নয়া দিল্লি: রাত পোহালেই কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচন। জল্পনা, বিতর্কের শেষ ছিল না নির্বাচন ঘিরে। আদৌই এই নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়েই সংশয়ে ছিলেন কংগ্রেসের নেতা-দলীয় কর্মীরা। তবে যাবতীয় জল্পনার অবসান ঘটিয়ে অগস্ট মাসের শেষ ভাগেই কংগ্রেসের জাতীয় সভাপতি নির্বাচনের কথা ঘোষণা করা হয়। আরও বড় চমক দিয়ে ঘোষণা করা হয়, এবারের সভাপতি নির্বাচনে অংশ নেবেন না গান্ধী পরিবারের সদস্যরা। কয়েক দশক ধরে গান্ধী পরিবারের হাতেই দলের চালকশক্তি থাকলেও, সভাপতি নির্বাচনে অংশ নিতে নারাজ সনিয়া গান্ধী থেকে শুরু করে রাহুল গান্ধী। ফলে এবারের সভাপতি নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে দেখা গিয়েছে অ-গান্ধী মুখই। মল্লিকার্জুন খাড়্গে নাকি শশী থারুর- কংগ্রেসের পরবর্তী সভাপতি কে হবেন, তাই-ই এখন দেখার।
২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর হারের যাবতীয় দায়ভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে কংগ্রেসের জাতীয় সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। বহু অনুরোধ সত্ত্বেও তিনি আর দায়িত্ব নিতে রাজি হননি। এরপর থেকেই দলের অন্তর্বতীকালীন সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন সনিয়া গান্ধী। এদিকে, বছরের পর বছর কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচন না হওয়ায় ক্ষোভ জমছিল একাধিক শীর্ষ নেতাদের মনে। দলের অন্দরে গণতন্ত্র নেই, এই অভিযোগ করেই জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, আর পি সিং সহ একাধিক কংগ্রেস নেতারা দল ছেড়েছেন। ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের সময় নরেন্দ্র মোদীও বলেছিলেন, কংগ্রেস আসলে “মা-বেটে কি সরকার”। এই অপবাদ, দুর্নাম ঘোচাতেই অবশেষে কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচন হতে চলেছে আগামিকাল, ১৭ অক্টোবর। ভোট গণনা হবে আগামী ১৯ অক্টোবর।
দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেভাবে নির্বাচন হয়, কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনও সেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অনুকরণেই হবে। প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা থেকে নির্বাচনী প্রচার, নির্বাচনের যাবতীয় প্রক্রিয়াই সাঙ্গ হয়েছে। এবার বাকি শুধু ভোট গ্রহণ ও গণনা। কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কর্তৃপক্ষের সভাপতি মধুসূদন মিস্ত্রি জানিয়েছেন, গোপন ব্যালটে সভাপতি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে। দেশজুড়ে মোট ৩৬টি নির্বাচনী কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন রাজ্য মিলিয়ে। রয়েছে মোট ৬৭টি বুথ। এছাড়াও নয়া দিল্লিতে সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটি বা এআইসিসি সদর দফতরেও একটি বুথ থাকবে। দিল্লিতে মোট দুই জায়গায় ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। দলের সমস্ত শীর্ষ নেতা, কার্যকরী কমিটির সদস্যরা এই বুথে মতদান করবেন। এছাড়া, যেসব নেতারা ভিন রাজ্যের বাসিন্দা হলেও কর্মসূত্রে দিল্লিতে বসবাস করেন, তারাও কংগ্রেসের সদর দফতরে এসে ভোট দিতে পারবেন।
এদিকে,সভাপতি নির্বাচনের মাঝেই দেশজুড়ে ভারত জোড়া যাত্রা করছে কংগ্রেস। রাহুল গান্ধীই এই কর্মসূচির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বিভিন্ন রাজ্যের কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারাও পা মেলাচ্ছেন এই কর্মসূচিতে। তবে যারা ভারত জোড়ো যাত্রায় অংশ নিয়েছেন, তারাও যাতে সভাপতি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন, তার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, ৪৭ জন নেতা ভারত জোড়ো যাত্রার মাঝেই ভোট দেবেন। মোট প্রায় ৯ হাজার কংগ্রেস সদস্য়, যারা দলের ইলেক্টোরাল প্রতিনিধি, তারা ভোট দিয়ে পরবর্তী সভাপতি বেছে নেবেন।