তিরুপতি: চারদিন হয়ে গিয়েছে, এখনও বৃষ্টি থামেনি অন্ধ্র প্রদেশে (Andhra Pradesh)। একটানা বৃষ্টিতে ইতিমধ্যেই প্লাবিত হয়েছে একাধিক এলাকা, এরইমধ্যে তিরুপতি(Tirupati)-তে জলাধারের (Reservoir) দেওয়ালে ফাটল ধরার খবর মিলল। এর জেরে ভয়াবহ বন্যা (Flood) পরিস্থিতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যেই ভারী বৃষ্টির জেরে একাধিক হাইওয়ে ও সড়ক বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে একাধিক গ্রামের সঙ্গে।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তিরুপতির রামাচন্দ্রপুরমে অবস্থিত রায়ালা চেরাভু জলাধারের প্রাচীরে ফাটল ধরেছে। রাজ্যের অন্যতম পুরনো ও বৃহত্তম জলাধারের ফাটল থেকে যে গতিতে জল বের হচ্ছে, তাতে ফাটল আরও বড় হলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতিমধ্য়েই জলাধারের আশেপাশের সমস্ত গ্রামে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। অত্যবশ্যকীয় সামগ্রী, গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নিয়ে উচু কোনও জায়গায় আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।
প্রশাসনের তরফে জারি করা নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, “যেকোনও মুহূর্তে বাধ ভেঙে পড়তে পারে। সাধারণ মানুষদের অতি সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও গুরুত্বপূর্ণ নথি নিয়ে তাদের অন্যত্র কোথায় স্থানান্তরিত হতে অনুরোধ করা হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব গ্রাম ছেড়ে চলে যান। নিজেদের আত্মীয় পরিজনদেরও সতর্ক করুন।”
এদিকে, চিত্তোর জেলাতেও তিরুমালা পাহাড় থেকে বিপুল পরিমাণে বৃষ্টির জল নামতে শুরু করেছে। এরজেরে স্বর্ণমুখী নদী প্লাবিত হয়েছে। যতগুলি জলাধার ছিল, সবকটিই বৃষ্টির জলে পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে। সেগুলি থেকেও জল বের হতে শুরু করেছে। এর জেরে আশেপাশের এলাকা প্লাবিত হয়ে গিয়েছে। গতকাল সকালেই বন্যা দুর্গত এলাকাগুলি আকাশপথে পরিদর্শন করে দেখেন অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ওয়াইএস জগন মোহন রেড্ডি।
বন্য়ায় সবথেকে বিপর্যস্ত হয়েছে রায়ালাসীমা অঞ্চল। সেখানে এখনও অবধি ২৪ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে, নিখোঁজ শতাধিক। রাজ্যের একাধিক জায়গায় বন্যার জলে বহু মানুষের আটকে পড়ার খবর মিলছে। তিনটি বাস ভেসে গিয়েছে। বাস থেকে ১২জনের দেহ উদ্ধার করা হলেও কমপক্ষে আরও ৩০ জন নিখোঁজ বলেই মনে করা হচ্ছে। কাডাপা জেলায় বন্যার কারণে আটজনের মৃত্যু হয়েছে।
উদ্ধারকার্যে হাত লাগানোর জন্য রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের পাশাপাশি নেমেছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরও। বায়ুসেনাকেও আকাশপথে উদ্ধারকার্য চালাতে সাহায্য করছে। গতকালই অনন্তপুর থেকে একটি জেসিবি মেশিনের উপর আশ্রয় নেওয়া ১০ জনকে হেলিকপ্টারের সাহায্যে উদ্ধার করা হয়। কাডাপা জেলাতেও বাসের উপর উঠে বহু যাত্রী বাঁচার চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ অবধি বন্যার জলে বাসগুলি ভেসে যাওয়ায়, তাদের উদ্ধার করা যায়নি বলেই জানা গিয়েছে।
তিরুমালা মন্দির(Tirumala Temple)-এও একশোরও বেশি পুণ্য়ার্থী আটকে পড়েছেন বন্যার কারণে। তিরুমালা পাহাড়ের উপর অবস্থিত তিরুমালা মন্দিরের সঙ্গে সংযোগকারী চারটি প্রধান রাস্তাই সম্পূর্ণ জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গিয়েছে ঘাট রোড ও তিরুমালা পাহাড় লাগোয়া ছোট রাস্তাগুলিও। তিরুমালার জাপালি আঞ্জনেয়া স্বামীর মন্দিরেও জল ঢুকে যাওয়ার খবর মিলেছে। ঈশ্বরের মূর্তিও জলের তলায় চলে গিয়েছে। আটকে পড়ায় পুণ্যার্থীদের জন্য তিরুমালা তিরুপতি দেবাস্থানম কমিটির তরফে বিনামূল্যে খাবার ও থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীও আটকে পড়া পুণ্যার্থীদের দেখভালের নির্দেশ দিয়েছেন।