উত্তরকাশী: ১৭ দিনের প্রচেষ্টার পর অবশেষে উদ্ধার করা গিয়েছে ৪১ জন শ্রমিককে। আপাতত তারা রয়েছেন সুড়ঙ্গ থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের অস্থায়ী হাসপাতালে। সেখানেই তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা চলছে। আজ, বুধবার তাদের চিনুক হেলিকপ্টারে এয়ারলিফ্ট করে শ্রমিকদের দেহরাদুনের এইমসে নিয়ে আসা হতে পারে। উদ্ধারকাজ শেষ হতেই এবার নজর উত্তরকাশীর বিপর্যয়ের দিকে। কীভাবে নির্মীয়মাণ সিলকিয়ারা সুড়ঙ্গ ধসে পড়ল, তার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কেন উদ্ধারকাজেই বা এত সময় লাগছে, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সুড়ঙ্গ খুঁড়তে অগার মেশিনও ব্যর্থ হওয়ায়, শেষ ভরসা ছিল নিষিদ্ধ খনন পদ্ধতি র্যাট হোল মাইনিং। মঙ্গলবার এই পদ্ধতিতে উদ্ধার করা হয় ৪১ শ্রমিককে। সুড়ঙ্গ থেকে উদ্ধার করে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় ৩০ কিলোমিটার দূরের অস্থায়ী হাসপাতালে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও তাঁদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। আপাতত উদ্ধার হওয়া ৪১ শ্রমিকই সুস্থ রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
এদিকে, উদ্ধারকাজ শেষ হতেই এবার নজর বিপর্যয়ের কারণের উপরে। উত্তরকাশী থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে সিলকিয়ারা সুড়ঙ্গ কেন্দ্রীয় সরকারের চার ধাম প্রকল্পের। ৮৮৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কপথ উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথ, বদ্রীনাথ, গঙ্গোত্রী ও যমুনেত্রীকে জুড়বে। সিলকিয়ারার এই সুড়ঙ্গ তৈরির দায়িত্ব ছিল হায়দরাবাদের নবযুগ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। গত ১২ নভেম্বর নির্মীয়মাণ এই সুড়ঙ্গের প্রবেশপথ থেকে ২০০ মিটার ভিতরে কাজ করছিলেন ৪১ শ্রমিক। সেই সময়ই সুড়ঙ্গের মাঝখানের কিছুটা অংশ ধসে পড়ে। আটকে পড়েন ৪১ শ্রমিক।
উত্তরাখণ্ডের এই বিপর্যয়ের পরই চারধাম প্রকল্প ও সামগ্রিক নির্মাণকাজ নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। উত্তরাখণ্ড সিসমিক জোন-৪ এ অবস্থিত। ফলে ভূমিকম্পের সম্ভাবনা ও তার জেরে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। পাশাপাশি হিমালয়ের মাটি ঝুরঝুরে হওয়ায় ভূমিধসের সম্ভাবনাও প্রবল।
সাধারণত পাহাড় কেটে এই ধরনের বড় মাপের প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে তার পরিবেশগত প্রভাব কী পড়বে, তার অ্যাসেসমেন্ট বা বিশ্লেষণ করা হয়। কিন্তু সিলকিয়ারা সুড়ঙ্গের ক্ষেত্রে সেই বিশ্লেষণ হয়নি কারণ এই প্রকল্প দুই ভাগে ভাঙা। প্রত্যেকটি পথেরই দূরত্ব ১০০ কিলোমিটারের কম।
২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট বিশেষজ্ঞদের প্যানেলের কাছে বিপর্যয়ের ঝুঁকি কীভাবে কমানো যায়, তা জানতে চেয়েছিল। ওই কমিটি একাধিক সমস্যার কথা তুলে ধরেছিল সেই সময়। মাটির ঝুরঝুরে প্রকৃতি, পাহাড়ে ভাঙা পাথরের টুকরো মিশে থাকা ও বেলেমাটির কারণে ভূমিধস ও হড়পা বানের বিপদ অনেক বেশি রয়েছে বলেই উল্লেখ করা হয়েছিল। তারপরও কীভাবে সুড়ঙ্গের নির্মাণকাজ শুরু হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, ন্যাশনাল হাইওয়েজ অথারিটি অব ইন্ডিয়া দেশের ২৯টি নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গের অডিট করবে। কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গড়করীও জানান, হিমালয়ে এই ধরনের বিপর্যয় এড়ানোর সমাধান খোঁজা হচ্ছে।