নয়াদিল্লি: এনডিএ জোটে রয়েছে তারা। কেন্দ্রে শাসক জোটের অন্যতম শরিক। সেই নীতীশ কুমারের দল জেডিইউয়ের দাবি খারিজ করল কেন্দ্রীয় সরকার। বিহারকে বিশেষ ক্যাটেগরির মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল জেডিইউ। তা সম্ভব নয় বলে সোমবার সংসদের বাদল অধিবেশনের প্রথম দিনই জানিয়ে দিল কেন্দ্র। এদিন কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরি লিখিত জবাবে জানান, বিহারকে বিশেষ ক্যাটেগরির মর্যাদা দেওয়া সম্ভব নয়। কেন্দ্র তাদের সিদ্ধান্ত জানানোর পরই নীতীশ কুমারকে কটাক্ষ করেছে লালুপ্রসাদ যাদবের দল আরজেডি।
গত ২৯ জুন জেডিইউয়ের জাতীয় কার্যনির্বাহী বৈঠকে বিহারকে বিশেষ ক্যাটেগরির মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে প্রস্তাব পাশ হয়েছিল। রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয়, মোদী সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতেই কি এই প্রস্তাব পাশ করেছে জেডিইউ? কারণ, কেন্দ্রে এনডিএ-র গুরুত্বপূর্ণ শরিক জেডিইউ। নীতীশের দল ও চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপি-র সমর্থনের উপর মোদী সরকারের স্থায়িত্ব নির্ভর করছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্র কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেদিকে তাকিয়ে ছিল রাজনৈতিক মহল।
সোমবার সংসদে জেডিইউ সাংসদ রামপ্রীত মণ্ডল অর্থমন্ত্রকের কাছে জানতে চান, আর্থিক উন্নতি ও শিল্পায়নের জন্য বিহার ও অন্যান্য় পিছিয়ে থাকা রাজ্যগুলিকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া নিয়ে সরকার কি কোনও পরিকল্পনা করেছে? লিখিত জবাবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরি জানান, বিহারকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, “অতীতে কয়েকটি রাজ্যকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার অনুমোদন করেছিল ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল(NDC)। বেশ কয়েকটি দিক বিবেচনা করে এই মর্যাদা দেওয়া হত। পাহাড়ি ও দুর্গম ভূখণ্ড, জনঘনত্ব কম এবং জনজাতির সংখ্যা, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সীমান্ত এলাকা, আর্থিক এবং পরিকাঠামোগত ভাবে পিছিয়ে-এইসব দিক বিবেচনা করে রাজ্যকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হত।” এরপর ২০১২ সালের ইন্টার মিনিস্টেরিয়াল গ্রুপের রিপোর্টের কথা উল্লেখ করেন পঙ্কজ চৌধুরি। তিনি বলেন, ‘বিহারকে বিশেষ ক্যাটেগরির মর্যাদা দেওয়ার দাবি নিয়ে ২০১২ সালের ৩০ মার্চ রিপোর্ট জমা দিয়েছিলেন ইন্টার মিনিস্টেরিয়াল গ্রুপ। সেইসময় তারা জানিয়েছিল, যেসব যোগ্যতার নিরিখে বিশেষ ক্যাটেগরির মর্যাদা দেওয়া যায়, সেসব বিবেচনা করে বিহারকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া সম্ভব নয়।’
কেন্দ্রীয় সরকার জেডিইউয়ের দাবি খারিজ করার পরই সরব হয়েছে লালুপ্রসাদ যাদবের দল আরজেডি। নীতীশ কুমারকে কটাক্ষ করে এক্স হ্যান্ডলে আরজেডির তরফে বলা হয়, ‘কেন্দ্রে ক্ষমতার ফল উপভোগ করুন নীতীশ কুমার এবং জেডিইউ নেতারা। আর রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা নিয়ে তাঁদের নাটক জারি রাখুক।’
সংবিধানে কোনও রাজ্যকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু, ১৯৬৯ সালে পঞ্চম অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনে বিশেষ ক্যাটেগরির মর্যাদা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৯৬৯ সালে NDC-র বৈঠকে ডিআর গড়গিল কমিটি রাজ্যগুলিকে কেন্দ্রীয় সাহায্য নিয়ে একটি ফর্মুলার প্রস্তাব রাখেন। তার আগে পর্যন্ত স্কিম অনুসারে রাজ্যগুলিকে সাহায্য করত কেন্দ্র। ১৯৬৯ সালে গড়গিল ফর্মুলা অনুমোদন করে এনডিসি। এবং কয়েকটি রাজ্যকে বিশেষ ক্যাটেগরির মর্যাদা দেওয়া হয়। অসম, জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের মতো রাজ্যগুলি বিশেষ ক্যাটেগরির মর্যাদা পায়। বিশেষ ক্যাটেগরির মর্যাদা পাওয়া রাজ্যগুলি কেন্দ্রের কাছ থেকে নানা আর্থিক সুবিধা পায়। কর ছাড় পায়।
দীর্ঘদিন ধরেই বিহারকে বিশেষ ক্যাটেগরির মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে সরব জেডিইউ। বিহারে বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে এখন তারা ক্ষমতায় রয়েছে। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে বিহারের ৪০ টি আসনের মধ্যে জেডিইউ পেয়েছে ১২টি আসন। বিজেপি জিতেছে ১২টি আসনে। অন্যদিকে আরজেডি পেয়েছে ৪টি আসন। কংগ্রেস ৩টি আসনে জিতেছে। গত ৮ জুন নরেন্দ্র মোদী তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছেন। জেডিইউ নেতৃত্ব তারপর থেকেই বিহারকে বিশেষ ক্যাটেগরির মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে জোরদার সওয়াল শুরু করেন। এমনকি, গত ২৯ জুন দলের জাতীয় কার্যনির্বাহী বৈঠকেও এই নিয়ে একটি প্রস্তাব পাশ করে।
সরকারি সূত্র বলছে, ২০১৪-১৫ আর্থিক বছর পর্যন্ত ১১টি রাজ্য বিশেষ ক্যাটেগরির মর্যাদা পেয়েছে। তারা নানা সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু, ২০১৪ সালে প্ল্যানিং কমিশন বিলোপ করে নীতি আয়োগ গঠনের পর গড়গিল ফর্মুলা মেনে বরাদ্দ বন্ধ করা হয়। তার জায়গায় সব রাজ্যের বরাদ্দ বাড়ানো হয়। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে আর কোনও রাজ্যকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে না। কারণ, সংবিধান এই বিশেষ মর্যাদা অনুমোদন করে না।