নয়া দিল্লি: সমকামী বিবাহের আইনি অনুমোদনের আবেদনে যে প্রশ্নগুলি তোলা হয়েছে, সেগুলি সংসদকেই বিবেচনা করার জন্য ছেড়ে দেওয়া হোক। বুধবার সুপ্রিম কোর্টকে অনুরোধ করল কেন্দ্র। এদিন কেন্দ্রের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আদালতে জানান, শীর্ষ আদালত এক অত্যন্ত জটিল বিষয় নিয়ে কাজ করছে। এর গভীর সামাজিক প্রভাব রয়েছে। তুষার মেহতা বলেন, “আসল প্রশ্ন হল বিয়ে কী এবং কাদের মধ্যে তা হবে এই নিয়ে কে সিদ্ধান্ত নেবে।” তিনি আরও জানান, এই বিষয়ে সমাজে এবং বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভাগুলিতে বিতর্কের প্রয়োজন। এই মামলার শুনানির শুরুতেই শীর্ষ আদালতকে কেন্দ্র বলেছিল, আদৌ আদালতের এই মামলা শোনার অধিকার আছে কি না, সেটা বিবেচনা করা প্রয়োজন।
মঙ্গলবার এই মামলার আবেদনকারীরা সুপ্রিম কোর্টকে সমকামী বিবাহের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার অনুরোধ জানান। তাঁরা বলেন, সমকামী বিবাহকে আইনি অনুমোদন না দেওয়া, যৌন পছন্দের ভিত্তিতে কোনও ব্যক্তির সঙ্গে বৈষম্য করা। এতে পরিস্থিতি ‘গে ব্রেন-ড্রেন’-এর দিকে যেতে পারে। সমকামী আইনজীবী সৌরভ কৃপাল বলেন, বিবাহ এবং অন্যান্য সুবিধা পেতে এই ধরনের ব্যক্তিরা অন্য দেশে চলে যেতে বাধ্য হবেন। সৌরভ কৃপাল আরও জানান, এসজিবিটিকিউআইএ প্লাস অর্থাৎ, লেসবিয়ান, গে, উভকামী, ট্রান্সজেন্ডার, কুয়্যার, ইন্টারসেক্স, আসেক্সুয়ালরা এই মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হলে দেশের জিডিপিও সাত শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। তিনি বলেন, “এমন কোনও পরিস্থিতি হতে পারে না, যেখানে আদালত বলবে যে তারা সবকিছু দিতে পারে না, তাই আদালত কিছুই দেবে না।”
সৌরভ কৃপাল আরও বলেন, যে সমকামী বিবাহকে স্বীকৃতি না দেওয়ার ফলে পরিস্থিতির এমন দিকে যাবে, যেখানে সমকামী বা উভকামীরা অনিচ্ছার সঙ্গে কোনও অকার্যকর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে বাধ্য হবেন। এই বিষয়টি সংসদের বিবেচনার জন্য ছাড়ারও তিনি বিরোধিতা করেন। তিনি জানান, এলজিবিটিকিউআইএ প্লাস সম্প্রদায়কে সংসদের ‘দয়ায়’ ছেড়ে দেওয়া যাবে না। কারণ সংসদ ‘দীর্ঘ ৭৫ বছর ধরে তাদের হতাশ করেছে’। আবেদনকারীরা আরও জানিয়েছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন-সহ জি২০-র সদস্য দেশগুলির মধ্যেও ১২টি দেশ সমকামী বিবাহের অনুমতি দিয়েছে। বিশ্বের ৩৪টি দেশ এই পথে হেঁটেছে। ভারত এই ক্ষেত্রে ‘পিছিয়ে’ রয়েছে।
গত পাঁচদিন ধরেই এই মামলার শুনানি চলছে। এখনও এই বিষয়ে কোনও নিষ্পত্তির চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না। বৃহস্পতিবারও এই মামলার শুনানি চলবে। শুনানি চলাকালীন মূল প্রশ্নটির পাশাপাশি আরও বেশ কিছু আনুষঙ্গিক আইনি প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে সাংবিধানিক বেঞ্চ। সমকামী দম্পতিদের সন্তান দত্তক নেওয়া, তাদের উত্তরাধিকার, পেনশন এবং গ্র্যাচুইটির মতো সুবিধা কারা পাবেন, কীভাবে তা দেওয়া হবে, এই সকল বিষয়ই বিবেচনায় এসেছে।