এলাহাবাদ: মসজিদ কমিটির সমস্ত আবেদন প্রত্যাখ্যান করল এলাহাবাদ হাইকোর্ট। জ্ঞানব্যাপী মসজিদ বিতর্ক মামলায়, মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) এক গুরুত্বপূর্ণ রায় দিল হাইকোর্ট। জ্ঞানব্যাপী মসজিদ প্রাঙ্গনে পুজোর অধিকার এবং মসজিদ চত্বরে এএসআই-এর সমীক্ষা চালানর জন্য হিন্দু পক্ষের আবেদনকে চ্যালেঞ্জ করেছিল মসজিদ কমিটি। কিন্তু, এদিন তাদের সব আবেদনই খারিজ করে দিয়েছে এলাহাবাদ হাইকোর্ট। বারাণসীর জ্ঞানব্যাপী মসজিদ বিতর্ক নিয়ে সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড এবং অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটি মোট পাঁচটি আবেদন দায়ের করেছিল। তিনটি করেছিল মসজিদ কমিটি এবং দুটি ছিল উত্তর প্রদেশ সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ডের। ৮ ডিসেম্বরই এই মামলার শুনানি শেষ করেছিল আদালত। তবে, ওই দিন রায় দেননি বিচারপতি।
পাঁচটি আবেদনের মধ্যে একটি ছিল, ১৯৯১ সালে বারাণসী আদালতে দায়ের হওয়া মামলার রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত। ভগবান আদি বিশ্বেশ্বর বিরাজমানের পক্ষে এই মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এক মন্দিরের উপর জ্ঞানব্যাপী মসজিদটি তৈরি করা হয়েছিল বলে দাবি করে, মসজিদ প্রাঙ্গণের নিয়ন্ত্রণ এবং সেখানে পূজার অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। এই মামলাকে চ্যালেঞ্জ করে, অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটি এবং সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড যুক্তি দিয়েছিল, ১৯৯১ সালের উপাসনালয় আইন (বিশেষ বিধান) আইনের আওতায় এই মামলাটি রক্ষণাবেক্ষণযোগ্য নয়। উপাসনালয় আইন অনুসারে, ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কোনও ধর্মীয় স্থানের চরিত্র পরিবর্তন করা যায় না। এই মামলার আবেদনকারীরা পাল্টা যুক্তি দিয়েছিলেন, জ্ঞানব্যাপী বিতর্ক স্বাধীনতার আগে থেকে চলছে। তাই এটি উপাসনালয় আইনের আওতায় পড়ে না।
এদিন, হাইকোর্টের বিচারপতি রোহিতরঞ্জন আগরওয়াল জানিয়েছেন, ১৯৯১ সালের মামলাটি রক্ষণাবেক্ষণযোগ্য। এটি ধর্মীয় উপাসনালয় আইনের অধীনে পড়বে না। তিনি বারাণসী আদালতকে ছয় মাসের মধ্যে এই মামলার শুনানি শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, মসজিদ চত্বরে মুসলিম বৈশিষ্ট বা হিন্দু বৈশিষ্ট থাকতে পারে। এই পর্যায়ে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। মামলাটির সঙ্গে দেশের দুটি প্রধান সম্প্রদায় জড়িত। আমরা নিম্ন আদালতকে ৬ মাসের মধ্যে এই মামলার বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছি।”
এর পাশাপাশি মসজিদ চত্বরে এএসআই সমীক্ষার বিষয়ে ২০২১ সালে বারাণসী জেলা আদালত যে আদেশ দিয়েছিল, তাকেও চ্যালেঞ্জ করেছিল মুসলিম পক্ষ। এই ক্ষেত্রেও তাদের যুক্তি ছিল, ১৯৯১ সালের উপাসনাস্থল আইনের অধীনে মসজিদ চত্বরে খোঁড়াখুঁড়ি করা উচিত নয়। এদিকে হিন্দু পক্ষ বলে, জ্ঞানব্যাপি মসজিদ আসলে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের একটি অংশ। কাজেই সমীক্ষা আবশ্যক।
মুসলিম পক্ষের আপত্তি উড়িয়ে, এদিন হাইকোর্ট এএসআই সমীক্ষাকে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে। আদালত আরও বলেছে, এর আগে মসজিদ চত্বরে এএসআই যে সমীক্ষা চালিয়েছে, তার কাজ যদি কিছু বাকি থাকে, তবে তা আবার করা যেতে পারে। সেই সমীক্ষার রিপোর্ট বারাণসী জেলা আদালতে জমা দেওয়া যাবে। এই রায় দেওয়ার একদিন আগেই বারাণসী জেলা আদালতে এএসআই একটি মুখবন্ধ খামে মসজিদ কমপ্লেক্সে করা বৈজ্ঞানিক সমীক্ষার রিপোর্ট জমা দিয়েছে। ২১ ডিসেম্বর এই রিপোর্ট আবেদনকারীদের সঙ্গে ভাগ করা নেওয়া হবে। এর একটি অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টেও পাঠানো হবে।