বছর শেষে করোনার নয়া আতঙ্ক বিশ্বজুড়ে। দেশ তথা বিশ্বে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ওমিক্রন সংক্রমণ। দেশে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা ২০০ পার করেছে। বিশ্বেও শতাধিক দেশে ওমিক্রন সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের তরফে সমস্ত রাজ্যগুলিতে বিশেষ সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফেও ওমিক্রন রুখতে বুস্টার ডোজ়ের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। করোনা ও ওমিক্রন সংক্রান্ত যাবতীয় আপডেট দেখে নিন একনজরে-
রাজ্য আরও দুই ওমিক্রনে আক্রান্তের খোঁজ। ১২ ডিসেম্বর নাইজেরিয়া থেকে কলকাতায় ফিরেছিলেন ৬৯ বছর বয়সি এক বৃদ্ধ। রবিবার লন্ডন থেকে ফেরেন আলিপুরের বাসিন্দা ওই যুবক। আজ সেই দুইজনের শরীরেই ওমিক্রনের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। আক্রান্তরা দুইজনেই কলকাতার বাসিন্দা। উল্লেখ্য, কলকাতায় এই প্রথম ওমিক্রনে আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গেল।
আরও পড়ুন : Omicron in Bengal: ওমিক্রনে আক্রান্ত আরও ২, রাজ্যে সংক্রমণ বেড়ে ৪
বাড়ছে ওমিক্রনের আতঙ্ক। রাজধানীতে তড়তড়িয়ে বাড়ছে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ। দিল্লিতে এখনও পর্যন্ত ৫৭ জনের শরীরে ওমিক্রনের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। দেশের সব রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে দিল্লিতেই সংক্রমণ সর্বাধিক। এই পরিস্থিতিতে দিল্লিতে বড়দিন কিংবা বর্ষবরণের উৎসবে কড়াকড়ি করা হচ্ছে। বড়দিন হোক বা বর্ষবরণ, কোনও ক্ষেত্রেই ভিড় বা জমায়েত করা যাবে না। নিষিদ্ধ করা হয়েছে যে কোনও ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।
দেশের মধ্যে সর্বাধিক ওমিক্রন রোগীর খোঁজ দিল্লি ও মহারাষ্ট্রেই পাওয়া গিয়েছে। আগামিদিনে সংক্রমণ কতটা ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে, সে বিষয়েও এখনই কিছু আন্দাজ করা যাচ্ছে না। এদিকে, উদ্বেগের মাঝেই মহারাষ্ট্রের শিক্ষামন্ত্রী বর্ষা গাইকোয়াদ জানালেন, রাজ্যে যদি ওমিক্রন সংক্রমণ লাগামছাড়া ভাবে বৃদ্ধি পায়, তবে স্কুলগুলি বন্ধ করে দিয়ে হবে।
দেশে আরও বাড়ল ওমিক্রন রোগীর সংখ্যা। এ দিন অন্ধ্র প্রদেশের স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়, রাজ্যে আরও এক ওমিক্রন রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। জানা গিয়েছে, আক্রান্ত ওই ব্যক্তি সম্প্রতিই কেনিয়া থেকে ফিরেছিলেন।
গোটা দেশের সার্বিক করোনাগ্রাফে বড়সড় পরির্বতন লক্ষ্য করা গিয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৩১৭ জন। গতকাল সেই সংখ্যাটা ছিল ৫ হাজার ৩২৬ জন। একদিনে করোনার বলি হয়েছেন ৩১৮ জন।এদিকে, দৈনিক সক্রিয় রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯০৭ জন। মোট ৭৮ হাজার ১৯০ জন সক্রিয় রোগী রয়েছেন। করোনাকে হারিয়ে দেশে একদিনে ৬ হাজার ৯০৬ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। মোট সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যা ৩ কোটি ৪২ লাখ ১ হাজার ৯৬৬ জন করোনামুক্ত হয়েছেন।
বিস্তারিত পড়ুন: Corona Virus: ওমিক্রন আতঙ্কের মধ্যেই দেশে একদিনে বাড়ল আক্রান্তের সংখ্যা, করোনার বলি ৩১৮ জন
রাজধানী দিল্লিতে ক্রমশ বাড়ছে ওমিক্রন আতঙ্ক। আজ নতুন করে তিনজন ওমিক্রন আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। এই নিয়ে দিল্লিতে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৫৭-এ। দেশে মোট ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা বর্তমানে ২১৩।
চিনের গুয়ানশিং প্রদেশের ডংশিং শহরে একজন করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিলতেই গোটা প্রদেশের সমস্ত বাসিন্দাদের বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রায় দুই লক্ষ জনসংখ্যার এই শহরের সমস্ত বাসিন্দাদেরই বুধবার থেকে গৃহবন্দি থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং বিনা প্রয়োজনে বাড়ি থেকে বেরনোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
আইআইটির অধ্যাপকদের মতে, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতের মধ্যে যেহেতু ভৌগলিক ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় মিল রয়েছে, সেই কারণে ভারতে দক্ষিণ আফ্রিকার সংক্রমণের প্রতিফলনই দেখা যেতে পারে। সুতরাং সংক্রমণ ছড়ানো নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হলেও, সংক্রমণের এই নতুন ঢেউ যে দীর্ঘস্থায়ী হবে না, তা আন্দাজ করাই যায়।
জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান দফতর থেকে যাদের সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি, তাদের বুস্টার ডোজ় দেওয়ার পরামর্শ দিলেও, ক্লুগ বলেন, “বুস্টার ডোজ়ই ওমিক্রনের বিরুদ্ধে লড়াই করার এরমাত্র শক্তিশালী হাতিয়ার। সুতরাং এখন সকলের বুস্টার ডোজ়ের উপরই জোর দিতে হবে।” যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য় সংস্থার মুখপাত্র এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু জানাননি।
মহামারির সময়কাল গণনার জন্য তৈরি সূত্র মডেল (Sutra Model) অনুসারেই এই পূর্বাভাস দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই মডেলের আবিস্কারকর্তা মণীন্দ্র আগরওয়াল ও এম বিদ্যাসাগর জানান, আগামী বছরই ফেব্রুয়ারি মাসে করোনার নতুন একটি ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে। তবে এটি ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করতে পারবে না, সংক্রমণের হারও সামান্যই হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপীয় অঞ্চলে অন্তর্গত ৫৩টি দেশের মধ্যে ৩৮টি দেশে ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে ওমিক্রন সংক্রমণ। ডেনমার্ক, পর্তুগাল, ব্রিটেন সহ একাধিক জায়গায় ওমিক্রনই ডমিন্যান্ট ভ্যারিয়েন্টের আকার ধারণ করেছে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপীয় প্রধান হান্স ক্লুগ (Hans Kluge) বলেন, “সংক্রমণের আরেকটা ঝড় আসছে, তা আমরা দেখতেই পাচ্ছি। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত বাকি দেশগুলিতেও ডমিন্যান্ট ভ্যারিয়েন্টের আকার ধারণ করবে ওমিক্রন। ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছে ওই নতুন সংক্রমণ।”