চণ্ডীগড়: যেন খুলে গিয়েছে লকগেট। প্রথমে অভিযোগ জানিয়েছিল ১৫ জন ছাত্রী। তারপর সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছিল ৬০, আর এখন তা পৌঁছেছে ১৪২-এ। গত ছয় বছরে অন্তত ১৪২ জন ছাত্রীকে যৌন হেনস্থা করার অভিযোগ উঠল হরিয়ানার জীন্দের এক সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর), জীন্দের ডেপুটি কমিশনার মহম্মদ ইমরান রাজা বলেছেন, “এই ঘটনার তদন্তের জন্য মহকুমা শাসকের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটি ইতিমধ্য়েই ৩৯০ জন ছাত্রীর বিবৃতি নথিভুক্ত করেছে। যে ১৪২ জন ছাত্রী অভিযোগ করেছে, তাদের বিস্তারিত বিবরণ আমরা শিক্ষা বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্তাদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। তাঁরাই এই বিষয়ে পরবর্তি পদক্ষেপ করবেন। এই ১৪২ জন ছাত্রীর মধ্যে, অধিকাংশই অভিযুক্ত প্রধানশিক্ষক তাদের যৌন হেনস্থা করেছে বলে অভিযোগ করেছে। অভিযুক্ত শিক্ষক বর্তমানে কারাগারে আছেন।”
এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা সামনে এসেছিল চলতি বছরের ৩১ অগস্ট। ওই দিন স্কুলটির ১৫ জন ছাত্রী, দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, জাতীয় মহিলা কমিশন এবং রাজ্য মহিলা কমিশনে চিঠি দিয়ে প্রধান শিক্ষকের কুকীর্তির কথা জানিয়েছিল। ১৩ সেপ্টেম্বর সেই চিঠির ভিত্তিতে জীন্দ পুলিশকে এই বিষয়ে পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছিল হরিয়ানা মহিলা কমিশন। কিন্তু, প্রথমদিকে পুলিশ এই ঘটনাকে গুরুত্ব দেয়নি। মহিলা কমিশন এই বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করার পর, ৩০ অক্টোবর এই বিষয়ে একটি এফআইআর দায়ের করেছিল পুলিশ। যেখানে পকসো ধারায় অভিযোগ করা হলে, অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা, সেখানে এফআইআর দায়ের করতে এত সময় কেন নেওয়া হল, সেই প্রশ্ন তোলেন আইনজ্ঞরা। যাইহোক, ৪ নভেম্বর অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৭ নভেম্বর তাঁকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়। সেই থেকে তিনি কারাগারেই আছেন।
প্রধান শিক্ষক গ্রেফতার হওয়ার পর, আরও ছাত্রীরা এই বিষয়ে অভিযোগ করতে এগিয়ে আসে। মহিলা কমিশন সেইসময় জানিয়েছিল, সব মিলিয়ে মোট ৬০ জন ছাত্রী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছে। কিন্তু, একবার ছাত্রীরা এগিয়ে এসে অভিযোগ জানাতে শুরু করার পর, অভিযোগকারী ছাত্রীর সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৪২ জন অভিযোগ জানিয়েছে, আগামী দিনে সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ছাত্রীদের বয়ান উদ্ধৃত করে মহিলা কমিশন জানিয়েছে, বিভন্ন অছিলায় ছাত্রীদের তাঁর অফিসে ডেকে পাঠাত অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক। তারপর, তাদের সঙ্গে অশ্লীল আচরণ করত।
ডেপুটি কমিশনার মহম্মদ ইমরান রাজা জানিয়েছেন, মহকুমা শাসকের নেতৃত্বাধীন কমিটির প্রাথমিক তদন্তে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সত্যি বলে জানা গিয়েছে। অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার হরিশ বশিষ্ঠও এই ঘটনার তদন্ত করছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপ্তি গর্গের নেতৃত্বে এক ছয় সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দলও তদন্ত শুরু করেছে। ২৬ নভেম্বরের মধ্যে তাদের তদন্ত রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন অতিরিক্ত ডিজিপি শ্রীকান্ত যাদব। নির্যাতিত ছাত্রীদের কাউন্সেলিং করারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।