কোঝিকোড়: চলতি মাসের শুরুতেই বিপর্যয় নেমে এসেছিল কেরলের ওয়ায়নাড়ে। ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি করেছিল একের পর এক ভূমিধস। তার ক্ষত এখনও শুকোয়নি। ত্রাণ শিবিরে দিন-রাত কাটছে বহু মানুষের। বহু মানুষ তাঁদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন। এখনও অনেকেরই নাম রয়েছে নিখোঁজের তালিকায়। হয়তো আর কোনোদিন তাঁদের খোঁদ পাওয়া যাবে না। এরই মধ্যে আরও এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে হইচই পড়ে গেল ওয়ায়নাড়ে। কেরলের গণ্ডি ছাপিয়ে, এই নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে জাতীয় স্তরে। রবিবার (১৮ অগস্ট), সিপিআইএম-এর যুব সংগঠন, ডিওয়াইএফআই-) কোঠামঙ্গলম মিউনিসিপ্যাল উত্তর মেঘলা কমিটির পক্ষ থেকে একটি পর্ক চ্যালেঞ্জের আয়োজন কর হয়েছিল। পর্ক চ্যালেঞ্জ, অর্থাৎ, শূকরের মাংস খাওয়ার চ্যালেঞ্জ। এরল মাধ্যমে ৫০,০০০ টাকা তুলছে ডিওয়াইএফআই। আর এই অর্থ দান করা হবে ওয়ায়নাড়ের ধসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের। তবে, এই উদ্যোগ ভালভাবে নিতে পারেনি কিছু মুসলিম সংগঠন। তারা এই আয়োজনের বিষয়ে কড়া আপত্তি জানিয়েছে।
ডিওয়াইএফআই-এর ব্লক সেক্রেটারি জিও পিয়াস জানিয়েছেন, রবিবার একদিনে তাঁরা পর্ক চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে মোট ৫১৭ কেজি শূকরের মাংস বিক্রি করেছেন। এর মধ্যে ৩৮২ কেজি মাংসের জন্য আগে থেকেই অর্ডার দেওয়া হয়েছিল। আর ১৩৫ কেজি মাংস বিক্রি হয়েছে মিনিপ্পাডির এক মাংসর কাউন্টার থেকে। পিয়াস জানিয়েছেন, ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ২৫টি ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে ডিওয়াইএফআই। সেই তহবিলেই পর্ক চ্যালেঞ্জ থেকে ওঠা অর্থ দেওয়া হবে। প্রসঙ্গত, এর আগে ১০ অগস্ট কাসারগোড়ের রাজাপুরমেও একইভাবে পর্ক চ্যালেঞ্জের আয়োজন করেছিল ডিওয়াইএফআই। সেখানেও প্রায় ৩৫০ কেজি মাংস বিক্রি হয়েছিল।
ঘটনাচক্রে, সুন্নি যুবজন সঙ্গমের রাজ্য সম্পাদক, নাজার ফয়েজি কুদাথাই-সহ কয়েকজন মুসলিম ধর্মগুরু, ডিওয়াইএফআই-এর এই শূকরের মাংস খাওয়ার চ্যালেঞ্জ, মোটেই ভালভাবে নেননি। তাঁদের মতে, এই আয়োজনের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করার চেষ্টা করছে। এটা মুসলমানদের অপমান করার সমান বলে অভিযোগ তাঁদের। সোশ্যাল মিডিয়ায়, নাজার ফয়েজি কুদাথাই লিখেছেন, “ডিওয়াইএফআই জানে, এই বির্য, থেকে বেঁচে যাওয়া অনেকের জন্য শূকরের মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ। তা সত্ত্বেও, তাদের কোঠামঙ্গলম কমিটি এটা নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছে। যাদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা হচ্ছে, তাদের জন্য নিষিদ্ধ এমন পণ্য ব্যবহার করে তা করাটা ওই মানুষদের অপমান। চ্যালেঞ্জের জন্য তারা অন্য খাদ্যপণ্য ব্যবহার করতে পারত।”
মলপ্পুরমের মুসলিম ধর্মগুরু তথা জামিয়া নূরিয়া আরাবিয়ার শিক্ষক, জিয়াউদিন ফয়েজিও প্রথমে এই চ্যালেঞ্জের বিরোধিতা করেছিলেন। পরে অবশ্য তাঁর বক্তব্য তিনি প্রত্যাহার করে নিয়ে লেখেন, “আমাদের দেশে শূকরের মাংসের চ্যালেঞ্জ আয়োজন করা এবং তার বিরোধিতা করা – দুইয়েরই স্বাধীনতা আছে। তবে, আমি বুঝতে পারি যে, এই নিয়ে বিতর্ক বাড়ালে এই চ্যালেঞ্জটাই আরও প্রচার পাবে। তাই আমি আমার মন্তব্য প্রত্যাহার করে নিয়েছি। এর পিছনে একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।”
তবে, ডিওয়াইএফআই নেতৃত্বের দাবি, কোঠামঙ্গলমে শুধুমাত্র শূকরের মাংস খাওয়ার চ্যালেঞ্জ ছিল না, সেখানে অন্যান্য খাবারেরও চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে, কোঠামঙ্গলম এলাকায় ব্যাপকভাবে শূকরের মাংস খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। তাই আমরা তহবিল সংগ্রহের জন্য রবিবার এই অঞ্চলে মাংস বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তারা জানিয়েছে, শূকরের মাংসর পাশাপাশি, ৭,০০০ লিটার পয়সম, শাকসবজি এবং মাছও বিক্রি করে তারা তহবিল সংগ্রহ করেছে। এমনকি, তাঁদের কর্মীরা পরিবারের ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র সংগ্রহ করে, সেগুলি বিক্রি করেও তহবিল সংগ্রহ করেছে। কেউ কেউ ঘর তৈরির সামগ্রীও দান করেছেন।
ডিওয়াইএফআই-এর কাসারগোড জেলা সভাপতি, শালু ম্যাথিউ বলেছেন, “আমরা এর আগে বিরিয়ানি চ্যালেঞ্জ, ফিশ চ্যালেঞ্জ এবং ভেজিটেবল কিট চ্যালেঞ্জের মতো বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের আয়োজন করেছি। এই নিয়ে বিতর হওয়াটা দুঃখজনক। বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের মানুষ পুনর্বাসন প্রচেষ্টায় অবদান রাখছেন। এখানে সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরির চেষ্টা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। শূকরের মাংস চ্যালেঞ্জ নিয়ে ওই এলাকার মুসলমানরা কেউ আপত্তি করেননি।”
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)