Teacher Shortage: ইংরেজিকেও মাতৃভাষার মতোই সমগুরুত্ব দিতে উদ্যোগী সরকার, কিন্তু পড়াবে কে?
TV9 Explained: বর্তমানে কর্নাটকের প্রাথমিক স্কুলগুলিতে ৩৫ হাজারেরও বেশি শূন্যপদ রয়েছে। প্রশাসনের তরফেও স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে যে এই পদগুলির নিয়োগ এখনও আটকে রয়েছে। আলাদাভাবে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানোর জন্য কোনও শিক্ষক নিয়োগ করা হয়নি।
বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সকল অভিভাবকই চান যে তাঁর সন্তান যেন ইংরেজিতেই কথা বলেন। মাতৃভাষা নয়, ইংরেজি ভাষাতেই ছেলেমেয়েদের দক্ষ বানাতে আগ্রহী অভিভাবকরা। তাই ইংরেজি মাধ্যমেই সন্তানদের লেখাপড়া করাতেই উদ্যোগী হন তারা। বেসরকারি স্কুলগুলির পাশাপাশি অনেক সরকারি স্কুলেও বর্তমানে মাতৃভাষার সঙ্গেই ইংরেজি ভাষাতেও সম্পূর্ণ পঠনপাঠন শুরু করানো হয়েছে। এমনই এক রাজ্য হল কর্নাটক। সেখানে ২৪০১টি সরকারি স্কুলেই কন্নড়ের পাশাপাশি ইংরেজি ভাষাতেও পঠনপাঠন শুরু করা হয়েছে। তবে দুটি ভাষাতেই পড়ানোর জন্য আলাদাভাবে কোনও শিক্ষক নিয়োগ করা হয়নি। মাতৃভাষায় যারা পড়াতেন, তারাই ইংরেজিতে পড়াচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতেই শিক্ষাবিদরা গোটা শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন।
২০১৯-২০ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামী সরকারি স্কুলে ইংরেজি ভাষায় পঠনপাঠন শুরু করেছিলেন। সরকারি স্কুলে যাতে পড়ুয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, তার জন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ২০১৯ সালে কর্নাটকের ১০০১টি কন্নড় মাধ্যমের স্কুলে ইংরেজিতে পঠনপাঠন শুরু করা হয়। উর্দু ভাষার স্কুলগুলিতেও ইংরেজিতে পড়ানো শুরু হয়। ফলে এক বছরের মধ্যেই ফের সরকারি স্কুলগুলিতে পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়তে থাকে। তবে সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতাও করেন অনেকে। মাতৃভাষাকে গুরুত্ব দিতে সরকারি স্কুলগুলিতে কন্নড় ভাষা বাধ্যতামূলক করার দাবি তোলা হয়।
করোনা সংক্রমণের কারণে বিগত এক-দুই বছরে নতুন করে কোনও স্কুল তৈরি হয়নি। চলতি বছরে সংক্রমণ কমায় ফের একবার অফলাইনে পঠনপাঠন শুরু হয়েছে। সরকারি স্কুলগুলিতে পড়ুয়া ভর্তির সংখ্যাও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এতকিছুর মাঝেও একটি সঙ্কটই প্রকট হয়ে উঠছে। তা হল পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাব।
সরকারি সূত্রে খবর, বর্তমানে কেবল কর্নাটকেই কমপক্ষে ৭ হাজার দো-ভাষী শিক্ষকের প্রয়োজন রয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলিতে আলাদাভাবে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়নি। ১৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগ এখনও আটকে রয়েছে। যে সকল শিক্ষকরা বর্তমানে দুটি ভাষাতেই পড়াচ্ছেন, তাদের মাত্র ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
ইংরেজি ভাষায় পড়ানোর শিক্ষক নেই:
কর্নাটকের প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, বর্তমানে সরকারি স্কুলগুলিতে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানোর জন্য আলাদাভাবে কোনও শিক্ষক নিয়োগ করা হয়নি। কন্নড় ভাষায় যে শিক্ষকরা পড়ান, তাদেরকেই ইংরেজি ভাষাতেও পড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা কন্নড় ভাষাতে দক্ষ হলেও, ইংরেজি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি ভাষা।
শিক্ষকদের দাবি, অঙ্ক বা বিজ্ঞানের মতো কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ ভাষাগুলি যদি ছোট থেকেই মাতৃভাষা ছাড়া অন্য কোনও ভাষায় পড়ানো হয়, তবে পড়ুয়াদের বিষয়টি বুঝতে সমস্যা হতে পারে। হঠাৎ করে কন্নড় থেকে ইংরেজিতে পঠনপাঠন পরিবর্তিত হলে, পড়ুয়ারা ইংরেজি ভাষাও শিখতে পারবে না, তেমনই অন্যান্য বিষয়গুলিও বুঝতে পারবে না। এর যুক্তি হিসাবে আরও বলা হয়েছে, পড়ুয়ারা বাড়িতে কন্নড় ভাষায় কথা বলেন, কিন্তু স্কুলে গিয়ে তাদের ইংরেজিতে কথা বলতে হচ্ছে। শিক্ষকরাও দীর্ঘ সময় ধরে কন্নড় ভাষায় পড়ানোর পর হঠাৎ করে ইংরেজিতে পড়ানো শুরু করায়, তাদেরও সমস্যায় পড়তে হয়েছে।
নিয়োগে জট:
বর্তমানে কর্নাটকের প্রাথমিক স্কুলগুলিতে ৩৫ হাজারেরও বেশি শূন্যপদ রয়েছে। প্রশাসনের তরফেও স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে যে এই পদগুলির নিয়োগ এখনও আটকে রয়েছে। আলাদাভাবে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানোর জন্য কোনও শিক্ষক নিয়োগ করা হয়নি। নতুন করে যে সমস্ত শিক্ষক নিয়োগ করা হবে, তাদের মধ্যে কারা দুটি ভাষাতেই পড়াতে সক্ষম হবেন, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। সরকারি স্কুলগুলিতে রাজ্যের শিক্ষকদের নিয়োগেই অগ্রগণ্যতা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এদিকে, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যদি ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা বা ইংরেজি ভাষায় লেখাপড়া করা শিক্ষকদেরই বেছে নেওয়া হয়, তবে ভিন রাজ্যের শিক্ষকরাই সুযোগ পাবেন।
সমাধান সূত্র কোথায়?
শিক্ষা বিশারদদের মতে, প্রাথমিক স্তর থেকেই ইংরেজি ভাষায় শিক্ষা দেওয়া শুরু হলে শিশুদের ইংরেজিতে দক্ষতা বাড়বে। একইসঙ্গে মাতৃভাষা ছাড়া অন্য ভাষাতেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি বুঝতে পারবে তারা। এতে দুই ভাষাতেই দক্ষতা বাড়বে, যা কেবলমাত্র ইংরেজি মাধ্যমে লেখাপড়া করার তুলনায় অনেক ভাল। ২০২০ সালে কেন্দ্রের তরফে আনা জাতীয় শিক্ষানীতিতেও মাতৃভাষায় পঠনপাঠনের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।
কর্নাটকে দুই ভাষায় পঠনপাঠন চালু হওয়ায় যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, তা সমাধানের জন্য শিক্ষাবিদরা আলাদাভাবে ইংরেজি বিষয় পড়ানোর উপর বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়েছে, যাতে অন্যান্য বিষয়গুলি ইংরেজিতে পড়ানোর ও পড়ার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা না হয়। আঞ্চলিক বা মাতৃভাষায় পঠনপাঠন কোনও পড়ুয়ার উন্নতি বা শিক্ষাগতভাবে বিশেষ সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বাধা হয়ে উঠতে পারে না, এমনটাই বিশেষজ্ঞদের মত।
আরও পড়ুন: TV9 Explained: ন্যাটো বনাম রাশিয়া, সামরিক শক্তি বেশি কার? যুদ্ধ হলে জিতবে কে?