নয়া দিল্লি: বিজেপি বা অন্য কোনও দলে যোগ দেবেন না গুলাম নবি আজ়াদ। সদ্য প্রাক্তন কংগ্রেস নেতার ঘনিষ্ঠ সূত্র মতে, সম্ভবত নিজের নতুন দল গঠন করবেন অর্ধশতাব্দী ধরে কংগ্রেসের সঙ্গে থাকা এই প্রবীণ নেতা। শুক্রবারই (২৬ অগস্ট), কংগ্রেস দলের সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। দলের অন্তর্বর্তীকালীন সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীকে পাঁচ পাতার এক চিঠি দিয়ে কংগ্রেসের পতনের জন্য সরাসরি প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধীকে দায়ী করেছেন তিনি। তার কিছু সময় পরই আজ়াদের নতুন দল তৈরির বিষয়ে জল্পনা তৈরি হল। প্রসঙ্গত, কংগ্রেসের বিদ্রোহী গোষ্ঠী জি-২৩’এর সবথেকে বড় নেতা ছিলেন তিনিই। কাজেই তিনি নতুন দল গড়লে, কংগ্রেসের জি-২৩ অংশ পুরোটাই শতাব্দী প্রাচীন দল ভেঙে বেরিয়ে যেতে পারে।
তবে, আজ়াদের নতুন দল শুধুমাত্র কাশ্মীর ভিত্তিক হবে, না সর্বভারতীয় দল হবে, সেই বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে তাঁকে যখন বিরোধীদের যৌথ প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, সেই সময় গুলাম নবি আজ়াদ বলেছিলেন, উপত্যকার রাজনীতিতে তাঁর থাকা দরকার। কাজেই কাশ্মীর তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যতের অগ্রাধিকারে থাকবে বলেই অনুমান করা হচ্ছে। ইন্ডিয়া টুডে-র এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আজ়াদ বলেছেন, “আমি জম্মু ও কাশ্মীরে যাব। রাজ্যে আমার নিজস্ব দল গঠন করব। জাতীয় সম্ভাবনা পরে যাচাই করব।” চলতি বছরের শেষেই জম্মু ও কাশ্মীরে নির্বাচন হওয়ার কথা। যদিও তাঁর ইস্তফাপত্রে অন্যরকম রাজনৈতিক পদক্ষেপের ইঙ্গিত রয়েছে। আজ়াদ লিখেছেন: “আমি এবং আমার অন্যান্য সহকর্মীরা এখন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের বাইরে সেই আদর্শকে তুলে ধরার জন্য উদ্যমী হব করব যার জন্য আমরা আমাদের পুরো প্রাপ্তবয়স্ক জীবনকে উৎসর্গ করেছি।”
তারপরও, এদিন গুলাম নবি আজ়াদ কংগ্রেস ত্যাগের কথা ঘোষণা করার পর থেকেই, তিনি বিজেপিতে যোগ দেবেন এমন জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে গুলাম নবি আজ়াদের ব্যক্তিগত ভাল সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। সাংসদ হিসেবে রাজ্যসভা থেকে যেদিন বিদায় নিয়েছিলেন আজ়াদ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেঁদে ফেলেছিলেন। ক্রন্দনরত প্রধানমন্ত্রীর সেই ছবি পোস্ট করে অনেকেই দাবি করেন, গুলাম নবি আজ়াদের পরবর্তী গন্তব্য গেরুয়া শিবির। এমনকি, কংগ্রেস থেকে সাসপেন্ড হওয়ার পর অতি সম্প্রতি বিজেপিতে যোগ দেওয়া নেতা কূলদীপ বিষ্ণোই বলে বসেন, আজ়াদ বিজেপিতে যোগ দিতে চাইলে তাঁকে স্বাগত জানানো হবে। দল চাইলে তিনি ব্যক্তিগত সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
তবে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে গুলাম নবি আজ়াদ স্পষ্ট করে দিলেন, তিনি আপাতত ‘আজ়াদ’ই থাকবেন, গোলামি করবেন না। কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীকে লেখা পাঁচ পৃষ্ঠার চিঠির প্রতি ছত্রে ছত্রে রাহুল গান্ধীকে আক্রমণ করেছেন তিনি। রাহুল গান্ধীকে তিনি ‘অপরিপক্ক’ এবং ‘রাজনীতির বিষয়ে অ-গম্ভীর’ বলেছেন। তবে তারপরও তিনি দাবি করেছেন, গান্ধীদের প্রতি ব্যক্তিগত স্তরে তাঁর শ্রদ্ধা রয়েছে। তিনি যা বলেছেন, তা কংগ্রেস দলের স্বার্থে বলেছেন। আজ়াদ বলেছেন, “ব্যক্তিগত স্তরে সমগ্র গান্ধী পরিবারের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে। এখানে আমি ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা বলছি না। আমি কংগ্রেসের পতনের কথা বলছি।” প্রসঙ্গত, ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে কাশ্মীরি এই নেতার সম্পর্ক খুবই ভাল ছিল। পরবর্তীকালে সনিয়া গান্ধীর সঙ্গেও তাঁর যথেষ্ট ঘনিষ্ঠতা ছিল। কিন্তু রাহুল গান্ধীর থেকে কাঙ্খিত মর্যাদা তিনি পাননি।
নিউজ ১৮-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দল ছাড়ার পর আজ়াদ বলেছেন, দলীয় সব পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে গুলাম নবী আজাদ বলেন, “আজ (কংগ্রেসে) ৫০ বছর পূর্ণ করলাম। আর বেশিদিন নিতে পারলাম না। আমি ১৯৭৭ সাল থেকে এই দলের সঙ্গে ছিলাম এবং দলের জন্য কাজ করেছি। আমি নিজের জন্য কিছু চেয়েছি, এটা বলা ভুল। আমি সব পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। আমি শুধু চেয়েছিলাম সম্মান এবং রাহুল গান্ধী আমার পাশে দাঁড়ান। তারা আমাকে সভা-সমাবেশে অপমান করেছে। দলের জন্য শুভ কামনা রইলো। আমাদের পরামর্শ ছিল দলের ভালর জন্যই।”