নয়া দিল্লি: তিন মাসের টানা পদযাত্রা। দেশবাসীর নজরে ফের জায়গা করে নিল কংগ্রেস (Congress)। দেশের দক্ষিণ থেকে উত্তরে পায়ে হেঁটেই সফর, অবশেষে শেষ হতে চলেছে কংগ্রেসের ভারত জোড়ো যাত্রা (Bharat Jodo Yatra)। দেশজুড়ে জনসংযোগের লক্ষ্যেই এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল। গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ ভারতের কন্যাকুমারী (Kanyakumari) থেকে শুরু হয়েছিল ভারত জোড়ো যাত্রা। এই পদযাত্রার নেতৃত্বে ছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi)। ১২টি রাজ্য, ২ টি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের উপর দিয়ে মোট ৩৯৭০ কিলোমিটার অতিক্রম করে ১৪৫ দিন পার করে অবশেষে আগামিকাল, ৩০ জানুয়ারি কাশ্মীরে (Kashmir) শেষ হতে চলেছে ভারত জোড়ো যাত্রা। বিজেপির সঙ্গে বিরোধ, বিরোধীদের একজোট করা, দলের অন্দরেই দ্বন্দ্ব, একাধিক কারণে প্রচারের লাইমলাইটে ছিল ভারত জোড়ো যাত্রা। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ভারত জোড়ো যাত্রার সেই গতিপথ-
প্রবল ঠান্ডাতেও হাফ হাতা টি-শার্ট থেকে শুরু করে মুখ ভর্তি দাড়ি, ভারত জোড়ো যাত্রার সম্পূর্ণ সময় জুড়েই প্রচারের আলোয় ছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। সেপ্টেম্বরে ভারত জোড়ো যাত্রা শুরু হলেও, তা উত্তর ভারতে প্রবেশ করতে করতে শীতকাল শুরু হয়ে যায়। তবে রাহুল গান্ধীর লুকে কোনও পরিবর্তন আসেনি। তাঁকে ওই একটি সাদা টি-শার্টেই দেখা যায়। এই নিয়ে বহু প্রশ্নের মুখেও পড়েছিলেন তিনি। দিল্লি, হরিয়ানা, পঞ্জাবের হাড় কাঁপানো ঠান্ডা, যেখানে তাপমাত্রা ২-৩ ডিগ্রিতে নেমে এসেছিল, সেখানেও বিনা সোয়েটার বা জ্যাকেটে কীভাবে এতটা পথ হেঁটে চলেছেন রাহুল গান্ধী।
এদিকে, তার এই টি-শার্ট নিয়েও বিতর্ক কম কিছু হয়নি। বিজেপির তরফে দাবি করা হয়, রাহুল গান্ধী যে টি-শার্টটি পড়ে ভারত জোড়ো যাত্রায় হাঁটছেন, সেটি বারবেরি ব্রান্ডের। একটি টি-শার্টের দামই ৪২ হাজার টাকা। যদিও কংগ্রেসের তরফে এই বিতর্ককে বিজেপির অপপ্রচার বলেই উড়িয়ে দেয়। প্রধানমন্ত্রী মোদীর ১০ লাখের স্যুট ও দেড় লাখের চশমা নিয়েও পাল্টা আক্রমণ করে তারা।
যাত্রা এগোতেই বিতর্কও বাড়ে। রাহুল গান্ধীর গাল ভর্তি সাদা চাপদাড়ি নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। তিনি বলেন, রাহুল গান্ধীকে ইরাকি সন্ত্রাসবাদী নেতা সাদ্দাম হুসেনের মতো দেখতে লাগছে। এই মন্তব্য ঘিরেই বিস্তর জলঘোলা হয়, তুমুল বিতর্ক শুরু হয়।
মধ্য প্রদেশে ভারত জোড়ো যাত্রা প্রবেশ করতেই পরবর্তী গন্তব্য রাজস্থানে কংগ্রেসের অন্তর্দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে যায়। মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী সচিন পাইলটকে প্রকাশ্যে একটি সাক্ষাৎকারে ‘গদ্দার’ বলে অ্যাখ্যা দেন। যদিও পরে কয়েকদিনের মধ্যেই কংগ্রেস নেতা কেসি বেণুুগোপালের মধ্য়স্থতায় সেই বিতর্ক থামে।
ভারত জোড়ো যাত্রা রাজস্থানে প্রবেশ করতেই দেশে শুরু হয় করোনা আতঙ্ক। চিন সহ একাধিক দেশে করোনার বাড়বাড়ন্তের জন্য ভারতেও ফের একবার করোনা নিয়ে সতর্কতা জারি করা হয়। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্য রাহুল গান্ধী ও অশোক গেহলটকে চিঠি লিখে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক করেন এবং করোনাবিধি অনুসরণ না করা হলে ভারত জোড়ো যাত্রা বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন। যদিও কংগ্রেসের তরফে দাবি করা হয়, ভারত জোড়ো যাত্রায় সাধারণ মানুষের সমর্থন দেখেই ভয় পেয়েছে শাসক দল বিজেপি।
ভারত জোড়ো যাত্রার মাঝে একাধিকবার কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। দিল্লি ও পরে সম্প্রতি কাশ্মীরে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় রাহুল গান্ধীর, এমনটাই দাবি করা হয় কংগ্রেসের তরফে। যদিও কাশ্মীর পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, রাহুলের নিরাপত্তায় কোনও গাফিলতি ছিল না।
এছাড়াও সাভারকরের পোস্টার থেকে আরবিআইয়ের প্রাক্তন প্রধান রঘুরাম রাজনের ভারত জোড়ো যাত্রায় যোগ দেওয়া, একাধিক বিষয় নিয়ে বিতর্ক হয়।