নয়া দিল্লি: দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী তিনি। দৃঢ় কণ্ঠ, কঠোর একরোখা মনোভাবই তাঁর পরিচয়। কিন্তু একসময়ে তাঁকে বন্দি থাকতে হয়েছে জেলে। দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যখন জরুরি অবস্থা বা ইমার্জেন্সি জারি করেছিলেন, তখন গ্রেফতার হয়েছিলেন রাজনাথ সিং। অন্ধকারময় সেই দিনগুলি কেমন ছিল, তা নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন তিনি। ‘একনায়কতন্ত্র’ ও ‘স্বৈরাচারী শাসন’ নিয়ে আক্রমণ করলেন কংগ্রেসকে।
সংবাদসংস্থা এএনআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং জানান, ইন্দিরা গান্ধীর শাসনকালে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল। সেই সময়ে ইন্দিরা গান্ধীর সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁকে। সময়টা ছিল ১৯৭৫ সাল, জুন মাস। মির্জাপুর-সোনভদ্রের কনভেনার ছিলেন তিনি। মাত্র ২৪ বছর বয়সে তাঁকে জেলে যেতে হয়েছিল।
সাক্ষাৎকারে রাজনাথ সিং বলেন, “জরুরি অবস্থার সময় আমি জেলে ছিলাম। আমরা বিক্ষোভ দেখাতাম, সাধারণ মানু্ষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করার চেষ্টা করতাম যে ইমার্জেন্সি কতটা ভয়ঙ্কর এবং তা স্বৈরাচারী মনোভাবকেই তুলে ধরে।”
তিনি আরও বলেন, “আমার সদ্য বিয়ে হয়েছিল। সারা দিন কাজ করার পর আমি বাড়ি ফিরেছিলাম, আমায় তখন বলল, পুলিশ এসেছিল। আমায় ওয়ারেন্ট দেওয়া হল। মাঝরাতে আমায় গ্রেফতার করল, জেলে নিয়ে গেল। আমায় একা একটা কুঠুরিতে রাখা হয়েছিল।”
রাজনাথ সিং জানান, সেই সময় জেলে কাউকে একটা বই অবধি দেওয়া হত না। সারাদিনে খাবার বলতে ছিল, এক বাটি ডাল ও রুটি। হেসে হেসেই তিনি বলেন, “আমার হয়তো ভাল মেজাজ ছিল, তাই আমায় জেলে দীর্ঘদিন রাখা হয়েছিল। যখন আমায় মির্জাপুর জেল থেকে নৈনি সেন্ট্রাল জেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন আমার মা বলেছিল, যাই-ই হোক না কেন, ক্ষমা চাইবে না। শুনে উপস্থিত পুলিশকর্মীরাও কেঁদে ফেলেছিলেন।”
মায়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে রাজনাথ সিং জানান, ব্রেইন হেমারেজ হয়েছিল তাঁর মায়ের। জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানোয় জেলে থাকতে হয়েছিল। প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, “মা ২৭ দিন ধরে হাসপাতালে ছিল, তারপর মৃত্যু হয়। আমি তারপরও জেল থেকে ছাড়া পাইনি, প্যারোল পাইনি। আমি জেলেই মুণ্ডন করেছিলাম। আমি যেতে না পারায়, আমার ভাই শেষকৃত্য করেছিল…ভাবুন এরপরও ওরা (কংগ্রেস) আমাদের বিরুদ্ধে স্বৈরাচার, একনায়কতন্ত্রের অভিযোগ আনে। নিজেদের দিকে দেখে না।”