নয়া দিল্লি: রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। দেশের উন্নয়নের পথে সবথেকে বড় কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই সমস্যা। দেশজুড়ে লক্ষাধিক দুর্নীতির মামলার তদন্ত চলছে। একাধিক নেতা-মন্ত্রীরা গ্রেফতারও হয়েছেন। সেই তালিকায় যোগ হল আরও একটি নাম। কাকভোরে গ্রেফতার হলেন অন্ধ্র প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্য়মন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু (Chandrababu Naidu)। আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে শনিবার ভোর ৬টায় তাঁকে গ্রেফতার করে সিআইডি (CID)। বর্তমানে তাঁকে স্বাস্থ্য় পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখান থেকে তাঁকে বিজয়ওয়াড়ায় নিয়ে যাওয়া হবে। টিডিপি প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্য স্কিল ডেভেলপমেন্টে ৩১৭ কোটির দুর্নীতি হয়েছে, যার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন চন্দ্রবাবু নাইডু। তবে চন্দ্রবাবু নাইডুই প্রথম নন, এর আগে দেশের একাধিক মুখ্য়মন্ত্রী গ্রেফতার হয়েছেন। অধিকাংশের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগই রয়েছে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক সেই মুখ্যমন্ত্রীদের তালিকা এবং দুর্নীতি।
তামিলনাড়ুর প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্য়মন্ত্রী তথা এআইএডিএমকে সুপ্রিমো জে জয়ললিতা গ্রেফতার হয়েছিলেন দুর্নীতির মামলায়। হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তির অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করেছিলেন জয়ললিতা, এমনটাই অভিযোগ ছিল। ২০১৪ সালে বেঙ্গালুরুর বিশেষ আদালত জয়ললিতা, তাঁর ঘনিষ্ঠ সঙ্গী শশীকলা সহ মোট চারজনকে দোষী সাব্যস্ত করে। জয়ললিতার চার বছরের জেল হয়। পাশাপাশি ১০০ কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়। তবে ২১ দিন জেলে থাকার পরই জামিন পেয়ে যান জয়ললিতা। তবে ২০১৪ সালেই প্রথম নয়, তার আগে ১৯৯৬ সালেও ৬৬.৬৫ কোটি টাকার বেআইনি সম্পত্তির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন জয়ললিতা। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সালে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন এই সমস্ত দুর্নীতি হয়েছিল।
ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মধু কোদাও দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন। ২০০৯ সালে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁর পুলিশে ৪ হাজার কোটির দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগ ছিল। ২০০৬ থেকে ২০০৮ সালে ঝাড়খণ্ডের মুখ্য়মন্ত্রী থাকাকালীন খনি খনন ঘিরে ব্য়াপক দুর্নীতি হয়। আর্থিক তছরুপ প্রতিরোধ আইন, ২০০২ -র অধীনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়। তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
শুধু মধু কোদাই নন, ঝাড়খণ্ডের আরেক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবু সোরেনও গ্রেফতার হয়েছিলেন। তবে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি নয়, অপহরণ ও খুনের অভিযোগ ছিল। শিবু সোরেনের ব্যক্তিগত সচিব শশিনাথ ঝাঁ-কে অপহরণ ও খুনের মামলায় নাম জড়িয়েছিল তাঁর। ১২ বছর পুরনো ওই মামলায় তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে জেলা আদালত। পরে দিল্লি হাইকোর্টে মামলা গড়ালে, আদালত সেই রায় খারিজ করে দেয়।
নব্বইয়ের দশকের হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী ওম প্রকাশ চৌটালাও গ্রেফতার হয়েছিলেন দুর্নীতির মামলায়। মুখ্য়মন্ত্রী থাকাকালীন বেআইনিভাবে স্কুল শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতি হয়েছিল। কয়েকশো কোটি টাকার ওই দুর্নীতিতে চার বছরের সাজা ও ৫০ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয় ৮৭ বছর বয়সী প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে।
বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদবের বিরুদ্ধে বহু দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৭ সালের মধ্য়ে ৯৫০ কোটি টাকার পশুখাদ্য দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার করা হয় লালুকে। তাঁর বিরুদ্ধে ডোরান্ডা ট্রেজারি থেকে বেআইনিভাবে ১৩৯.৩৫ কোটি টাকা, চাইবাসা ট্রেজারি থেকে ৩৭.৭ কোটি টাকা, দেওঘর ট্রেজারি থেকে ৮৯.২৭ কোটি টাকা ও দুমকা ট্রেজারি থেকে ৩.৭৬ কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ২০১৭ সালে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত বিহারের প্রাক্তন মুখ্য়মন্ত্রীকে দোষী সাব্য়স্ত করা হয়। পরে অবশ্য় তিনি একাধিক মামলাতেই জামিন পেয়ে যান। সম্প্রতিই লালুর জামিনকে ফের চ্য়ালেঞ্জ করেছে সিবিআই।
তামিলনাড়ুর পাঁচবারের মুখ্যমন্ত্রী এম করুণানিধির বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। চেন্নাইয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগে করুণানিধিকে গ্রেফতার করা হয়। তবে তাঁকে হেফাজতে নেওয়া হয়নি।
কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্য়মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা বিএস ইয়েদুরাপ্পাকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল দুর্নীতির মামলায়। খনি খনন ও বেঙ্গালুরুর বিভিন্ন জায়গায় পরিবারের সদস্যদের বেআইনিভাবে জমি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে ২০১১ সালে গ্রেফতার করা হয় ইয়েদুরাপ্পাকে। সপ্তাহ খানেক জেলে থাকার পর তিনি জামিন পান।
ইন্দিরা গান্ধী যখন দেশে জরুরি অবস্থার ঘোষণা করেছিলেন, সেই সময় সরকারের বিরোধিতার অভিযোগে উত্তর প্রদেশের তৎকালীন মুখ্য়মন্ত্রী চরণ সিং গ্রেফতার হয়েছিলেন।
দিল্লির বর্তমান মুখ্য়মন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালও জেলে গিয়েছিলেন। তবে দুর্নীতি নয়, মানহানির মামলায়। ২০১৪ সালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গড়করিকে ‘দুর্নীতিগ্রস্থ’ বলার অভিযোগে কেজরীবালের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক মানহানির মামলা দায়ের হয়েছিল। কিন্তু জামিন নিতে চাননি কেজরীবাল। ফলে জেলে যেতে হয় তাঁকে। তিহার জেলে নিয়ে যাওয়া হলেও, পরে তিনি ছাড়া পেয়ে যান।