, 2021 | 9:25 PM

চলতি বছরেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিজেপি নেতা তথা আইনজীবী অশ্বিনী কুমার উপাধ্যায়। সুপ্রিম কোর্টে তিনি একটি মামলা করেন। যার প্রেক্ষিতে গত ১০ জানুয়ারি কেন্দ্রকে নোটিস দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের মতামত জানতে চায় শীর্ষ আদালত।

অসমের মতোই দেশজুড়ে চালু হতে পারে দুই সন্তান নীতি? হলফনামায় সুপ্রিম কোর্টে কী জানাল কেন্দ্র?
সুপ্রিম কোর্টের কাছে কড়া ভাষায় ধমক খেল উত্তরপ্রদেশ পুলিশ

Follow Us

জ্যোর্তিময় রায়: দেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে দুই সন্তানের নীতি চালু করার নিয়ে দিল্লি হাইকোর্টের একটি নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে চলতি বছরেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিজেপি নেতা তথা আইনজীবী অশ্বিনী কুমার উপাধ্যায়। সুপ্রিম কোর্টে তিনি একটি মামলা করেন। যার প্রেক্ষিতে গত ১০ জানুয়ারি কেন্দ্রকে নোটিস দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের মতামত জানতে চায় শীর্ষ আদালত। তারই জবাবে একটি হলফনামায় কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সরকারের কখনই দেশের নাগরিকদের একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক শিশু জন্ম দিতে বাধ্য করার পক্ষপাতী নয়। ভারতের স্বামী-স্ত্রী নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবেন যে তাঁদের কয়টি সন্তান হবে।

হলফনামায় কেন্দ্র জানিয়েছে, সরকার দেশের জনগণের উপর জোরপূর্বক পরিবার পরিকল্পনা আরোপের বিরোধী। হলফনামায় সরকারের দাবি, নির্দিষ্ট সংখ্যক শিশু জন্ম দেওয়ার যে কোনও বাধ্যবাধকতা থাকলে তা ক্ষতিকারক হবে এবং তা জনসংখ্যার ভারসাম্যে বিকৃত অস্থিরতা সৃষ্টি করবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রক শীর্ষ আদালতে জমা দেওয়া হলফনামায় বলেছে, দেশে পরিবার কল্যাণ কার্যক্রম স্বেচ্ছামূলক, যাতে দম্পতিরা তাঁদের পরিবারের আকার নির্ধারণ নিজেরাই করতে পারে। এবং তাঁরা ইচ্ছা অনুযায়ী পরিবার পরিকল্পনার বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারে।

মামলা চলাকালীন এ দিন বিচারপতি ডিএন প্যাটেল এবং বিচারপতি সি হরিশঙ্করের একটি বেঞ্চ জানায়, এই আবেদনের শুনানি করার কোনও প্রয়োজন নেই। বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, আদালতে কখনই সরকারের কাজ করতে পারে না। আদালত দেশের সংসদ এবং রাজ্য আইনসভাকেও কোনও নির্দেশ দিতে চায় না বলে স্পষ্ট জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৪ সেপ্টেম্বর দিল্লি হাইকোর্টও আইনজীবীর আবেদন খারিজ করে দিয়ে জানায় যে আইন তৈরি করা সংসদ ও রাজ্য আইনসভার কাজ। এটি আদালতের কাজ নয়। দিল্লি হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেই সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন আবেদনকারী। উক্ত আবেদনে বলা হয়েছিল, ভারতের জনসংখ্যা চিনের থেকেও বেশি হয়ে গিয়েছে। ২০ শতাংশ ভারতীয়দের কাছে এখনও আধার কার্ড নেই।

সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া হলফনামায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক বলেছে, জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি রাজ্যের আওতাধীন এবং জনগণকে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা থেকে বাঁচাতে, রাজ্য সরকারকে যথাযথ এবং অবিচ্ছিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতে সংস্কার করতে হবে।

আরও পড়ুন: ১৮ উর্ধ্বদের গণটিকাকরণ সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে না রাজ্যে, কী ব্যাখ্যা স্বাস্থ্যভবনের?

উল্লেখ্য, বিজেপি নেতা তথা আইনজীবী অশ্বিনী কুমার উপাধ্যায় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। তিনি এই বিষয়ে ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত একটি উপস্থাপনাও দেন।

অসম সরকার ইতিমধ্যেই দুই সন্তান নীতি কার্যকর করার পথে এগোচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের প্রকল্পের সুবিধা পেতে হলে দুই সন্তান নীতি মানতে হবে। যদিও, কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও প্রকল্পে এই নীতি লাগু হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। হিমন্তের দাবি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের স্বার্থেই এই নিয়ম চালুর ভাবনা। যদিও কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্প যেমন প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, বা স্কুল, কলেজে বিনামূল্যে ভর্তির মতো সুবিধায় দুই সন্তান নীতি প্রযোজ্য হবে না। এই নিয়মের উদ্দেশ্য, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সাধারণ জনগণের শিক্ষা ও জীবনধারণের জন্য আর্থিক মান উন্নতি করা।

সুস্থ, শিক্ষিত ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানসম্পন্ন বিরাট জনসংখ্যা যেমন কোনও একটি দেশের উন্নতি ও শক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে, তেমনই আবার অশিক্ষিত ও অনিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যা যে কোনও দেশের অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে উঠতে পারে। জন্ম নিয়ন্ত্রণে সরকার বাধা না দিলেও, জনগণের জীবন-জীবিকার মানোন্নয়নের জন্য সরকারি সুবিধা ভোগ করার নিয়মের ক্ষেত্রে অবশ্য নিয়ন্ত্রণ আনতে পারে সরকার।

আরও পড়ুন: ‘পূর্ব পাকিস্তানকেও আলাদা হতে হয়েছিল,’ বার্লার বিতর্কে জল ঢাললেও কীসের ইঙ্গিত দিলীপের?

Next Article