নয়া দিল্লি: ভারতে অনুমোদন পেয়েছে কোভিশিল্ড ও কোভ্যাকসিন (Covaxin and Covishield)। হলফ করে বলা যায়, এখন দেশবাসীর মধ্যে সবচেয়ে চর্চিত বিষয় এই দুই প্রতিষেধক। তবে অনুমোদন পেলেও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। চূড়ান্ত পর্বের ট্রায়ালের আগেই কেন ভ্যাকসিনে আপদকালীন অনুমোদন? এই প্রশ্নটাই করেছে কংগ্রেস। কেউ কেউ আবার এক ধাপ এগিয়ে কেন্দ্রকে কটাক্ষ করে প্রশ্ন করেছেন, স্রেফ ‘আত্মনির্ভর ভারত’ প্রমাণটাই উদ্দেশ্য নয় তো!
তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাফ কথা, লঙ্ঘিত হয়নি কোনও প্রোটোকল। উল্টে তাঁর দাবি যে কোভ্যাকসিনকে নিয়ে এত কথা, সেটা দিয়েই নাকি রোখা যাবে করোনার নতুন রূপ। তবে বিতর্ক যাই হোক মঙ্গলবার দুই ভ্যাকসিন নির্মাতা সংস্থার প্রধান পুনাওয়ালা ও কৃষ্ণ এল্লা জানিয়ে দিয়েছেন টিকাকরণের জন্য দু’জন একসঙ্গে কাজ করবেন।
কিন্তু পিছনে হাঁটলে বোঝা যাবে ভ্যাকসিনের তরজা শুধু শাসক-বিরোধী গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। দুই ভ্যাকসিন নির্মাতা সংস্থার প্রধানও কার্যত কাদা ছোড়াছুড়ি করে ফেলেছেন একে অন্যের দিকে। অবশ্য প্রত্যেক ক্ষেত্রেই নাম উহ্য রেখেছেন দু’জনেই। কোভ্যাকসিনকে নিয়ে বিরোধীরা যখন ক্রমাগত জলঘোলা করছে, তখনই ‘টিকা’-টিপ্পনির সূচনা। এই বিতন্ডায় প্রোটাগোনিস্ট দু’জন। প্রথম জন অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন নির্মাতা সংস্থা সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার সিইও আদর পুনাওয়ালা। অন্য জন কোভ্যাকসিন নির্মাতা ভারত বায়োটেকের কর্ণধার কৃষ্ণ এম এল্লা।
আরও পড়ুন: জিজ্ঞাসা: ট্রায়াল আগেই অনুমোদন কোভ্যাকসিনকে! জেনে নিন সব ভ্যাকসিনের সর্বশেষ পরিস্থিতি
কোভ্যাকসিন নিয়ে যখন চরমে জল্পনা, তখনই কার্যত কটাক্ষের সুরে সেরাম কর্তা পুনাওয়ালা বলেছিলেন, “কার্যকরিতা প্রমাণ হয়েছে শুধু তিনটি প্রতিষেধকের- ফাইজ়ার ও বায়োএনটেক, মডার্না ও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার। বাকি সব জলের মতো নিরাপদ।” অর্থাৎ সেরাম কর্তার দাবি, ভারত বায়োটেকের কোভ্যাকসিনের কার্যকরিতা প্রমাণ হয়নি।
এবার যদি ডিসিজিআইয়ের অনুমোদন দেখা হয়, সেখানে দেখা যাবে ডিসিজিআই জানিয়েছেন, কোভিশিল্ড ও কোভ্যাকসিন দু’টোই ১১০ শতাংশ নিরাপদ। তবে ৭০.৪২ শতাংশ কার্যকরিতার তথ্য কোভিশিল্ডের কাছে থাকলেও কোভ্যাকসিনের পাশে নেই কোনও কার্যকরিতার শতাংশ। তবে এটাও উল্লেখ্য যে কোভ্যাকসিন অনুমোদন পেয়েছে ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল মোডে।’ অর্থাৎ যাঁরা কোভ্যাকসিন পাবেন তাঁদের ট্রায়ালের অংশ হিসাবেই ধরা হবে।
তবে পরোক্ষভাবে কোভ্যাকসিনের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো অকার্যকরিতার মন্তব্যর পাল্টা দিতেও ছাড়েননি ভারত বায়োটেকের কর্ণধার কৃষ্ণ এম এল্লা। তিনিও সুর চড়িয়ে বলেন, “একটি সংস্থা আমাদের প্রতিষেধককে জলের সঙ্গে তুলনা করেছে। এতে আমি আঘাত পেয়েছি। তবে আমাদের প্রতিষেধকে যখন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার ১০ শতাংশ তখন অক্সফোর্ডের টিকায় তা ৬০ শতাংশ।” অর্থাৎ একজন কার্যকরিতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে অপর পক্ষের হাতিয়ার নিরাপত্তা।
আরও পড়ুন: জিজ্ঞাসা: করোনার ভ্যাকসিন কীভাবে পাবেন? জেনে নিন, রেজিস্ট্রেশন থেকে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া
ঘটনায় আরও একটু নাটকীয় মোড় যোগ করেছে কোভিশিল্ড বিশেষজ্ঞ-অনুমোদন পাওয়ার সময় বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ সুব্রহ্মণ্যন স্বামীর টুইট। সেখানে আবার ভ্যাকসিনের সঙ্গে জাতীয়তাবাদের প্রসঙ্গ। তাঁর বক্তব্য, ইংরেজদের প্রতিষেধক অর্থাৎ কোভিশিল্ড ভারতে পরীক্ষিত হয়েছে মাত্র ১২০০ জনের উপর কিন্তু কোভ্যাকসিন পরীক্ষা হয়েছে ১২ হাজার জনের উপর। তাহলে কেন ভারত বায়োটেক অনুমোদন পেল না। যদিও ডিসিজিআইর অনুমোদন দেওয়ার পর আর তাঁর এই দাবি খাটে না।
তবে কোভ্যাকসিনকে নিয়ে বিতর্ক যে সম্পূর্ণ কেটেছে তা বলা যায় না। কারণ আপদকালীন অবস্থায় ছাড়পত্র দেওয়া গেলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, কোভ্যাকসিন করোনার নতুন রূপকে রুখতে পারবে। কিন্তু স্বয়ং ভারত বায়োটেক প্রধানের বক্তব্য, কোভ্যাকসিন যে নতুন রূপ রুখতে পারবে সে বিষয়ে এখনই তাঁদের কাছে কোনও তথ্য নেই। তাহলে কীসের ভিত্তিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই দাবি করলেন! এই প্রশ্নও উঠছে। পাশাপাশি এ-ও অভিযোগ, সরকারের বাড়তি সুবিধা পেয়েছে ভারত বায়োটেক। তবে এখানেও এল্লার সাফ কথা, “আমার পরিবারের কারোর সঙ্গে শাসক দলের সংযোগ নেই।”
আরও পড়ুন: অনুমোদনের ১০ দিনের মধ্যেই টিকাকরণ শুরু করতে প্রস্তুত দেশ!
তবে ‘টিকা’-টিপ্পনি যাই হোক, অবশেষে দুই ভ্যাকসিন হাবের প্রধান একে অপরের হাত ধরেছেন। যৌথ বিবৃতি দিয়ে দু’জনে জানিয়েছেন, টিকাকরণের কাজ করবেন একসঙ্গে। শপথ নিয়েছেন, ভারত তো বটেই সারা বিশ্ববাসীর প্রাণ বাঁচাতে টিকা পৌঁছে দেবেন তারা। অর্থাৎ বাক্য-যুদ্ধ যাই হোক না কেন শেষটা ভাল, অর্থাৎ সব ভাল।