নয়া দিল্লি: রাজনীতি থেকে রাহুল গান্ধীর ‘পলায়ন’ নিয়ে মাঝেমধ্যেই দিল্লির অন্দরমহল জলঘোলা হয়েছিল। কয়েকবছর আগেই গণিতজ্ঞ এবং জীববিদ ডাব্লুইডি হ্যামিলটন জানিয়েছিলেন, বেশিরভাগ প্রাণীই নিজের নিরাপত্তা এবং স্বার্থের জন্য কোনও বড় গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে থেকে যেতে চায়। ভেড়া, পেঙ্গুইনের মতো প্রাণীদের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম প্রযোজ্য। ইতিমধ্যেই ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় কংগ্রেসের অন্তর্বর্তীকালীন সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী এবং কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীকে বেআইনি অর্থ লেনদেন মামলায় তলব করেছে ইডি। আগামী 13 জুন ইডি দফতরে রাহুলের হাজিরা দেওয়ার কথা।
ইডি তলব নিয়ে ঐক্যবদ্ধ কংগ্রেস
সনিয়া রাহুলকে ইডির তলবকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলেই মনে করছে কংগ্রেস। সেই কারণে সেদিনই রাহুলের ইডি তলবের প্রতিবাদে দলীয় সদর দফতর থেকে ইডি দফতর অবধি মিছিলের পরিকল্পনা করছে শতাব্দীপ্রাচীন দল। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে লোকসভা ও রাজ্যসভা সাংসদদেরও মিছিলে হাঁটার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিনের মিছিলে খোদ রাহুল গান্ধীও উপস্থিত থাকবেন। কংগ্রেসের কাছে প্রাক্তন দলীয় সভাপতিকে নিরাপত্তা দেওয়ার মতো সাংসদ সংখ্যা আছে কি না, তা অন্য বিতর্ক। কিন্তু সংহতি প্রদর্শনের জন্য দলের সাংসদদের সেখানে উপস্থিত করা দলের কাছে বুমেরাং হতে পারে।
সংহতি যাত্রার কারণ
প্রত্যেক গান্ধী মহাত্মা নয় এবং সব মিছিল কোনওভাবেই সত্যাগ্রহ নয়। জন বিক্ষোভে দলীয় সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি কংগ্রেসের অতীতে রয়েছে, তবে চম্পারণ এবং ডান্ডি মার্চের মতো আন্দোলনের জনগণ স্বতস্ফূর্তভাবেই অংশ নিয়েছিল। বেআইনি আর্থিক লেনদেনের মতো অভিযোগ ওঠা এক নেতা যখন জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে চলেছেন, সেই সময় তাঁর হয়ে দলীয় কর্মী সমর্থকদের পথে নামানো নিতান্তই অর্বাচীনের মতো কাজ। ১৯৭৭ সালে ইন্দিরা গান্ধীকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সেই সময়ে মানুষ রাস্তায় নেমে সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছিল এবং সরকার নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছিল। যদি ধরেও নেওয়া যায় রাহুলের ক্ষেত্রে কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা স্বেচ্ছায় পথে নামতে চাইছেন, কিন্তু নির্বাচিত সাংসদদরে পথে নামতে বাধ্য করা নিতান্তই অনুচিত।
এখানেও কি ফ্যাক্টর মোদী মডেল?
মহাত্মা গান্ধী যখন আন্দোলনে দিয়ে ব্রিটিশ সরকারকে পা ধরতে বাধ্য করেছিলেন, সেই সময় রাহুল গান্ধী তাঁকে সামনে থেকে দেখেননি। ইন্দিরা গান্ধী যেভাবে জনগণের ক্ষোভকে সমর্থন হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন, সেই সময়ও রাহুল গান্ধী হয়ত বয়সে অনেকটাই ছোট ছিলেন। তবে গুজরাট দাঙ্গার সময় নরেন্দ্র মোদী যেমন অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছিলেন, তা রাহুল হয়তো প্রত্যক্ষ করেছিলেন। ২০১০ সালে মোদীকে যখন সিটের সামনে হাজিরা দিতে বলা হয়েছিল, তিনি সেখানে একাই গিয়েছিলেন। চাইলে তিনি এত সংখ্যক মানুষ সেখানে নিয়ে যেতে পারতেন যা হয়তো কংগ্রে্স কল্পনাও করতে পারে না। সিট দফতরের বাইরে দাঁড়িয়ে মোদী সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, “কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। নাগরিক ও একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আমি ভারতীয় সংবিধান ও আইনের প্রতি দায়বদ্ধ।”