TV9 Explained: ন্যাটো বনাম রাশিয়া, সামরিক শক্তি বেশি কার? যুদ্ধ হলে জিতবে কে?

TV9 Explained: আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, রাশিয়ার এই যুক্তি মোটেও ফেলে দেওয়ার মত নয়, কারণ প্রতিবেশি দেশের ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত হলে রাশিয়ার ঘাড়ে মার্কিন নিশ্বাস অবশ্যম্ভাবী, ন্যাটোর নেতৃত্বে যে আমেরিকা রয়েছে।

TV9 Explained: ন্যাটো বনাম রাশিয়া, সামরিক শক্তি বেশি কার? যুদ্ধ হলে জিতবে কে?
ছবি: গ্রাফিক্স অভিজিৎ বিশ্বাস
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 15, 2022 | 12:27 PM

ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া (Russia-Ukraine War) যখন সেনা মোতায়েন করা শুরু করেছিল, তখন থেকে রুশ অবস্থানের বিরোধিতা করে এসেছিল একটি আন্তর্জাতিক সামরিক সংগঠন, ন্যাটো (NATO)। এই ন্যাটোকে নিয়ে যত বিপত্তি, অন্তত এমনটাই দাবি রাশিয়ার। কারণ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি (Volodymir Zelensky) ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলেন। ইউক্রেনের এই উদ্যোগ মোটেও ভাল চোখে দেখেনি মস্কো। সটান ইউক্রেন সীমান্তে সেনা মোতায়েন করেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (Vladimir Putin)। পুতিন স্পষ্টতই জানিয়েছিলেন প্রতিবেশি দেশ ইউক্রেনের ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্তি রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, রাশিয়ার এই যুক্তি মোটেও ফেলে দেওয়ার মত নয়, কারণ প্রতিবেশি দেশের ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত হলে রাশিয়ার ঘাড়ে মার্কিন নিশ্বাস অবশ্যম্ভাবী, ন্যাটোর নেতৃত্বে যে আমেরিকা রয়েছে। মোট ৩০ টি দেশের ন্যাটোর সদস্যপদ রয়েছে, এবং তারা সকলেই আমেরিকার বন্ধু হিসেবে পরিচিত। এরপর কৃষ্ণসাগর দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে, অতর্কিতে ইউক্রেনে আক্রমণ করেছে রাশিয়া। ইতিমধ্যেই লড়াই ৮ দিন অতিক্রান্ত, ইউক্রেনবাসী রাশিয়ান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এখনও প্রাণপণ লড়াই চালাচ্ছে। এখনও ন্যাটোর মুখেপেক্ষী জ়েলেনস্কি। কিন্তু কেন ন্যাটোকে এত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে?

ন্যাটো কী?

ন্যাটো কথাটির অর্থ নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (North Atlantic Treaty Organization)। ন্যাটো বিভিন্ন দেশের সরকাররে সামরিক জোট। ইউরোপের ২৮ টি দেশে এবং উত্তর আমেরিকার ২ টি দেশে ন্যাটোর সদস্য। ন্যাটো নর্থ আটলান্টিক অ্যালায়েন্স নামেও পরিচিত। মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৯ সালে নিরাপত্তার স্বার্থে ন্যাটো তৈরি করা হয়েছিল। ন্যাটোর চুক্তি অনুসারে এর সদস্য দেশগুলির ওপর যদি কোনও বহিরাগত শক্তি আক্রমণ করে তবে, সকলে মিলে তা প্রতিহত করবে। বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ন্যাটোর সদর দফতর। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ন্যাটোর সদস্য দেশগুলির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাথমিকভাবে ন্যাটোর সদস্য সংখ্যা ১২ হলে বর্তমানে সংখ্যাটা ৩০। ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইটালি, জার্মানি, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, পর্তুগাল, পোল্যান্ড, কানাডা, আমেরিকার মত দেশগুলির ন্যাটোর সদস্য।

ছবি- উইকিপিডিয়া, নীল রঙের দেশগুলি ন্যাটোর সদস্য দেশ।

ন্যাটোর সামরিক শক্তি

ন্যাটোতে ৩০ টি দেশের সদস্যপদ রয়েছে। ন্যাটোতে আমেরিকার অবদান সবথেকে বেশি। ন্যাটোর সদস্য দেশগুলির সব মিলিয়ে ৫০ লক্ষ ৪১ হাজার সেনাবাহিনী রয়েছে। ন্যাটোর মোট যুদ্ধবিমানের সংখ্যা ২০ হাজার ৭০০। ন্যাটোর নৌসেনাও যথেষ্ট শক্তিশালী। ন্যাটোর কাছে মোট ২ হাজার ৪৯ টি রণতরী রয়েছে। ন্যাটোর সাঁজোয়া গাড়ির সংখ্যা ১ লক্ষ ৪৪ হাজার। ন্যাটোর কাছে সব মিলিয়ে মোটা ৬ হাজার ৬৫ টি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে যৌথভাবে ন্যাটোর শক্তি অনেকটাই বেশি।

রাশিয়ার সামরিক শক্তি

রাশিয়া এককভাবে পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী দেশ। ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে রাশিয়ার সামরিক শক্তি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। রাশিয়া বিশ্বে শুধুমাত্র ‘সুপার পাওয়ার’-ই রাশিয়া অত্যাধুনিক অস্ত্র তৈরির পাশাপাশি বিশ্বের অনেক দেশকে সেই অস্ত্র সরবরাহ করে। রাশিয়ার মোট সেনাবাহিনীর সংখ্যা ১০ লক্ষ ৩৫ হাজার। রাশিয়ান যুদ্ধ বিমানের সংখ্যা ৪ হাজার ১৭০। রাশিয়ার কাছে মোট ৬০৫ টি যুদ্ধ জাহাজ রয়েছে। রাশিয়ার সাঁজোয়া গাড়ি সংখ্যা ৬০ হাজার। তবে পারমাণবিক অস্ত্রের নিরিখে রাশিয়া এককভাবে ন্যাটোর ৩০ টি দেশেকে হারিয়ে দিয়েছে। রাশিয়ার কাছে মোট ৬ হাজার ২৫৫ টি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে।

কূটনৈতিক বিশ্লেষণ

রাশিয়ান আক্রমণের মুখে বারবারই ন্যাটোর সাহায্য চেয়েছে ইউক্রেনে। সামরিক কিছু সাহায্য ছাড়া যুদ্ধক্ষেত্রে এখনও ন্যাটোর উপস্থিতি লক্ষণীয় হয়নি। সামরিক শক্তিতে রাশিয়ার থেকে এগিয়ে থাকলেও ন্যাটো যদি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া খুব মুশকিল, কারণ ২০০৮ সালের আর্থিক মন্দার পর ন্যাটোর সদস্য ৩০ টি দেশের মধ্যে ২০ টি দেশের আর্থিক অবস্থা খারাপ। তার ওপরে ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা করোনা মহামারির কারণে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশেগুলি তথা আমেরিকার আর্থিক অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। তাই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া আরও কঠিন। বাইডেন ইতিমধ্যেই ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে ইউক্রেনের যুদ্ধে আমেরিকা অংশগ্রহণ করলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ অনিবার্য। যদি রাশিয়া ইউক্রেনে পরমাণু হামলা করে তবে সেক্ষেত্রেই ন্যাটো সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিতে পারে। সেই যুদ্ধ কে জিতবে, সেই নিয়ে এখনই সিদ্ধান্তে আসা মুশকিল।

আরও পড়ুন Russia-Ukraine Conflict: চলছে অনর্গল বোমা বর্ষণ, খারকিভে ভয়াবহ অবস্থায় ভারতীয় ছাত্ররা