হায়দরাবাদ: দক্ষিণে গেরুয়া ঝড়! যে দলটির ঝুলিতে মাত্র চারটি আসন ছিল, এবার একধাক্কায় বাড়িয়ে নিল ৪৮টি আসন। এই ফল নিজামের শহরে যে ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ, একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। অন্যদিকে দিনের শেষে কার্যত ম্লান চন্দ্রশেখর রাওয়ের তেলাঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি। যদিও ৫৫টি আসন পেয়ে প্রথম স্থান পেয়েছে টিআরএস (TRS), গত নির্বাচনের তুলনায় ৪৪টি আসন হাতছাড়া হয়েছে। এটিকে নৈতিক জয় হিসাবেই দেখছে বিজেপি (BJP)। তবে মিম আছে মিমেই, গতবারের মতোই এবারও ৪৪টি আসন পেয়েছে তারা।
গণনা শেষে নির্বাচনে (GHMC Election 2020) জয়ী টিআরএস (TRS), তাদের ভাগ্যে জুটেছে ৫৫টি আসন। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিজেপি (BJP), ৪৮টি আসনে জয়লাভ করেছে তাঁরা। আসাউদ্দিন ওয়াইসির এআইএমআইএম (AIMIM) বা সংক্ষেপে মিম বিজেপিকে কড়া টক্কর দিয়ে দিনের শেষে নিজেদের ঝুলিতে ভরেছে ৪৪টি আসন। এই নির্বাচনেও হারের মুখ দেখল কংগ্রেস (Congress), তাঁরা পেয়েছে কেবলমাত্র দুটি আসন। খাতা খুলতে পারেনি টিডিপি (TDP) ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলি।
নিজামের শহরে ম্যাজিক সংখ্যা ছুঁতে না পারলেও খাতায়কলমে জয়ী টিআরএস। জয়ের পরও খুশি হতে পারেননি তাঁরা, তা তেলাঙ্গানার মন্ত্রী কে টি রামারাওয়ের প্রতিক্রিয়াতেই বোঝা গেল। ফল ঘোষণার পর তিনি বলেন,”আমি হায়দরাবাদের মানুষদের ধন্যবাদ জানাই টিআরএসকে নির্বাচিত করার জন্য। নির্বাচনের ফল অবশ্যই আশাজনক নয়, আমাদের ২০-২৫টি আসন কমে গিয়েছে। ১০ থেকে ১২টি জায়গায় ২০০-রও কম ভোটের ব্যবধানে হারতে হয়েছে আমাদের।”
I thank people of Hyderabad who chose TRS as the single largest party to represent them in Council. Result is certainly not what we expected, we’re short of 20-25 seats. We lost about 10-12 divisions with extremely narrow margin: KT Rama Rao, Telangana minister #GHMCElections pic.twitter.com/Hr5K2s0vbC
— ANI (@ANI) December 4, 2020
অন্যদিকে, আসন্ন ২০২৩-র বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করেই লড়াইয়ে নেমেছিল বিজেপি। তাই সাধারণ পৌরসভা নির্বাচনেও অমিত শাহ (Amit Shah), জে পি নাড্ডা (J P Nadda)-র মতো তারকা প্রচারকদের দিয়ে প্রচার চালিয়েছিল বিজেপি। হিন্দুত্ববাদের ক্ষমতা যে কতটা, তা হাড়ে হাড়ে টের পেল শাসক দল। আসাউদ্দিন ওয়াইসির ‘গড়’ হিসাবে পরিচিত হায়দরাবাদ ওল্ড সিটিতে দাঁড়িয়েই উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ (Yogi Adityanath) বলেছিলেন, জিতলে হায়দরাবাদের নাম বদলে করা হবে ‘ভাগ্যনগর’ (Bhagyanagar)। সেই রেশ ধরেই সকালে নির্বাচনের গণনা শুরু হতেই রাজ্য বিজেপি সম্পাদক বি এল সন্তোষ (B L Santosh) টুইট করে লেখেন,”ওয়েল ডান ভাগ্যনগর। দারুণভাবে এগোচ্ছে তেলাঙ্গানার বিজেপি দল। দাগ কাটতে পেরেছো তোমরা”।
আরও পড়ুন: ৫ ডিসেম্বর মধ্যরাতের মধ্যেই স্বাস্থ্যকর্মীদের তথ্য জমা করার নির্দেশ দিল দিল্লি সরকার
২০১৬ সালের নির্বাচনে ১৫০টি আসনের মধ্যে ৯৯টি আসন পেয়েছিল টিআরএস। এআইএমআইএম পেয়েছিল ৪৪টি আসন। বিজেপির কপালে জুটেছিল কেবলমাত্র ৪টি আসন। এবারের নির্বাচনে বিজেপি ১৪৯ ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছিল। ১৫০ আসনেই প্রার্থী দিয়েছিলটিআরএস। লড়াইয়ে কংগ্রেসও পিছিয়ে ছিল না, তারা মোট ১৪৬টি আসনে নিজেদের প্রার্থী দিয়েছিল। টিডিপি প্রার্থী দিয়েছিল ১০৬টি আসনে। সেদিক থেকে তুলনামূলকভাবে অনেক কম প্রার্থী দিয়েছিল এআইএমআইএম, তারা মাত্র ৫১টি আসনে নিজেদের প্রার্থী দিয়েছিল।
ভোট ভাগের হিসাব দেখলে দেখা যাবে, সম্পূর্ণ ক্ষতিটাই হয়েছে টিআরএস-র। আগেরবারের ৯৯টি আসন থেকে ভোট কমে এবার তাদের কপালে জুটেছে ৫৫টি আসন। তাদের ভোট কেটে পড়েছে বিজেপির ঝুলিতে। গত নির্বাচনের মতো এবারও একটি আসন না খুইয়ে ৪৪টি আসনই নিজেদের দখলে রেখেছে আসাউদ্দিন ওয়াইসির দল, ফলে তাদের খুব একটা ক্ষতি হয়নি।
পুর নির্বাচনের প্রচারে উন্নয়নের থেকেও বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল ধর্মের খেলা। জিতলে রোহিঙ্গা ও পাকিস্তানিদের বিতারণ থেকে শুরু করে শহরের নাম বদল- সবদিকেই কেবল হিন্দুত্ববাদের ছোঁয়াই ছিল। প্রচার চলাকালীন বিজেপির বিরোধিতা করলেও অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের মতে, বিজেপির ‘টিম বি’ ছিল মিম। নিজেদের ভোট বজায় রেখেই টিআরএস-র পকেট থেকে ভোট কাটতে বিজেপিকে সাহায্য করেছে তাঁরা।
আরও পড়ুন: নাগরোটা কাণ্ডে পাক যোগ প্রমাণে এনআইএ-র হাতে তুলে দেওয়া হল তদন্তভার
তেলাঙ্গানার বিজেপি সাংসদ জয়ের আগেই বুথ ফেরত সমীক্ষা দেখে বলেছিলেন,”তেলাঙ্গানায় পরিবর্তন শুরু হয়ে গিয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের পর দুব্বাকা নির্বাচনেও সেই ফল প্রকাশ পেয়েছে। এবার পালা বৃহত্তর হায়দরাবাদ পুরসভা নির্বাচনের। বিকেল অবধি অপেক্ষা করতে হবে। তবে মানুষ পরিবর্তন চান, এই বার্তা টিআরএসের কাছে পৌঁছে গিয়েছে।”
তবে বিগত কয়েক বছর ধরেই নির্বাচনে যে টানটান উত্তেজনা থাকে, তা এবারও বজায় থাকল। সকালে ভোট গণনা শুরু হতেই দৌড়ে একলাফে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল বিজেপি, ৮৭টি আসনে এগিয়েছিল তাঁরা। বেলা বাড়তেই বিজেপিকে অনেকটা পিছনে ফেলে ৭১টি আসনে এগিয়ে যায় তেলাঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি। সেই সময় বিজেপির আচমকা পতন হয়, ৩৩টি আসন নিয়ে তৃতীয় স্থানে নেমে আসে তারা। দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে মিম।
#WATCH Telangana: BJP workers burst crackers in Hyderabad following the #GHMCElectionresults https://t.co/xihpiLV81t pic.twitter.com/JQa2eKO7kY
— ANI (@ANI) December 4, 2020
বিকেল গড়াতেই ফের ভোটচিত্রে বদল হতে শুরু করে। শীর্ষে থাকলেও টিআরএস-র আসন সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৫৮-এ। ফের দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে বিজেপি। রাত গড়াতেই ফল স্পষ্ট হয়ে যায়। সংখ্যা গরিষ্ঠতা না পেলেও নিজেদের জয় ধরে রেখে মুখরক্ষা করল টিআরএস। তবে নির্বাচনের সমস্ত লাইমলাইট কেড়ে নিল বিজেপিই। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে লড়াইটা যে আরও কঠিন হতে চলেছে, তা নিজেদের ‘রকেট উথ্থান’-এই বুঝিয়ে দিল বিজেপি।
আরও পড়ুন: মঙ্গলবার কৃষকদের ডাকে সারা ভারত বনধ