বছরের শেষভাগে এসে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল করোনার নয়া আতঙ্ক। একমাসেই বিশ্বের ১১৭টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট। দেশে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১ হাজারের গণ্ডি পার করেছে। দিল্লি, মুম্বইয়ের মতো বড় শহরগুলিতে শুরু হয়ে গিয়েছে গোষ্ঠী সংক্রমণ। করোনা ও ওমিক্রন সংক্রান্ত যাবতীয় আপডেট দেখে নিন একনজরে-
বর্ষবরণের রাতে দেশের একাধিক প্রান্তে লম্বা লাফ দিয়েছে করোনাগ্রাফ। বেশ কিছু রাজ্যে হু হু করে বেড়েছে সংক্রমণ। শুক্রবারের রাজ্যওয়াড়ি করোনা বুলেটিন অনুযায়ী –
মহারাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৮,০৬৭ জন
পশ্চিমবঙ্গে আক্রান্তের সংখ্যা ৩,৪৫১ জন
রাজধানী দিল্লিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১,৭৯৬ জন
গুজরাটে শুক্রবার করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে আরও ১৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এই নিয়ে গুজরাটে ওমিক্রনে আক্রান্তের মোট সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১১৩। এর পাশাপাশি শুক্রবার ১০ জন ওমিক্রন-সংক্রমিত রোগী সুস্থও হয়ে উঠেছেন। আজ যে ১৬ জন ওমিক্রন আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে, তাঁদের মধ্যে, আহমেদাবাদের ৬ জন, সুরাট এবং আনন্দে ৩ জন করে এবং জুনাগড়, আমরেলি, ভারুচ এবং বনাসকাঁথা থেকে এক জন করে ওমিক্রন আক্রান্ত রয়েছেন।
যে কোনও মুহূর্তে করোনার তৃতীয় ঢেউ (Third wave of COVID 19) আছড়ে পড়তে পারে দেশে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ। পরিস্থিতির উপর প্রতিনিয়ত নজর রাখে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক (Union Health Ministry) এবং রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরগুলি। তবে ওমিক্রনই (Omicron Variant) শেষ নয়। করোনা অতিমারির আরও অনেক ঢেউ আসবে আগামীদিনে। এমনটাই মনে করছেন ভারতের অন্যতম বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট চিকিৎসক গগনদীপ কাং। তাঁর মতে, যেহেতু করোনাটি একটি শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস তাই এই ধরনের ভাইরাসগুলি বার বার একটি নির্দিষ্ট সময়ে ফিরে আসার প্রবণতা রয়েছে।
মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্য দফতর থেকে জানানো হয়েছে, শুক্রবার আরও চারজন সেখানে ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তরা ভাসাই-ভিরার, নভি মুম্বই, মীরা ভায়ানডার এবং পানভেলের বাসিন্দা। এই নিয়ে মহারাষ্ট্রে মোট ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হল ৪৫৪।
মহারাষ্ট্রের করোনা পরিস্থিতি ক্রমেই উদ্বেগজনক রূপ নিচ্ছে। শুক্রবার সে রাজ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৮,০৬৭ জন। বৃহস্পতিবারের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। শেষ ২৪ ঘণ্টায় মহারাষ্ট্রে করোনায় প্রাণ হারিয়েছে আট জন।
জ্বর জ্বর মনে হচ্ছে? গলা ব্যাথা করছে? দেরি না করে এখনই কোভিড টেস্ট করান। এমনটাই বলছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। কেন্দ্রের তরফে প্রতিটি রাজ্যকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, নাগরিকদের কারও জ্বর, মাথাব্যথা, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, শরীরে ব্যথার অনুভূতি, স্বাদ বা গন্ধ না পাওয়া, ক্লান্তি এবং ডায়রিয়া – এই সব উপসর্গ যদি দেখা যায়, তবে তাদের কোভিডের সন্দেহভাজন রোগী হিসাবে বিবেচনা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই তাঁদের করোনা পরীক্ষা করা উচিত। দেশজুড়ে তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কার মধ্য়েই শুক্রবার রাজ্যগুলিকে এই মর্মে চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্র।
কলকাতার দৈনিক সংক্রমণ দুই হাজার ছুঁই ছুঁই। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত সর্বেশেষ বুলেটিন অনুযায়ী, কলকাতায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৯৫৪ জন। শহর কলকাতার পরিস্থিতি ভীষণই উদ্বেগজনক। এই পরিস্থিতিতে ১০ টি ওয়ার্ডকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ১০ টি কোভিড হটস্পটের মধ্যে রয়েছে কলকাতা পুরনিগমের ২৬, ৩১, ৬৩, ৬৫, ৬৯, ৭১. ৭৪, ৮১, ৯৪ এবং ১০৯ নম্বর ওয়ার্ড।
৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে ছোটদের করোনা টিকা দেওয়ার প্রক্রিয়া। আর এরই মধ্যে টিকাকরণের নতুন লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে ফেলেছে অসম সরকার। প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে অসমের সমস্ত ১৫-১৮ বছর বয়সি কিশোর কিশোরীদের কোভ্যাক্সিনের প্রথম ডোজ় দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে নিয়েছে তারা। অসমের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেশব মহন্ত শুক্রবার এমনটাই জানিয়েছেন।
এবার কড়াকড়ি সিকিমেও। পাব, ডিস্কো, সিনেমা হল, রেস্তরাঁ, ফাস্ট ফুড সেন্টার, বেকারি, জিম, স্পা এবং স্যাঁলোগুলিতে বসার জায়গা ৫০ শতাংশই ব্যবহার করা যাবে। ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত জারি থাকবে এই কড়াকড়ি।
ইজরায়েলে শুরু করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ় দেওয়ার প্রক্রিয়া। ভাইরাস থেকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ নাগরিকদের জন্য চতুর্থ ডোজ দেওয়া করা শুরু করেছে ইজরায়েল প্রশাসন। শুক্রবার সে দেশের হার্ট ও ফুসফুস প্রতিস্থাপন হয়েছে এমন রোগীদের চতুর্থ ডোজ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জেও খোঁজ মিলল দুই ওমিক্রন আক্রান্তের। ওই দুই ব্যক্তি সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরেছিলেন।
ওমিক্রন পরিস্থিতি মোকাবিলায় টেলিকনসাল্টেশন পরিষেবার উপর আরও জোর দেওয়ার কথা বলেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথন। তাঁর মতে, “হয়তো, এই সময়টি সত্যিই টেলিহেলথ এবং টেলিমেডিসিন পরিষেবাগুলিকে বাড়িয়ে তোলার সময় এসেছে।” বহির্বিভাগের জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্সদের প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। যতটা সম্ভব বাড়িতে থেকে বা প্রাথমিকভাবে কোনও কোয়ারান্টিন সেন্টারগুলিতে চিকিৎসা করা যেতে পারে, তার দিকে জোর দিতে বলা হয়েছে। এরপরও যদি আরও উন্নত পরিষেবার প্রয়োজন হয় তাহলে হাসপাতালে ভর্তির কথা বলা হয়েছে।
সৌম্যা স্বামীনাথনের মতে, “এই ওমিক্রন প্রাদুর্ভাবের কারণে স্বাস্থ্য পরিষেবার উপর পুরো চাপটা পড়বে বহির্বিভাগ এবং হোম আইসোলেশনে থাকা রোগীদের নিয়ে। আইসিইউতে ভর্তি রোগীদের চাপটা অনেকটা কম পড়বে স্বাস্থ্য পরিষেবার উপর।”
কলকাতাতে ইতিমধ্যেই হাজার ছাড়িয়ে আক্রান্ত। ঠিক তার পরেই রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৩১৫ জন আক্রান্তের খবর মিলেছে। এর আগে এই সংখ্যাটা ঘোরাফেরা করত ৫০ থেকে ৬০জনের মধ্যে। এই পরিস্থিতিতে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নৈহাটি স্টেডিয়াম। বন্ধ হয়েছে আইলিগ। সেখানে খোলা হয়েছে সেফ হোম। আজ প্রস্তুতি দেখতে উপস্থিত হন জেলাশাসক নিজেই।
বিস্তারিত পড়ুন: Naihati Stadium: খেল দেখাচ্ছে করোনা, নৈহাটি স্টেডিয়ামে এবার ফুটবলের বদলে সেফ হোম!
দেশে ফের ওমিক্রন আক্রান্তের মৃত্যু। রাজস্থানের উদয়পুরে এক বৃদ্ধ শুক্রবার মারা গিয়েছেন। তিনি হাইপারটেনশন এবং ডায়াবেটিস সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছিলেন। ২১ ডিসেম্বর তাঁর করোনা পরীক্ষা করানো হলে তাঁর রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছিল। কিন্তু ১৫ ডিসেম্বর তাঁর জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের রিপোর্টে ওমিক্রন ধরা পড়েছিল।
সংবাদ সংস্থা এএনআইকে উদয়পুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক চিকিৎসক দীনেশ খারারি জানিয়েছেন, “৭৩ বছর বয়সি এক বৃদ্ধ ১৫ ডিসেম্বর ওমিক্রন পজিটিভি ধরা পড়েন। আজ তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু আক্রান্ত হওয়ার পর দুই বার তাঁর করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছিল এবং দুই বারই রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছিল। তাই এটিকে করোনায় মৃত্যু বলা যায় না। এটি করোনা পরবর্তী মৃত্যু।”
ভারতে ফের একবার ঊর্ধ্বমুখী করোনা গ্রাফ। পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এক সূত্র শুক্রবার জানিয়েছে, ওমিক্রন ইতিমধ্যেই ভারতে ‘ডমিনেন্ট’ ভ্যারিয়েন্ট হিসেবে উঠে আসতে শুরু করেছে এবং পূর্ববর্তী ডেল্টা স্ট্রেনকে সরিয়ে দিচ্ছে সেই জায়গা থেকে। সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। উল্লেখ্য ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এখনও বেশিরভাগ দেশে সবচেয়ে ডমিনেন্ট স্ট্রেন হিসেবে রয়েছে। কিন্তু ওমিক্রন খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে এবং অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রিটেনে ডমিনেন্ট স্ট্রেন হিসেবে উঠে এসেছে। এমনকী ভারতেও ডেল্টাকে সরিয়ে ওমিক্রনের উপরে উঠে আসার সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।
চলতি বছরের ডিসেম্বরে এখনও পর্যন্ত দিল্লিতে করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন নয় জন। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, গত চার মাসে রাজধানীতে করোনা ভাইরাসের কারণে মৃত্যুতে সর্বোচ্চ পরিসংখ্যান এটাই। এর আগে নভেম্বরে ও অক্টোবরে চার জন করে এবং সেপ্টেম্বরে পাঁচ জন মারা গিয়েছিলেন৷
কেরলেয আরও ৪৪ জনের শরীরে ওমিক্রনের খোঁজ মিলেছে। এই নিয়ে সেই রাজ্যে করোনার নতুন ভ্য়ারিয়েন্টে আক্রান্তের মোট সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১০৭। শুক্রবার এমনটাই জানিয়েছেন কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীনা জর্জ
বাড়ছে করোনা। এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে সফর এবং রাষ্ট্রপতি ভবনের মিউজ়িয়ামের সফর সাধারণের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হল। রাষ্ট্রপতি ভবনের থেকে এক নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশিকা জারি না হওয়া পর্যন্ত সাধারণের জন্য এগুলি বন্ধ থাকবে।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকে সরিয়ে ফ্রান্সে এখন করোনার মূল ভ্যারিয়েন্ট হয়ে উঠে এসেছে ওমিক্রন। বিগত কয়েকদিনে ফ্রান্সে সংক্রমণের গ্রাফ হু হু করে বেড়েছে। সাম্প্রতিক এক সাপ্তাহিক পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এই সপ্তাহের শুরুতে ৬২.৪ শতাংশের নমুনায় ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের খোঁজ মিলেছে সে দেশে। আগের সপ্তাহে এই হিসেব ছিল ১৫ শতাংশ।
ওমিক্রন পরিস্থিতির মধ্যে আরও সতর্ক মুম্বই পুলিশ। সংক্রমণ ঢেকাতে আরও কড়াকড়ি জারি করা হয়েছে। মুম্বইয়ে করোনার সংক্রমণ লাগামছাড়াভাবে বাড়তে থাকায় ১৫ জানুয়ারী পর্যন্ত বিকেল ৫টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত শহরের কোনও সমুদ্র সৈকত, খোলা মাঠ, সমুদ্রের ধারে, পার্ক এবং অন্যান্য সমজাতীয় জায়গাগুলিতে আমজনতার যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
বিহারে ইতিমধ্যেই ঢুকে পড়েছে ওমিক্রনের সংক্রমণ। এই পরিস্থিতি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার রাজ্যবাসীকে জনগণকে আরও সজাগ থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। পটনার কিদওয়াইপুরিতে ২৬ বছর বয়সি এক যুবকের নমুনা পরীক্ষা করে ওমিক্রন স্ট্রেনের সন্ধান মিলেছে। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় কোভিড পর্যালোচনা বৈঠকে বসবেন নীতীশ কুমার।
কোভিডের তৃতীয় ঢেউ যে কোনও সময় আছড়ে পড়তে পারে। চিকিৎসকদের একাংশ তো বলছেন, এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। তাই হাসপাতাল পরিকাঠামোয় বিশেষ নজর দেওয়া শুরু। বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে প্রথম ঢেউয়ের মতোই শয্যা তৈরি রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য ভবনের তরফে। একইসঙ্গে বলা হয়েছে, প্রতিদিন কত নমুনা পজিটিভ হচ্ছে তাও জানাতে হবে স্বাস্থ্যভবনকে।
সবিস্তারে পড়ুন: প্রথম ঢেউয়ের মতোই বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে শয্যা তৈরি রাখার নির্দেশ স্বাস্থ্য সচিবের
আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজে আরও ৬ পজিটিভ। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১৯।
বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্মসচিব লভ আগরওয়াল বলেন, “যারা আগামী ১০ জানুয়ারি থেকে করোনার প্রিকশন ডোজ় নিতে পারবেন, তাদের টিকাকরণের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্যই কেন্দ্রের তরফে রেজিস্ট্রার করা নম্বরে মেসেজ পাঠানো হবে।”
চলতি বছরের জানুারি মাসেই দেশে শুরু হয়েছিল প্রাপ্তবয়স্কদের গণটিকাকরণ কর্মসূচি। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনগণের ৯০ শতাংশই করোনা টিকা পেয়ে গিয়েছেন। দেশের ৬৩.৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্করা করোনা টিকার দুটি ডোজ়ই পেয়েছেন।
গত ২৫ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম খোঁজ মিলেছিল ওমিক্রন সংক্রমণের। এক মাসের মধ্যেই বিশ্বের শতাধিক দেশে পৌঁছে গিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংক্রমণের শীর্ষে ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপরে ধীরে ধীরে সংক্রমণ নিম্নমুখীই হবে।
আজ বছরের শেষ দিন। উৎসবের মেজাজ। তবে রক্ষে নেই। আতঙ্ক ধরাচ্ছে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট। বিশ্বের পাশাপাশি সারা দেশে দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়েছে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা।গোটা দেশের সার্বিক করোনাগ্রাফে সামান্য পরির্বতন লক্ষ্য করা গিয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ হাজার ৭৬৪ জন। গতকাল সেই সংখ্যাটা ছিল ১৩ হাজার ১৫৪ ৬ হাজার ৩৫৮ জন। একদিনে করোনার বলি হয়েছেন ২২০ জন।
অন্যদিকে, একলাফে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা এক ধাক্কায় বেড়ে দাঁড়াল ১ হাজার ২৭০। গতকাল সংখ্যাটা ছিল ৯৬১। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে ৩০৯ জন ওমিক্রন আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। দেশের ২৩টি রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার অতি সংক্রামক এই ভ্যারিয়েন্ট।
বিস্তারিত পড়ুন: Corona Virus: উৎসবের আমেজে কাঁটা ওমিক্রন! দৈনিক সংক্রমণ লাফিয়ে ১৬ হাজার পেরলো
কেন্দ্র শাসিত রাজ্য পুদুচেরীতেও জারি হল নৈশ কার্ফু। আজ থেকে ৩১ জানুয়ারি অবধি রাত ১১টা থেকে ভোর ৫টা অবধি নৈশ কার্ফু জারি থাকবে বলে জানা গিয়েছে।
দু’দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বলেছিলেন, সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গিয়েছে। সেই আশঙ্কাকেই আরও বাড়িয়ে এদিন বিহারের স্বাস্থ্য দফতরের তরফে জানানো হল, রাজ্যে এক ওমিক্রন আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তি সম্প্রতিই দিল্লি থেকে ফিরেছিলেন।
পশ্চিম বর্ধমান: রাজ্যে করোনা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। তবে পরিস্থিতি পর্যালোচনা না করে এখনই সব কিছু বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষপাতী নন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখনও বর্ষবরণের উৎসবে রাশ টানেনি রাজ্য সরকার। সংক্রমণের ক্রমবৃদ্ধিতে রাজ্যসরকারকে নির্দ্বিধায় কাঠগড়ায় তুলছে বিরোধী শিবিরগুলি। এ বার সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করলেন বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পাল (Agnimitra Paul)।
বিস্তারিত পড়ুন: Agnimitra Paul on COVID19: ‘মুখ্যমন্ত্রী বর্ষবরণে ব্যস্ত, নাইট কার্ফু জারি করতে পারলেন না!’
উর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণের মাঝেই ভোটমুখী রাজ্যগুলিতে যে হারে নির্বাচনী প্রচার, মিছিল চলছে, তা নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য মন্ত্রক কোনও পদক্ষেপ করবে কিনা, সে প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে কমিশনের তরফে জানানো হয়, নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত জাতীয় নির্বাচন কমিশনই নিচ্ছে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যমন্ত্রক আলাদাভাবে কোনও পদক্ষেপ করবে না।
নীতি আয়োগের সদস্য ডঃ ভিকে পাল বলেন, “গোষ্ঠী সংক্রমণ রুখতে কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, তা নিয়ে আমরা বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছি। তবে রাজনৈতিক প্রচার জারি রাখা উচিত কিনা, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশনই। আমরা নির্দেশিকা জারি করেছি এবং সকলকে তা অনুসরণ করার অনুরোধ জারি করা হয়েছে। বাকি সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন।”
বিদেশ থেকে আগত বা করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদেরই বর্তমানে একান্তবাসে রাখা হচ্ছে। তবে অনেকেরই দাবি ছিল, যদি কোনও ব্যক্তি উপসর্গহীন হয়ে যান, তবে একান্তবাসের মেয়াদ কমিয়ে দেওয়া উচিত। তবে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়, সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের নির্দেশিকা মেনেই একান্তবাসে থাকার সময়সীমা ধার্য করা হয়েছে। উপসর্গহীন হয়ে গেলেও, ওই নির্দিষ্ট সময় অবধিই একান্তবাসে থাকতে হবে। মৃদু বা মাঝারি উপসর্গযুক্ত করোনা রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রেও একই নিয়ম জারি থাকবে।
বিগত ৭ মাস বাদে এই প্রথম দিল্লিতে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হাজারের গণ্ডি পার করল। গতকাল ১৩১৩ জন আক্রান্তের খোঁজ মেলায় রাজ্যে সংক্রমণের হার বেডে দাঁড়িয়েছে ১.৭৩ শতাংশে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, একদিনেই দিল্লিতে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর আগে গত ২৬ মে দিল্লিতে ১৪৯১ জন করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিলেছিল। সেই সময় দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ১৩০ হলেও, গতকাল নতুন করে কোনও করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হয়নি।
বিগত কয়েকদিন ধরেই দেশের মধ্য়ে ওমিক্রন আক্রান্তের নিরিখে শীর্ষে ছিল দিল্লি। এবার দিল্লিকে টপকে শীর্ষে পৌছে গেল মহারাষ্ট্র। সেখানে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫০-এ। এরমধ্যে ১২৫ জন এখনও অবধি সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
গতকালই দেশে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৯৬১-তে। ২৪ ঘণ্টাতেই সেই আক্রান্তের সংখ্যা এক ধাক্কায় বেড়ে দাঁড়াল ১২৭০-এ। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে ৩০৯ জন ওমিক্রন আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। দেশের ২৩টি রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার অতি সংক্রামক এই ভ্যারিয়েন্ট।
কেবল করোনা সংক্রমণই নয়, একইসঙ্গে বাড়ছে ওমিক্রনের দাপট। স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, একদিনেই রাজ্যে নতুন করে ১৯৮ জন ওমিক্রন আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। এদের মধ্যে ১৯০ জনই আবার মুম্বইয়ের বাসিন্দা। এই নিয়ে কেবল মুম্বইতেই ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯০-এ।
একাধিক শহর, রাজ্যে ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলেও মুম্বইয়ের ওমিক্রন সংক্রমণ নিয়ে বিশেষ উদ্বেগ বেড়েছে, কারণ নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে ১৪১ জনেরই বিদেশে ভ্রমণের কোনও ইতিহাস নেই। বৃহ্নমুম্বই মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের এই তথ্যেই বেড়েছে উদ্বেগ। শঙ্কা বাড়ছে গোষ্ঠী সংক্রমণেরও।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় মহারাষ্ট্রে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫৩৬৮ জন, যা আগের দিনের তুলনায় ৩৭ শতাংশ বেশী। জেলা ভিত্তিক সংক্রমণের হারে শীর্ষে রয়েছে বাণিজ্যনগরী মুম্বই (Mumbai)। সেখানে একদিনেই ৩৬৭১ জন আক্রান্ত হয়েছেন, যা পরশুদিনের তুলনায় ৪৬ শতাংশ বেশি।