নয়া দিল্লি: উত্তাল বাংলাদেশ। পতন হয়েছে সরকারের। প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়েছে শেখ হাসিনাকে। দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন তিনি। তাঁর দেশ ছাড়ার পরও হিংসা থামেনি। গতকালই সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের কী হবে? সংসদে সর্বদলীয় বৈঠকে এই প্রশ্নই ওঠে বারবার। জবাবে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বললেন, “বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখনও এতটা উদ্বেগজনক নয় যে ভারতীয়দের উদ্ধার করে আনতে হবে।”
এ দিন সর্বদলীয় বৈঠকে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানান, বাংলাদেশে ১২-১৩ হাজার ভারতীয় রয়েছেন। তবে পরিস্থিতি এতটাও উদ্বেগজনক নয় যে তাদের এই মুহূর্তেই উদ্ধার করে আনতে হবে। আপাতত বাংলাদেশে থাকা ভারতীয়দের উদ্ধারের ক্ষেত্রে কোনও পদক্ষেপ করছে না ভারত সরকার। তবে যেকোনও আপতকালীন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে ভারতীয়দের উদ্ধারের সুনির্দিষ্ট ব্লুপ্রিন্ট তৈরি রাখছে নয়া দিল্লি।
বিদেশমন্ত্রী আরও জানান, বাংলাদেশে সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলন শুরু হওয়ার পর ৮০০০ ভারতীয় পড়ুয়া বাংলাদেশ থেকে দেশে ফিরে এসেছে। বর্তমানে গোটা পরিস্থিতির দিকেই নজর রাখা হচ্ছে।
সূত্রের খবর, গতকাল বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের বৈঠকের সময় উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনী এবং ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির কয়েকজন শীর্ষকর্তা। সেই বৈঠকেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি, বিশেষত সীমান্তে কোনও অশান্তির আশঙ্কা রয়েছে কি না, বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধানের থেকে খবর নেন সেনা কর্তারা।
এরপরই গতকাল রাতে আপতকালীন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে আটকে থাকা ভারতীয়দের উদ্ধারের ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করা হয়। রাতেই প্রস্তুত করা হয় ভারতীয় বায়ুসেনার দু’টি বিমান। লখনউ বায়ুসেনা ঘাঁটি থেকে অসমের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনার একটি বিমান। এছাড়া হিন্দন এয়ারবেস থেকেও অসমের উদ্দেশে রওনা হয়েছে আরেকটি বায়ুসেনার বিমান। কলকাতা থেকে উদ্ধারকাজের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে ইস্টার্ন কমান্ডকেও।
সূত্রের খবর, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গেও কথা বলেছে বিদেশ মন্ত্রক। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ভারতীয়দের নিরাপত্তার বিষয়েও নয়া দিল্লিকে আশ্বস্ত করেছে তারা। দ্রুত সীমান্ত এবং আকাশসীমা খুলে দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এরপরই বাংলাদেশ থেকে ভারতীয়দের উদ্ধারের পরিকল্পনা আপাতভাবে স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়াদিল্লি। তবে পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে।
জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটির বৈঠকের পাশাপাশি রাইসিনা হিলসের সাউথ ব্লকে সেনাবাহিনী এবং বায়ু সেনার শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিদেশ মন্ত্রকের আধিকারিকরা।
এদিকে, শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পরই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে বিএসএফ। দক্ষিণবঙ্গের সীমান্ত এলাকার একাধিক জায়গা ঘুরে দেখেন বিএসএফ এর ডিজি। বিএসএফের সব ফিল্ড কমান্ডারদের দ্রুত সীমান্তে পজিশন নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে সমস্ত ছুটি।